২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভিয়েনায় জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে দুদক চেয়ারম্যান

দুদকের মামলায় ৫ বছরে অভিযুক্তদের ৭১ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত

-

গত পাঁচ বছরে (২০১৩-২০১৭) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মামলায় অভিযুক্তদের মালিকানাধীন ৮ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার বা ৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আর জরিমানা করা হয়েছে ২৫ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের ‘দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ গ্রুপে’র নবম সেশনে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এ তথ্য জানান।
গত সোমবার (১২ নভেম্বর) অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় জাতিসঙ্ঘ দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের ‘দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন রিভিউ গ্রুপের নবম সেশন শুরু হয়েছে, এটি আগামী শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল এতে অংশ নিয়েছেন।
দুদক চেয়ারম্যান এ সময় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ইন ক্রিমিনাল ম্যাটার অ্যাক্ট-২০১২ সহ বিভিন্ন আইন, বিধিবিধান ও বিচারিক প্রক্রিয়ার সংস্কারের কথাও উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে কমিশনের বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের ৭১৫.২ মিলিয়ন টাকা (৮.৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, একইভাবে ২০২৭.৪৬ মিলিয়ন টাকা (২৫.৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৫৫০টি দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং মামলায় আসামিদের বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যান উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জানুয়ারি -২০১৮ থেকে অক্টোবর, ২০১৮ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ১৮৯টি মামলা দায়ের এবং ২২৩টি অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। তিনি দুদকের পারফরমেন্স মূল্যায়ন করে বলেন, ২০১১ সালে যেখানে দুদকের মামলায় বিচারিক আদালতে সাজার হার ছিল ২০ শতাংশ, ২০১৭ সালে তা ৬৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং মামলার ক্ষেত্রে এই সাজার হার ১০০ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত ২৩টি মামলার রায় হয়েছে, প্রতিটি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘শূন্য সহিষ্ণুতার নীতির’ কথা উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক এর আইনি ম্যান্ডেট অনুসারে স্বাভাবিক অনুসন্ধান ও তদন্তের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন নও প্রতিরোধে বহুমুখী উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে কমিশন কর্তৃক সম্প্রতি পরিচালিত ফাঁদ মামলার অভিযানের তথ্য প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, এ বছরে ১৫টি ফাঁদ মামলা পরিচালনা করে ঘুষ গ্রহণের সময় ১৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হাতেনাতে ঘুষের টাকাসহ গ্রেফতার করেছে দুদক।
এ সময় দুদকের উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ এর প্রাপ্ত অভিযোগের ওপর কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন অভিযানসহ অন্যান্য কার্যক্রমের বিবরণ দেন দুদক চেয়ারম্যান।
এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক গঠিত ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিমের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদক এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে তা প্রতিরোধে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে সরকারি পরিষেবা নিশ্চিতকল্পে এসব প্রতিষ্ঠানকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পরামর্শ প্রদান করছে। তিনি জানান ইতোমধ্যেই কমিশন ভূমি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সড়ক ও জনপথ মন্ত্রণালয়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, আয়কর বিভাগ ও কাস্টমস বিভাগে তাদের বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অংশ হিসেবে দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে, তা বন্ধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা প্রেরণ করেছে।  

 


আরো সংবাদ



premium cement