১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বরিশালে সরোয়ার-সাদিকের মনোনয়নে উজ্জীবিত নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীরা

সরোয়ার ; সাদিক -

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আর ধানের শীষে অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ারের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার খবরে উজ্জীবিত বরিশাল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা মনে করছেনÑ এই দুই শক্তিশালী প্রার্থীর মধ্যে চূড়ান্ত ভোটের লড়াই হলে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন উৎসবে রূপ নেবে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়র পদে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন ঘোষণার পর বরিশাল নগরীর সোহেল চত্বরের দলীয় কার্যালয় থেকে আনন্দ মিছিল বের করেন তার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় সদর রোডসহ আশপাশের সড়কগুলোতে মিছিলকারীদের আনন্দ-উল্লাস করতে দেখা গেছে। অন্য দিকে মজিবর রহমান সরোয়ার বিএনপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন সংবাদে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ-উল্লাস লক্ষ করা গেছে।
নির্বাচনের তফসিল আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্নের পর গত এক সপ্তাহে বরিশালে মনোনয়ন নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়। কেননা বিসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে এক ডজনের বেশি নেতা বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং-তদ্বির করেন। এসব নেতার অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে গুজব রটানো শুরু করেন। এসব গুজবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীসহ ভোটারদের মধ্যেও ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়। তবে বিএনপির বর্তমান বিসিসি মেয়র, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতাসহ ৯ জন বুধবার মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। দলের হাইকমান্ড থেকে সরোয়ারকে মনোনয়ন সংগ্রহ করতে বলায় পাল্টে যায় হিসাব-নিকাশ। তেমনিভাবে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামীম, মহানগর যুবলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক খান আলতাফ হোসেন ভুলুসহ অনেক নেতা যখন ঢাকায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন; তখন বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে সাদিক আব্দুল্লাহর নাম প্রস্তাব করে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রে পাঠান। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ থেকে শুরু করে মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা ভূমিকা পালন করার বিষয়টি বরিশাল সিটি এলাকায় ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহকারী উভয় দলের নেতাদের সাথে যাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া খবরে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সর্বত্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলে আলোচনা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এখানকার নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মৃত্যুতে দলের যে শূন্যতা দেখা দিয়েছিল তা সাদিক আব্দুল্লাহ পূরণ করেছেন। বিগত দিনগুলোতে বরিশাল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সাদিক আব্দুল্লাহ বর্তমান প্রেক্ষাপটে যোগ্য প্রার্থী এবং তাকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা একত্রিত।
একইভাবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশালে দলের একক নিয়ন্ত্রণকর্তা। সরোয়ার সংসদ সদস্য, মেয়র, হুইপসহ রাজনৈতিক পদ-পদবিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে থেকে এখানকার দ্বিধাবিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সরোয়ার বিসিসি নির্বাচনে ইতঃপূর্বে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল তার হাত ধরেই বিজয়ী হয়েছিলেন। তাই বিএনপি থেকে সরোয়ারকে প্রার্থী করায় দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে রয়েছেন।
মজিবর রহমান সরোয়ার জানান, তিনি সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হতে না চাইলেও দলের মহাসচিব তাকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল জানান, সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন পাওয়ায় মহানগর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। তিনি বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহর মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী একত্র হয়ে মাঠে নেমেছেন। ইতঃপূর্বে ৩০টি ওয়ার্ডে সভা করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদার জানান, সাবেক মেয়র মজিবর রহমান সরোয়ার সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বিসিসি নির্বাচনে সম্মত ছিলেন না। তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে প্রার্থী হয়েছেন।
