২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মিটফোর্ড হাসপাতালে কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

-

রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে আউটসোর্সিং ও ডেইলি বেসিক হিসেবে কিছু উচ্চশিতি বেকার ছেলেমেয়ে ছাড়া অন্যসব দালাল, মাদক কারবারি ছিনতাইকারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের কাছ থেকে চার, তিন, আড়াই ও এক লাখ টাকা করে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের মূল নায়ক বহু বছর ধরে সাসপেন্ড চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হাসপাতাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, মিটফোর্ড হাসপাতালে জনবল সঙ্কট আছে। ডাক্তার ও নার্স ছাড়াও বিভিন্ন পদে লোকবল দরকার। এ কারণে প্রথম ধাপে দৈনিক ভিত্তিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পরে আউটসোর্সিং হিসেবে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। দুই ধাপে ২৩৫ জন লোক নিয়োগ দেয়া হবে। তবে এসব লোকের বেশির ভাগ চোর, দালাল, মাদক কারবারি ছিনতাইকারী বলে অভিযোগ মিলেছে। এ কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ছাড়াও বহির্বিভাগে বাড়ছে চুরি। নিয়োগ দেয়া এসব লোকের কাছ থেকে এক থেকে চার লাখ টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে কিছু উচ্চশিতি ছেলেমেয়েও রয়েছে। তাদের বলা হয়েছে মাস্টাররোলের কথা। তবে চাকরি নেয়ার পরে তারা জানতে পারেন আউটসোর্সিং হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিয়োগ পাওয়া একাধিক ব্যক্তি এ প্রতিবেদককে জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালে কর্মরত স্বজন ও বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি ওই হাসপাতালে মাস্টাররোলে কিছুসংখ্যক লোক নিয়োগ করা হবে। তাই চাকরিপ্রত্যাশায় লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি। আর ডিউটিতে এসে সুইপার ও পিয়নের কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে।
তারা বলেন, অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। তার মধ্যে যশোরের সজিব দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ঘুষ দেয়। তা ছাড়া সজিব বিএ অনার্স করেছে। এ ছাড়া সঞ্জয় দিয়েছে তিন লাখ, হারুন অর রশিদ দুই লাখ। তিনি বিএস পাস। জাহিদুল আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। সে বর্তমানে ওয়ার্ড মাস্টার বেলালের রুমে কর্মরত। তবে সজিব, সঞ্জয় ও হারুন চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। এমন অনেক লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, যারা এখনো পাননি চাকরি। প্রতিদিন কর্মচারী কাবের সামনে ভিড় করেন চাকরি না পাওয়া ব্যক্তিরা। দেখা মেলে না কর্মচারী নেতা নামের ওই সব অসাধুদের। এ ছাড়াও অনেকে নিয়োগ পেয়েছেন, যাদের মধ্যে ইসমাঈল, শাওন, ফিরোজ, সোহেল, সোহেল (২), রুহুল আমিন, মাসুম, রহমান, আমির, আলমগীর, পারভীন, সালাম, রহমান, পাপ্পু, আদি, জরিনা, রনি, আলামিন, বিউটি, আলমগীর, সাদেক, আদি কর্মকার, হেনা, সোহেল ও জামালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া লেবার ওয়ার্ডে নিলুফা, মোটা ময়না, আসমা, আনু, কহিনুর, পান ওয়ালার স্ত্রী, আনোয়ারা, ঢাকাইয়া বুড়ি, রানির মা, শিলা, জাহানারা ও রওশনের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মরত সাথী, সেলিনা, সাজু, রহিমা, রনি, পারভীন, বড় রহিমা, ফয়সাল ও মানিকের বিরুদ্ধে দালালির অভিযোগ রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ অফিস সহকারী পদে লোক নিয়োগ করবে কর্তৃপ। আর টেন্ডারের মাধ্যমে এ কাজ সম্পন্ন করা হয়। তবে এখানেও পুকুর চুরি। যদিও ছয়টি কোম্পানি টেন্ডার ড্রপ করেছে। টেন্ডার পেয়েছে ধলেশ্বর নামে একটি কোম্পানি। বাকি কোম্পানির কাগজে ত্রুটি করেছে খোদ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিজেই। তার পরিচিত কোম্পানিকে পাইয়ে দেয়া হয়েছে লোক নিয়োগের কাজটি। আর জামানত বাবদ নেয়া হয়েছে ৩৩ লাখ টাকা। ১৩৫ জন লোক নিয়োগ হলেও শুধু ৩৫ জন লোক দিতে পেরেছে ধলেশ্বর কোম্পানি। বাকি লোকজন চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সেক্রেটারি ও প্রশাসনিক কর্মকতা দিয়েছেন। আর এ দুই নেতা ১০০ লোকের কাছ থেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। চার মাস আগেও প্রায় ১০০ লোক নেয়া হয়েছে। তার মধ্যেও ওই চক্রের সদস্য বেশি। এ দিকে বাবুবাজার, নয়াবাজার মিটফোর্ড ব্রিজের সিঁড়িতে নিয়মিত ছিনতাইকারী শহিদ এখন মিটফোর্ড হাসপাতালের আউটসোর্স হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। তার ভগ্নিপতি চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি। নাম তার মোজাফ্ফার হোসেন বাবুল। ১৫ বছর ধরে বরখাস্ত রয়েছেন বাবুল। ছিনতাই দালালিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি ডাকাতি ও মার্ডার মামলাও হয়েছে তার নামে। ক’দিন আগে হনুফা নামে এক সুইপারের মেয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে নেতা বাবুল। এমনকি তার রোষানলে পরে বহু নারীর সম্মান ুণœ হয়েছে। তার মধ্যে চুক্তিভিত্তিক নারীরা বেশি।
আমিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে রোগী বাগিয়ে নিয়ে অন্য প্রাইভেট কিনিকে ভর্তি করানোর। এ ছাড়াও মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আদি কর্মকার নামে অপর এক কর্মচারীর বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসা ও দালালির অভিযোগ রয়েছে। সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে মাদক কারবারি ও দালালির।

 


আরো সংবাদ



premium cement