১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুরে খুলনা স্টাইলে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে সরকার : রিজভী

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল : নয়া দিগন্ত॥ -

গাজীপুর সিটিতে সরকার খুলনা স্টাইলে নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। নিশ্চিত ভরাডুবির ভয়ে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপি ও বিরোধী দলের নির্বাচনসংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে দলটির অভিযোগ। তবে সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে বলে দলটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জনগণ স্বৈরাচার সরকারকে লাল কার্ড দেখাতে বদ্ধপরিকর। সরকারের আস্ফালন উপেক্ষা করেই জনগণ রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, গাজীপুরেও সরকার খুলনা স্টাইলে নির্বাচনের জন্যই পুলিশকে দিয়ে ধানের শীষের সমর্থক ভোটারদের এলাকাছাড়া করে সিটি করপোরেশন এলাকাকে শ্মশানভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। যাতে ভোটারবিহীন নির্বাচন সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যায়। আওয়ামী লীগের বিজয় নিশান নিশ্চিত হয় ভোট ডাকাতি, ভোট সন্ত্রাস, জালভোট, ভোটকেন্দ্র দখল ও অবৈধ অস্ত্রের আস্ফালনের মাধ্যমে। আর এগুলোর দিকে চোখ করে দায়িত্বহীন নির্বাচন কমিশন হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছে।
গাজীপুরে নেতাকর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গত রাতেও (বৃহস্পতিবার) বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা: মাজহারুল আলম, মীর হালিমুজ্জামান ননিসহ কাশিমপুর ও কোনাবাড়িতে দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়েছে।
রিজভী বলেন, বিরোধী দলকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি মার্কা নির্বাচন করতেই সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবেই কারাবন্দী করে রেখেছে। দেশজুড়ে সরকারের বিরোধী দল নিধনের কর্মসূচি থামছে না। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ চলছে। তবে আমরা বলতে চাই, সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। জনগণ স্বৈরাচার সরকারের লাল কার্ড দেখাতে বদ্ধপরিকর।
খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কা : বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, জাল নথির মাধ্যমে মিথ্যা সাজানো মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার অভাবে জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। দিনের পর দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা পূর্ণাঙ্গ স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে বলছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা: এফএম সিদ্দিকী। গতকাল এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বারবার বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি করে আসছি। কেন তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান তাও বিস্তারিতভাবে আমরা উপস্থাপন করেছি দেশবাসীকে অবহিত করতে আমার বারবার বলেছি পিজি বা সিএমএইচে দেশনেত্রীর প্রকৃত চিকিৎসা হবে না। কারণ সেখানে ডপলার টেস্ট এবং বিশেষ ধরনের এমআরআইয়ের সুবিধা নেই। আছে শুধু ইউনাইটেডে। চিকিৎসকের বক্তব্যেও সেটি পরিষ্কার হলো। সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষ কারাবিধির দোহাই দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা তা থেকে বঞ্চিত করছেন। তিনি যাতে প্রকৃত চিকিৎসা না পেয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়েন সে জন্যই এত বাধা ও আপত্তি সরকারের। কিন্তু দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসকেরা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে যেভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাতে দেশবাসীর কাছে এটা ক্রমাগতভাবে পরিষ্কার হয়ে গেছে সরকার তার জীবন নিয়ে দুরভিসন্ধিমূলক খেলায় মেতে উঠেছে। একজন সঙ্কটাপন্ন রোগীকে চিকিৎসা না দেয়া চরম মানবধিকার লঙ্ঘন। রিজভী বলেন, মানবাধিকার তদন্তে জাতিসঙ্ঘের অনুরোধে সাড়া দিচ্ছে না বাংলাদেশ। জাতিসঙ্ঘের এ ধরনের অন্তত দশটি অনুরোধে বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশনার জিয়াদ রাদ আল হুসেইন এ কথা জানান। আসলে নাগরিক নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট যে বিষয়গুলো আমরা দলের পক্ষ থেকে বারবার উপস্থাপন করেছি সেগুলোই আজ বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে জোরালো আওয়াজ উঠছে। অথচ তার পরও সব মনুষত্ব, বিবেক বিসর্জন দিয়ে দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, গুপ্তহত্যা, অপহরণের এক অমানবিক সন্ত্রাসী পরিকাঠামো তৈরি করেছে সরকার। ভোটারবিহীন সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই দেশজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে গণমাধ্যমসহ মানুষের বাকস্বাধীনতা, যা জাতিসঙ্ঘের রিপোর্টে ফুটে উঠেছে। গণমাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ চলছে। কিন্তু সরকারের পরিকল্পনা ও নীলনকশা যেন অব্যাহত আছে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে দুমড়ে মুচড়ে ফেলার জন্য। এ ছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের গুলি, লাঠিচার্জ ও গ্রেফতারের অভিযোগ তুলে ধরেন রিজভী।
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে রাজধানীতে রিজভীর নেতৃত্বে মিছিল
দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিােভ মিছিল করেছেন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টায় রাজধানীর কল্যাণপুরে বিােভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ঢাকা মহানগর পশ্চিম বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে শ্যামলী অভিমুখে বিােভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন সেøাগান দিতে থাকেন। এ সময় টহল পুলিশের উপস্থিতির কারণে তারা দ্রুত মিছিল শেষ করে চলে যান। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে একটি মামলার রায়ের পর থেকে কারাগারে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তার বন্দিত্ব পাঁচ মাসে পা দিয়েছে। তার মুক্তি দাবিতে তখন থেকেই শান্তিপূর্ণ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও বিভিন্ন সংগঠন।

 


আরো সংবাদ



premium cement