২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিরিজ বোমা হামলার ১৩ বছর পূর্তি আজ

-

আজ ১৭ আগস্ট। দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে সিরিজ বোমা হামলার ১৩তম বর্ষপূর্তি। ১৩ বছর আগে ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলায় চালায় উগ্রবাদী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ১৩ বছর পার হলেও সিরিজ বোমা হামলার পূর্ণাঙ্গ বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। দেশে উগ্রবাদী হামলার ঘটনা এখনো ঘটছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনো প্রায়ই গ্রেফতার হচ্ছে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উগ্রবাদীদের নিয়ে সারা বিশ্বই উদ্বিগ্ন।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩টি জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) ৫ শ’র বেশি স্থানে সিরিজ বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি। ওই হামলায় দু’জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে এই নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই দিন দেশের ৬৩টি জেলায় মোট ৪৩৪টি স্থানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর শুরু হয় জেএমবির আত্মঘাতী হামলা। বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় নিহত হন অন্তত ৩০ জন। আহত হন চার শতাধিক। ওই বছরেরই ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরের আদালত এজলাসে উগ্রবাদীরা বোমা নিক্ষেপ করে। এতে তিনজন নিহত ও বিচারকসহ কমপক্ষে অর্ধশত আহত হন। এর কয়েক দিন পর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলা চালালে তিনি ও তার গাড়ির ড্রাইভার আহত হন। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ির মধ্যে উগ্রবাদী সদস্যরা বোমা হামলা চালায়। সেখানে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে ও সোহেল আহম্মদ। সেখানে উগ্রবাদী সদস্য মামুনসহ কমপক্ষে আটজন আহত হয়। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরি ও চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাক পরে এক যুবক বোমা নিয়ে ঢুকে পড়ে। বিস্ফোরণে সেখানে আইনজীবীসহ ১০ জন নিহত হন। হামলার সাথে জড়িত উগ্রবাদী সদস্যও সেখানে নিহত হয়। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো কমপক্ষে ২০ জন। একই দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবির আত্মঘাতী বোমাবাজরা বিস্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজীব বড়–য়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল ও একজন সাধারণ মানুষ নিহত হন। পুলিশসহ আহত হন প্রায় অর্ধশত মানুষ। ১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারো বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। সেখানে কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা শহরের বড়পুকুরপাড়ে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতী উগ্রবাদী সদস্যরা। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দুই নেতাসহ আটজন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।
এই ঘটনায় শীর্ষ ছয় উগ্রবাদীর যে মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয় ওই মামলার পিপি ঝালকাঠি আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হায়দার হোসাইনও উগ্রবাদীদের হাতে নিহত হন। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ফিল্মি স্টাইলে ছিনিয়ে নেয়া হয় তিন শীর্ষ উগ্রবাদী সালাহ উদ্দিন ওরফে সালেহীন, মিজান ওরফে বোমারু মিজান ও রাকিব হাসানকে। সিরিজ বোমা হামলাসহ অনেক উগ্রবাদী হামলায়ই তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
পুলিশ ও র‌্যাব সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে জেএমবির ওই ঘটনায় দেশের ৬৩ জেলায় ১৬১টি মামলা হয়। আসামি করা হয় ৬৬০ জনকে। এর মধ্যে ৪৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের মধ্যে এখনো পলাতক রয়েছে অন্তত অর্ধশত। জামিনে রয়েছে আরো প্রায় ৫০ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাজা পাওয়া আসামি রাসেল, আবদুল কাফি, এম এ সিদ্দিক বাবলু, রানা ওরফে আবদুস সাত্তার, মাসুম ওরফে আবদুর রউফ ও রায়হান ওরফে উবায়েদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির তখনকার শীর্ষনেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ প্রায় সাড়ে সাত শ’ উগ্রবাদী সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। এ মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর আসামি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে উগ্রবাদী নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই ছয় উগ্রবাদীর পরে এই মামলায় আর কারো ফাঁসি কার্যকর হয়নি। উগ্রবাদীদের হামলা যে একেবারে থেমে গেছে তেমনটি নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষকর্তারা বলেছেন, উগ্রবাদীদের তৎপরতা থেমে গেছে তেমনটি নয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement