২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি উপেক্ষা

সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি

-

রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি উপেক্ষা করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য সারা দেশের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) এ প্রশিক্ষণ আয়োজন করছে। গত শনিবার উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রথম ব্যাচের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
ওই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে ভোটগ্রহণে অধিক পরিমাণে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হবে। আজ সোমবার দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মে অনুষ্ঠিত খুলনা সিটি করপোরেশনের পর আসন্ন গাজীপুর নির্বাচনেও চারটি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করে ইসি। তফসিল ঘোষিত বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে যন্ত্রের সহায়তা নিয়ে নির্বাচন করার পর আগামীতে স্থানীয় নির্বাচনের যেকোনো সিটি, উপজেলা কিংবা পৌরসভায় এককভাবে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কাজে এ যন্ত্রকে যুক্ত করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে কমিশন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইভিএম বিতর্ক নিরসনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। এমনকি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ রোধে সাংবাদিকদেরও ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক বলেন, ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে নয়, সব নির্বাচনের জন্য কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা উচিত।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব:) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ইভিএমের ওপর পর্যায়ক্রমে সবাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যেন এর সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর হয়।
এর আগে সিইসি কে এম নূরুল হুদা জানিয়েছিলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেই ইসির। রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা সর্বসম্মতি দিলেই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে।
ইসির সাথে সংলাপে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ৩০ জুলাই রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। কমিশন সুদূরপ্রসারী ল্য নিয়ে এসব নির্বাচনে ইভিএমের পরিধি বৃদ্ধি করেছে। এর মধ্যে বরিশাল সিটিতে ১০টি এবং রাজশাহী ও সিলেটে দুইটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হবে। এর আগে সিটি নির্বাচনে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে একটি করে ওয়ার্ডে ইভিএমে নির্বাচন করে।
গত সিটি নির্বাচনে বুয়েটের তৈরি ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজশাহী সিটির টিটিসি কেন্দ্রে রণত্রে তৈরি হয়। ইভিএমের কারণে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বিতর্কিত হয়ে পড়ে। সর্বপ্রথম এক-এগারোর সময়কার এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন করে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি মেশিন কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে।
পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কেনা হয়। এগুলো পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না। শামসুল হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১নং ওয়ার্ডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় হুদা কমিশনের স্থলে বিধির নিয়মে নতুন কমিশন হিসেবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ী রকীব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে পুরো বিতর্কের মধ্যে পড়ে যায় ইসি। পরে কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণের আগে ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে কে এম নূরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৪১নং কেন্দ্রের ছয়টি কে ব্যবহার করে। কিন্তু পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত হয়নি। পুরনো ইভিএমের মতো ত্রুটি নিয়ে নির্বাচন শেষ করে। এরপর গাজীপুর নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ধীরগতিতে ভোটগ্রহণ ও ভোটারদের ভোগান্তিতে ফেলার অভিযোগ আসে। ওই নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের অভিযোগ পাওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement