২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

বৈচিত্র্য সুরের জাদুতে মোহিত লোকসঙ্গীত উৎসব

আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভ্যালে গান গাইছেন আবদুল হাই দেওয়ান : নূর হোসেন পিপুল -

শুরুর দিনেই বৈচিত্র্য সুরের জাদুতে মোহিত ছিল লোকসঙ্গীত উৎসব। অগ্রহায়নের শুরুতে রাত যত বাড়ছিল ততই একটু একটু করে বাড়ছিল কুয়াশা। কিন্তু কুয়াশাভেদী উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছিল সুরের ঢেউ। বেহালা, সরোদ, সেতার, বাঁশির মোহিনী সুরের বৈচিত্র্য আর কণ্ঠের জাদুতে শ্রোতাদের আবেগে ভাসিয়েছেন লোকসঙ্গীত শিল্পীরা। গতকাল সন্ধ্যায় আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় সঙ্গীত উৎসব আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব। সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শুরু হওয়া তিন দিনের এ উৎসব কাল শেষ হবে। এতে সাতটি দেশের ১৭৪ শিল্পী গান গাইবেন।
প্রথম দিনে গতকাল বাংলাদেশের শিল্পী আবদুল হাই দেওয়ান ও ভাবনা নৃত্যদল ছাড়াও গান করেন, পোলান্ডের দিকান্দা, ভারতের ওয়াড়ালি ব্রাদার্স ও সাত্যকি ব্যানার্জি। শুরুর দিনে গতকাল গেট খোলার নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আর্মি স্টেডিয়ামের প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়।
উৎসবের শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। প্রথমেই মঞ্চে ওঠে বাংলাদেশের ভাবনা নৃত্যদল। প্রায় ২০ মিনিট তাদের পরিবেশন শেষে মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত শিল্পী আবদুল হাই দেওয়ান। ‘মাগো মা ঝিও ঝি’ গান দিয়ে তিনি তার পরিবেশনা গান শুরু করেন। প্রায় ৫০ মিনিট গান গেয়ে সর্বশেষ ‘তুমি চিঠি দেওনা পত্র দেওনা’ গান দিয়ে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন।
এরপর মঞ্চে আসেন পোল্যান্ডের ব্যান্ড দিকান্দা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী তাদের সুরের মূর্ছনা শেষে মঞ্চে আসেন লেখক সাংবাদিক ও অনুষ্ঠানের উপস্থাপক আনিসুল হক। তিনি এসে অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বের ঘোষণা দেন। তারপর একে একে মঞ্চে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, ঢাকা ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের ডেপুটি সিইও ও সিএমও ইয়াসির আজমান। অতিথিদের বক্তব্যে পর অর্থমন্ত্রী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
পরে রাত ১০টার কিছুক্ষণ আগে মঞ্চে আসেন ভারতের সাত্যকি ব্যানার্জি। প্রায় ৫০ মিনিট তিনি গান করেন। তার পরিবেশন শেষ হলে মঞ্চে আসে সর্বশেষ দল ভারতের ওয়াড়ালি ব্রাদার্স। তাদের পরিবেশনার মাধ্যমে রাত ১২টায় প্রথম দিনের উৎসবের সমাপ্ত হয়।  গতকাল যারা গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশের সামিনা হোসেন প্রেমা ও তার নৃত্যদল ভাবনা ছিলেন। মূলত ক্ল্যাসিক্যাল, শাস্ত্রীয় ও লোকনৃত্যের জন্য জনপ্রিয় এই নাচের দল।
শিল্পী আবদুল হাই দেওয়ান কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া একজন। এই শিল্পীর শৈশব শুরু হয় আড়বাঁশি বাজানোর মাধ্যমে। গানের প্রতি তার এ অনুরাগ আর গাওয়ার নেশা একদিন তাকে পরিণত করে ‘মাতাল বাউল’ রাজ্জাক দেওয়ানের শিষ্য হিসেবে। গুরুর কাছ থেকে পান ‘হাফ মাতাল’ উপাধি। তারপর থেকেই পরিবেশন করে যাচ্ছেন বাউলগান।
পোল্যান্ডের ব্যান্ড দিকান্দা। তাদের গানে ইউরোপীয় বলকান ও জিপসি প্রভাব দেখা যায়। আছে ইউরোপীয় ঐতিহ্যের লোকজ সুরের সাথে প্রাচ্যের মিলন। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া, ভারত ও আমেরিকায় নানা উৎসবে ব্যান্ডটি অংশগ্রহণ করেছে।
ভারতীয় শিল্পী সাত্যকি ব্যানার্জির দখল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত দুই ক্ষেত্রেই। দোতারাও খুব ভালো বাজান। উচ্চাঙ্গ ও লোকজ এই দুই ঘরানার মিশেলে তার গানে তৈরি হয় অন্য ধরনের মাদকতা।
ভারতের সুফি সঙ্গীতে বেশ পরিচিত নাম ওয়াড়ালি ব্রাদার্স। পদ্মশ্রী ওস্তাদ পূরণচন্দ্র ও পেয়ারেলাল ওয়াড়ালিই ‘ওয়াড়ালি ব্রাদার্স’ নামে পরিচিত। গুরুবাণী, কাফি, গজল ও ভজনের পাশাপাশি ওয়াড়ালি ব্রাদার্সের পছন্দ সুফি গান।


আরো সংবাদ



premium cement