২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজি সঙ্কটে রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা

-

সপ্তাখানেক পরে কোরবানির ঈদ। আর এই ঈদকে ঘিরে চামড়া সংগ্রহের মওসুম শুরু হচ্ছে। কিন্তু পুঁজি হাতে না থাকায় চামড়া সংগ্রহে তাদের সক্রিয় তৎপরতা নেই। তার ওপর কোরবানির আগেই হঠাৎ করে কমেছে চামড়ার দাম। তাই এবারের ঈদে চামড়া কেনাবেচা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর চামড়া ব্যবসায়ীরা। তারা অনেকটাই দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের বকেয়া পাওনা প্রায় ১৫ কোটি টাকা। এতে চামড়ায় অর্থলগ্নি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা।
চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবার ঈদের আগে ট্যানারি মালিকরা টাকা দিতেন। তবে স্থানান্তরসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এবারো টাকা দিতে চাচ্ছেন না তারা। আর দাম কমার আশঙ্কায় ঋণ দেয়নি ব্যাংকগুলোও। এতে চামড়া কেনার জন্য চাহিদামতো এবার পুঁজি পাচ্ছেন না রাজশাহীর ুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ীরা। আর প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনতে না পারলে পাড়া-মহল্লায় ঢুকে পড়বে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা। পরে দাম না পেলে সেসব চামড়া সীমান্ত হয়ে ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবার এই ঈদ সামনে রেখে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে লবণের দাম বাড়তে থাকে। এবারো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাজারে লবণের দাম বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা লবণ এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে চামড়া সংরণ ব্যয়ও বেড়ে গেছে। তার ওপর রয়েছে শ্রমিকের মজুরি এবং পরিবহন খরচ। সামগ্রিকভাবে পুঁজি সঙ্কট, বাজার মন্দা ও বকেয়া আদায় না হওয়ায় মূলত এবারের ঈদে চামড়া সংগ্রহ করা না করা নিয়ে বেশ বেকায়দায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ দিকে রাজশাহী জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা ট্যানারি মালিকদের থেকে ২০১৫-১৭ সালের বকেয়া বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা পাবেন। এ অবস্থায় আবারো চামড়ার দাম প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। চামড়ার দাম নির্ধারণের পরেও সেই দামে কেনেন না ট্যানারি মালিকেরা। ফলে চামড়া নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারিত হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩৫-৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ২০ থেকে ২২ টাকা। আর ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। তবে মহিষের চামড়ার দামের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
তিনি আরো জানান, রাজশাহী জেলায় সাধারণত প্রতিবার ঈদে ৮০ থেকে ৯০ হাজার গরু-মহিষ ও প্রায় দেড় লাখ খাসি-ভেড়া কোরবানি হয়ে থাকে। বিপুল এই চামড়া তারা কিনে লবণ দিয়ে কয়েক দিন সংরণের পর নিয়ে যান নাটোরের আড়তগুলোতে। ঢাকার ট্যানারি মালিকেরা এখান থেকে সেসব চামড়া কিনে নিয়ে যান। এসব চামড়ার প্রায় পুরোটাই তাদের বিক্রি করতে হয় বাকিতে। প্রতি বছর বিক্রির ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে ট্যানারি মালিকেরা টাকা পরিশোধ করে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আগের চামড়ারই প্রায় ৮০ ভাগ টাকা পরিশোধ করেননি ট্যানারি মালিকেরা। ফলে ব্যবসায়ীরা চরম পুঁজি সঙ্কটে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ুদ্র ব্যবসায়ীরা ঈদে চামড়া কিনতে না পারলে তা ফড়িয়াদের হাতে চলে যাবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভালো দাম না পেলে ফড়িয়াদের মাধ্যমে রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে এই চামড়া ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, সরকারের প্রতি ঈদের পর সীমান্ত পথে নজরদারি বাড়ানো ও লবণের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানান তারা।


আরো সংবাদ



premium cement