২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ডাবল লাইন

প্রকল্প চলছে ১২ বছর ধরে : ব্যয় বৃদ্ধি ৩ গুণ

-

দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো শুরু হলেও শেষ হতে চায় না। ফলে প্রতি বছর বরাদ্দ দিয়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পগুলো টানতে হচ্ছে। তেমনি একটি প্রকল্প হলো বাংলাদেশ রেলওয়ের সিগন্যালিংসহ টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ডাবল লাইন নির্মাণ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্প। এক যুগ ধরে চলছে প্রকল্পটি। ব্যয় ৭২৪ কোটি টাকা থেকে এখন ২ হাজার ১৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। সম্প্রতি রেলওয়ের দেয়া এক প্রস্তাবনা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তাদের প্রস্তাবনা তথ্যানুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য ১৯৬২ সাল থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘ দিন তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে লাইন বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোরের মোট ৩২০ দশমিক ৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ১১৭ দশমিক ৬৭ কিলোমিটার ডাবল লাইন রয়েছে। এ করিডোরের অবশিষ্ট ২০৩ দশমিক ১২ কিলোমিটার ডাবল লাইনে উন্নীত করার ল্েয এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে টঙ্গী-ভৈরববাজার সেকশনে ৬৪ কিলোমিটার মিটারগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে একনেক থেকে অনুমোদিত হয়। বলা হয়েছিল ২০১১ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। কিন্তু সেটা করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
জানা গেছে, প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের দর বৃদ্ধির কারণে ২০১১ সালে প্রকল্প সংশোধন করে ব্যয় বাড়ানো হয় এক লাফে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সময় তিন বছর বাড়িয়ে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে আবার সময় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নকাল ধরা হয়। প্রকল্পের কাজের পরিধি ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বৃদ্ধি, পরামর্শকের সংখ্যা ও ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে দ্বিতীয় সংশোধন করা হয়। এরপর আরও দু’বার ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হয়। একবার ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত এবং পরের বার ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। পরামর্শকদের জনমাস বৃদ্ধি ও ব্যয় হ্রাস, জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি, সম্পদ সংগ্রহের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস, নির্মাণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, বেতনভাতা ও অফিস স্টেশনারির ব্যয় হ্রাস প্রভৃতি কারণে প্রকল্পটির ৩য় সংশোধন করা হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম হলো ৩৯.৩০৭৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ, নতুন ৬৪ কিলোমিটার মিটারগেজ লাইন ও ২২ কিলোমিটার লুপ অ্যান্ড সাইডিং লাইন নির্মাণ করা; ৪টি মেজর ব্রিজ, ৩৬টি মাইনর ব্রিজ ও ৩১টি কালভার্ট নির্মাণ করা; ১০টি স্টেশন ভবন রিমডেলিং করা; ১০টি স্টেশন ভবনে কম্পিউটার বেইজড রিলে ইন্টারলকড সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন এবং ৭টি উপ-প্রকল্পের এপ্রেইজাল।
এখন ব্যয় বাড়ানো হলো ২ হাজার ১৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকায়। কারণ হিসেবে রেলওয়ে বলছে, পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি, সম্পদ সংগ্রহ খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৯৮ দশমিক ০৩ শতাংশ।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এ সেকশনটি ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে এবং উপ-আঞ্চলিক করিডোরের একটি বড় অংশ। ওই উপ-অঞ্চলে পরিবহন এবং ট্রান্স-শিপমেন্টের কেন্দ্র বিন্দু হওয়ার সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলওয়ে করিডোর দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোকে চট্টগ্রাম পোর্টের মাধ্যমে মালামাল পরিবহন সুবিধা দিতে পারে। এর মাধ্যমে দেশী ও বিদেশী উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের চাহিদা মেটানোর জন্য অবিচ্ছিন্ন ডাবল লাইন একান্ত অপরিহার্য।


আরো সংবাদ



premium cement