২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ঢল

সোনারগাঁওয়েও লোকারণ্য
-

রাজধানীর সব বিনোদন কেন্দ্রে ঈদের দিন ছিল উপচে পড়া ভিড়। শুধু ঈদের দিন নয় গতকাল ঈদের তৃতীয় দিনেও একই অবস্থা দেখা গেছে সব বিনোদন কেন্দ্রে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও খোলা জায়গা, মাঠ, পার্ক, লেক ছিল লোকে লোকারণ্য। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আফতাব নগর, হাতিরঝিল, মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মতো এলাকায় ভিড় জমান অগণিত বিনোদনপ্রেমী মানুষ। অনেকে পরিবারের সবাই মিলে অনেকে আবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে দিনভর মেতে থাকেন আডডা গল্পগুজবে। শহরের বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেতে ফাঁকা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানোর সুখ অনুভব করছেন ঈদের সময় ঢাকায় থেকে যাওয়া এবং স্থানীয় বাসিন্দারা।
এ ছাড়া রাজধানীর আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, শাহবাগ শিশুপার্ক, শ্যামলী শিশুমেলা, ধানমন্ডি লেক, সংসদ ভবন চত্বর, চন্দ্রিমা উদ্যান, বিমানবাহিনী জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারসহ বিনোদনের স্থানগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য।
হাতিরঝিলে মানুষের ঢল ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখানে জমে মানুষের মেলা। ঈদের দিন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করতে পেরেছে এখানকার নান্দনিক সৌন্দর্য। তবে বিকেলে আকাশে ঘনকালো মেঘের ঘনঘটার কারণে সবাইকে ত্যাগ করতে হয় এ এলাকা। তবে ঈদের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের ঢল অব্যাহত থাকে এখানে।
ঢাকার বিভিন্ন দূর এলাকা থেকেও এখানে ছুটে আসে মানুষ। রাস্তা ফাঁকা থাকায় সারা ঢাকার মানুষ সহজেই আসতে পেরেছেন এখানে। বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে মানুষের ঢল উপলক্ষে সেসব এলাকায় জমে ওঠে বিভিন্ন পণ্যের একধরনের মেলা। শিশুদের বিভিন্ন খেলনা, ছোট-বড় সবার বিভিন্ন খাবারের পসরা বসেছে সব বিনোদন কেন্দ্রের আশপাশে।
কুড়িল ফাইওভার, ৩০০ ফিট রাস্তা, জিয়া কলোনি, উত্তরা দিয়াবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ভিড় অব্যাহত ছিল গতকাল পর্যন্ত। রাজধানী ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বিনোদন স্পটেও মানুষের উপচে পড়া ভিড়ের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মানুষের ভিড় জমে। ঈদের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত একইভাবে মানুষের চাপ অব্যাহত ছিল।
হাসান মাহমুদ রিপন সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) থেকে জানান, ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঈদের ছুটিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের পর্যটন ও বিনোদন স্পটগুলোতে ঈদের দিন থেকে টানা তিন দিন ধরে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকা থেকে আসা বহুসংখ্যক দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর ছিল বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁও জাদুঘর), বাংলার তাজমহল ও পিরামিডসহ সোনারগাঁওয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতাত্ত্বিক স্থানগুলো। সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলার তাজমহল ও পিরামিড, ঐতিহাসিক পানাম নগরী, বারদীতে জ্যোতি বসুর জাদুঘর, বৈদ্যেরবাজার মেঘনা নদীর ঘাট, কাইকারটেক ব্রিজ এলাকাসহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানে দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়। লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বর, বাংলার তাজমহল ও পিরামিডের ভেতরের সাজসজ্জা ছিল এবারের ঈদে পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণ। লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলার আয়োজন করে।
এবারের ঈদে প্রকৃতিতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। পর্যটকদের ভিড় সামাল দিতে কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলার তাজমহল ও পিরামিডে নিরাপত্তা কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়েছে। এ দিকে দর্শনার্থীদের ভিড়ের ফলে সোনারগাঁও গ্র্যান্ড ট্যাংক-জাদুঘর রোডে অসহনীয় যানজট ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সোনারগাঁওয়ে বেড়াতে আসা ঘুরতে দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা।
