২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সেন্টমার্টিনে রাত্রিকালীন নিষেধাজ্ঞা : পর্যটনে কিরূপ প্রভাব পড়বে

-

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে আগামী ১ মার্চ থেকে রাতযাপন নিষিদ্ধ করায় পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন পর্যটকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি দ্বীপের ভারসাম্যের জন্য হুমকি বলে পরিবেশ সমীক্ষায় উঠে আসার পর সম্প্রতি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ দিকে কক্সবাজার প্রশাসন বলছে, পর্যটকদের যাতায়াত সীমিত করার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত, এতে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা পাবে।
সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ দ্বীপটি কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের কাছে সমুদ্র সৈকতের পর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থল। প্রতি বছর পর্যটন মওসুমে পাঁচ-ছয়টি জাহাজে প্রতিদিন গড়ে সাত হাজারের বেশি পর্যটক এ দ্বীপ ভ্রমণে যান। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকে বলছেন, সেন্টমার্টিনে রাতের সৌন্দর্য অন্যরকম। রাতে সেন্টমার্টিনে থাকতে না পারলে জ্যোৎস্না দেখা অপূর্ণ রয়ে যাবে। রাতে সেন্টমার্টিনে থাকতে না পারলে অনেকরই কক্সবাজারে আসা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। অনেক পর্যটক জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিনে রাতে থাকতে না পারলে নিঃসন্দেহে পর্যটক হ্রাস পাবে। বেশির ভাগ পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণের জন্য কক্সবাজারে আসেন। মাত্র এক দিনে সেন্টমার্টিন দেখা হয়ে ওঠে না। কারণ টেকনাফ থেকে সকালে জাহাজে চড়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়।
কিন্তু পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন দ্বীপটিতে পর্যটনকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে শতাধিক অবৈধ হোটেল-গেস্টহাউজ। তাই অতিরিক্ত পর্যটক এ দ্বীপের ভারসাম্যের জন্য হুমকি এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে বলে পরিবেশ সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি ২০১৯ সালের মার্চ থেকে দ্বীপে পর্যটকদের রাত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিদিন অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে ৫০০ পর্যটক এ দ্বীপে যাতায়াত করবে, যাদের দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসতে হবে।
তবে পর্যটক ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে পর্যটনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। একজন বলেন, এখানে রাতযাপন যদি একদমই বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমাদের মতো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খুবই দুর্ভোগের কারণ হবে। আরেকজন বলেন, ছয় ঘণ্টা জার্নি করে গিয়ে এক দিনও থাকতে পারব না, এটা কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়। আরেকজন বলেন, এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বে। আর পর্যটন শিল্প ও পরিবেশকে রক্ষা করে উন্নত বিশ্বের দ্বীপগুলোর আদলে সেন্টমার্টিনকে গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন এ পরিবেশবাদী। সেভ দ্য নেচারের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসাইন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ পরিবেশবান্ধব যে উপায়ে তারা পর্যটনকে সমৃদ্ধ করেছে, সেই আদলে সেন্টমার্টিনকে গড়ে তুলতে পারলে দেশ রক্ষা করে পর্যটন শিল্প রক্ষা হবে বলে আমি মনে করি।
কক্সবাজারের হোটেল সী-গালের ম্যানেজার নূরে আলম মিথুন বলেছেন, সরকার কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জানি না। সত্যি এগুলো বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে পর্যটন শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে কক্সবাজারে পর্যটকের সংখ্যা কমে আসবে। সরকার যদি পর্যটন শিল্পের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে থাকে আমরা স্বাগত জানাব। তবে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞা পর্যটন খাতের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
একই রকম হতাশার কথা শোনালেন কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুখিন খান। তার কথায়, সেন্টমার্টিন হচ্ছে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। এই প্রবাল দ্বীপে বেড়ানোর উদ্দেশে অনেক পর্যটক তিন দিন অথবা এক সপ্তাহের জন্য কক্সবাজারে আসেন। কিন্তু সেন্টমার্টিনে রাতে অবস্থানের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে পর্যটন শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাবে পড়বে। কারণ সেন্টমার্টিনে যেতে না পারলে কক্সবাজার বিমুখ হয়ে যাবে ভ্রমণকারীরা। এতে করে পর্যটন খাত থেকে আসা রাজস্ব হ্রাস পাবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন ও আইসিটি) এস এম সরওয়ার কামালও মনে করেন সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের ওপর রাত্রিকালীন নিষেধাজ্ঞায় পর্যটন শিল্পে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং পর্যটকদের আকর্ষণ আরো বাড়বে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, অনলাইনে সফটওয়্যার জেলা প্রশাসনের কাছে থাকবে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অনলাইনে তারা রেজিস্ট্রেশন করবে যে সে অমুক তারিখে সেন্টমার্কিনে যেতে চায়। সেই তারিখে যদি পর্যটকের সংখ্যা ১০০০ জন হয়, তাদের মধ্যে যারা আগে বুকিং দেবেÑ তারাই ওখানে যেতে পারবে। তবে এই সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে এখনো হাতে আসেনি। এ অবস্থায় পর্যটকদের অনলাইনে নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে।
এ দিকে সোমবার বিকেলে সেন্টমার্টিন দ্বীপে রাতযাপন নিষিদ্ধ ও পর্যটক ভ্রমণ সীমিতকল্পে পরিবেশ অধিদফতর কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর টুয়াক স্মারকলিপি প্রদান করে। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি মো: আবদুর রহমান। টুয়াক সভাপতি তোফায়েল আহম্মেদের নেতৃত্বে স্মারকলিপি প্রদানকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কার্যকরি কমিটির উপদেষ্টা এস এম কিবরিয়া খান, সিনিয়র সহসভাপতি আনোয়ার কামাল, সহসভাপতি ইফতিকার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আসাফ উদ দৌলা (আশেক), যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন বিশ্বাস তুষার, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আজম ও সহপ্রচার সম্পাদক ইউসুফ। 

 


আরো সংবাদ



premium cement