১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিয়ম ভঙ্গই যেখানে নিয়ম তার নাম শিশু হাসপাতাল

অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অর্ধশতাধিক নিয়োগ
-

ঢাকা শিশু হাসপাতালে নিয়ম ভঙ্গ করে চলাই নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। এসব নিয়োগে শিশু হাসপাতালের আইন এমনভাবে ভঙ্গ করা হয়েছে যে হাসপাতালের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের মধ্যে তা হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। জাতীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ দেয়ার বিধান থাকলেও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্যে হাসপাতালের বোর্ডে নোটিস টানিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আগে থেকে মনোনীতদের। অভিযোগ রয়েছে শেষ দিন নোটিসটি টানানোর এক ঘণ্টা পরই তুলে নেয়া হয়। এ ধরনের নিয়োগে হাসপাতালের বোর্ড সদস্যসহ প্রশাসনিক ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা জড়িত।
অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগে দেখা যাচ্ছে কোর্স শেষ না হওয়া ছাত্রকেও যেমন নিয়োগ দেয়া হয়েছে আবার বিএমডিসির স্বীকৃত নয় এমন ডিগ্রিধারী চিকিৎসককেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত বয়স অতিক্রমকারীকেও যেমন নিয়োগ দেয়া হয়েছে তেমনি চুক্তিভিত্তিক থাকা চিকিৎসককে মেডিক্যাল অফিসার থেকে পদোন্নতি দিয়ে রেজিস্ট্রার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা অভিযোগ করেছেন বাইরের হাসপাতালে চাকরিরত চিকিৎসককেও পদোন্নতি দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপক করা হয়েছে। সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে জুনিয়রদের নিয়োগ দেয়াতো এখানে সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানান, নিয়ম অনুসারে ঢাকা শিশু হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসককেই পদোন্নতি দিতে হবে। কিন্তু ডিসিএইচ ডিগ্রিধারী ডা: রাশেদ নামে একজনকে রেজিস্ট্রার করা হয়েছে। অথচ এটি একটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি। এ ডিগ্রিটা বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) স্বীকৃত নয়। অন্য ডিসিএইচ ডিগ্রিধারী ডা: কামরুজ্জামানকে সহকারী অধ্যাপক করা হয়েছে। জানা গেছে, তার নিয়োগের বিপরীতে কোনো পদ বোর্ডে টানানো নোটিসেই ছিল না। ৪০ বছর অতিক্রান্ত হলে কাউকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায় না শিশু হাসপাতালের আইন অনুসারে। কিন্তু এ আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ডা: আতিককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: নাবিলাকে পদোন্নতি দিয়ে রেজিস্ট্রার করা হয়েছে। শিশু হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, হাসপাতালের আইন অনুসারে এ নিয়োগটিও অবৈধ। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুই লাখ টাকা বেতনে ডা: রেজওয়ানা রিমা চাকরিরত থাকলেও তাকে হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক করা হয়েছে। তিনি ওই বেসরকারি হাসপাতালে এখনো চাকরি করছেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা। হাসপাতালের চিকিৎসক না হওয়া সত্ত্বেও ডা: রাসাকে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শিশু হাসপাতালের ছাত্র ডা: গজেন্দ্র মাহতকে রেজিস্ট্রার করা হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন দুর্নীতির মাধ্যমে শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালকসহ (অর্থ) কমপক্ষে ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
সিলেটইজমের কারণে ১৫ বছরের সিনিয়রকে ডিঙ্গিয়ে শিশু হাসপাতালে চাকরির অভিজ্ঞতা পাঁচ বছর হওয়া সত্ত্বেও অধ্যাপক ডা: শফি আহম্মেদ মোয়াজকে একাডেমিক পরিচালক করা হয়েছে। তিনি অধ্যাপকের তালিকায় ১৫ নম্বরে আছেন বলে জানা গেছে। বিস্ময়ের বিষয় হলো- শিশু হাসপাতালে ৩৫ বছর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অধ্যাপক থাকলেও তাদের কাউকেই একাডেমিক পরিচালক করা হয়নি। অভিযোগ আছে শিশু হাসপাতালের বোর্ড চেয়ারম্যানের বাড়ি সিলেট বলে এত বড় অনিয়মটি করা হয়েছে।
এ হাসপাতালে কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়েছিল। অর্গানোগ্রামে পদ না থাকলেও নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যেমন সিকিউরিটি অফিসার ও সহকারী পরিচালক (অর্থ) পদে যথাক্রমে মাসুদ রানা ও সাকিব হাসানকে নেয়া হয়েছে। এ দ’ুটি পদ শিশু হাসপাতালের অর্গানোগ্রামে নেই বলে জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। নিয়োগকৃত পদের যোগ্যতা আছে কি না যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে না। এমনকি মৌখিক পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে না।
আরো অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালে উন্নয়ন কাজ হচ্ছে টেন্ডার ছাড়াই। যেমন ৩ নম্বর ওয়ার্ডে টাইলস বসানো হলেও কোনো টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি। এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে কাজ করানো হচ্ছে। টাইলস বসানোর কাজও নামমাত্র করা হয়েছে নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে। এ ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
৫০০ কেবিএ ক্ষমতা সম্পন্ন জাপানি জেনারেল ব্র্যান্ডের জেনারেটর ক্রয়ের আদেশ দেয়া হলেও ঠিকাদার পুরনো জেনারেটরকে জাপানি জেনারেল ব্র্যান্ডের নতুন কভার পরিয়ে হস্তান্তর করে। এই জেনারেটর প্রথম চালু করার পর পরই শর্টসার্কিট হয়ে পুরো ভবনের এসি, মেশিনারিজ বাল্ব নষ্ট হয়ে যায়। জেনারেটরটিও বিকল হয়ে যায়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা: আবদুল আজিজকে ফোন করা হলে প্রথম দিন তিনি বলেন, হাসপাতালে এসে কথা বলতে। হাসপাতালে গিয়ে নির্দিষ্ট দিনে তাকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু পরে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।


আরো সংবাদ



premium cement