জিয়াউদ্দিন সিকদার বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ারকে বিজয়ী করতে মহানগর বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, যেকোনো সময় আনুষ্ঠানিকভাবে মজিবর রহমান সরোয়ারকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল সভাপতি শাহ সাজেদা বলেন, আওয়ামী লীগে সাদিক আব্দুল্লাহ ও বিএনপিতে মজিবর রহমান সরোয়ার দু’জনেই দুই দলে শক্ত প্রার্থী। এ দু’জন নির্বাচন করলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে বরিশালে। নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখবেন বরিশাল নগরবাসী।
বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি এস এম ইকবাল বলেন, মজিবর রহমান সরোয়ার ও সাদিক আব্দুল্লাহ দু’জনেই জনপ্রিয়। এই দু’জন নির্বাচন করলে আকর্ষণীয় নির্বাচন হবে এবার।
বরিশাল মহানগরীতে বিএনপির শক্তিশালী অবস্থান দেখা গেছেÑ ১৯৭৫ সালের পর থেকে। সরোয়ার এখান থেকে সংসদ নির্বাচন এবং সিটি নির্বাচনে জিতেছেন একাধিকবার।
২০০৮ সালে বিএনপির তিন প্রার্থী এবং একজন শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগাভাগির সুযোগে অল্প ভোটে জিতেন আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরন। তিনি পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীতে দৃশ্যমান উন্নয়নও করেন। তারপরেও ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ২২ হাজার ভোটে পরাজিত হন বিএনপির কামালের কাছে। তবে হিরন হারলেও তিনি আগের নির্বাচনের তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছেন। তখন আর বিএনপিতে একক প্রার্থী থাকায় পাঁচ বছর আগের মতো ভোট ভাগাভাগির সুবিধা আর তিনি পাননি।
হিরনের হাত ধরেই বরিশালে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস পর তার মৃত্যুতে বরিশালে নেতৃত্ব শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। আর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার আত্মীয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তখন থেকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমি নির্বাচনে কোনো ইশতেহার দেবো না। জনগণ যেটা চান সেটাই ইশতেহার। আমি জনগণের জন্য কাজ করছি, কাজ করব। নগরীর উন্নয়ন করাই মূল লক্ষ্য আমার।
সাবেক মেয়র হিরনের স্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য জেবুন্নেছা আফরোজ বলেন, আমি চাই স্বামী শওকত হোসেন হিরণের অসমাপ্ত কাজগুলো আমার ছোটভাই সাদিক সম্পন্ন করুক। নগরবাসীর উন্নয়নে সাদিকের বিকল্প নেই।
মজিবর রহমান সরোয়ার মেয়র পদে প্রার্থী হচ্ছেনÑ এ খবর শুনে উজ্জীবিত বরিশাল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মহানগর যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট আক্তারুজ্জামান শামীম বলেন, সরোয়ার ভাই যদি নির্বাচন করেন, সেটা আমাদের জন্য আনন্দদায়ক। এই সিটি আমরা আবারো বেগম খালেদা জিয়াকে উপহার দেবো।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জনি বলেন, আমাদের নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচন করলে সেখানে জয়ের বিকল্প কিছু দেখছি না। আমরা সর্বোচ্চ নির্বাচনী প্রচার করব বরিশাল নগরীজুড়ে। এমনিতেই মজিবর রহমান সরোয়ারের জনপ্রিয়তা অনেক।
বিএনপির বরিশাল দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম শাহীন বলেন, রাজনৈতিক কারণে আমরা প্রকাশ্যে সব কিছু করতে পারছি না। তবে আমাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঠিকই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভোটের ঘাঁটি বিবেচনায় বরিশাল ২০ দলীয় জোট অনেক এগিয়ে।


আরো সংবাদ



premium cement
স্বাধীনতা সূচকে ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪১তম নাটোর পৌরসভা কার্যালয়ের ভিতরে দুপক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত কাঁঠালিয়ায় মাঠে ছাগল আনতে গিয়ে বজ্রপাতে কিশোরে মৃত্যু সালমান খানের বাড়িতে গুলির ঘটনায় গ্রেফতার ২ আরো দুই সদস্য বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন রাবির নতুন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে অপরাধ না করেও আসামি হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত কোটালীপাড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত

সকল