জানা যায়, এবার বছর ঈদের দিন থেকে শুরু করে টানা তিন দিন ঈদের ছুটিতে প্রকৃতির কাছাকাছি কিছু সময় কাটানোর জন্য সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, বাংলার তাজমহল-পিরামিড ও পানাম নগরীসহ সোনারগাঁওয়ের প্রতিটি বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ও শিশুদের সরব উপস্থিতি ল করা গেছে। সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের উপস্থিতি ছিল শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের নির্মিত বাংলাদেশ লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, সোনারগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল পেরাব এলাকায় বাংলার তাজমহল ও পিরামিডে। আগত দর্শনার্থীরা দেখছে মিসরের পিরামিড আদলে নির্মিত বাংলার পিরামিড, ফিল্ম তৈরির যন্ত্রপাতি, ৫টি শুটিং স্পট, ফিল্ম তৈরির স্টুডিওসহ নানা শিক্ষাভিত্তিক আয়োজন। রঙ-বেরঙের পোশাক পরিহিত অনেক দর্শনার্থী ফাউন্ডেশন চত্বরের লেকে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে নৌকা দিয়ে বেড়ানোর মাধ্যমে এ ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছেন। শিশু-কিশোররা নাগরদোলায় দোল খেয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেছেন। এ ছাড়া ঈদে জাদুঘরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য কর্তৃপ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দ মেলার আয়োজন করেছেন। এতে ঈদের দিন ও তার পরের দিন সকাল থেকে জাদুঘরের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের পথচারণায় মুখর হয়ে ওঠে জাদুঘর প্রাঙ্গণ। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মেতে ওঠেন আনন্দে। জাদুঘর প্রাঙ্গণে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নির্মিত ভাস্কর্যেও সামনে দাঁড়িয়ে ছবি উঠাতে ব্যস্ত ছিলেন যুবকেরা। এ ছাড়া বড় সরদার বাড়ির রেস্টুরেশনে (পুরনো নকশার আদলে সংস্কার) কাজ শেষ হওয়ায় বড় সরদার বাড়ির অপূর্ব কারুকার্য মোহিত করে দর্শনার্থীদের। সবচেয়ে বেশি ভিড় করেন বড় সরদার বাড়ির প্রবেশমুখে। কাচ আর শিল্পীর অপূর্ব শৈল্পিক শিল্পকর্ম মোহিত করে সব শ্রেণীর মানুষকে। এখানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা সব কিছু মিস করলেও বড় সরদার বাড়ির প্রবেশমুখে ছবি তুলতে ভোলেন না। দর্শনার্থীদের চাপে সরদার বাড়ির স্মৃতিকে ধরে রাখতে পরিবার পরিজনকে সাথে নিয়ে ছবি তুলতে অনেককেই হিমশিম খেতে হয়। এ দিকে দর্শনার্থীদের আনন্দ উৎসবের জন্য ২ দিনব্যাপী আয়োজন করা বাউল সঙ্গীতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান দর্শনার্থীরা তাদের পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে উপভোগ করেন। আগত দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘরের ভেতর কারুপল্লীতে জামদানি শাড়িসহ নানা ধরনের হস্তশিল্প সামগ্রী কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবারও কারুশিল্প জাদুঘরে ভিড় করেন পর্যটকেরা। আগত দর্শনার্থীরা জানান, জাদুঘর আসতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের। জাদুঘরে প্রবেশমুখের দুটো পথেই অতিরিক্ত গাড়ির চাপে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাদের।
এ দিকে বাংলার তাজমহল ও বাংলার পিরামিডেও একই চিত্র ল করা গেছে, সারা দেশ থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল তাজমহল ও পিরামিডে। এখানে আসা দর্শনার্থীদের ঈদের আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। তাদের চোখে মুখে ছিল একটাই স্বপ্ন তা হলো তাজমহল ও পিরামিড দেখা। এ বিনোদন কেন্দ্রটি উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব এলাকায় অবস্থিত। তাজমহল ও পিরামিডটি এক নজর দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেছে ঈদের দিন থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত। দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে এলেও যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় এখানে আসা দর্শনার্থীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। সরু রাস্তা ভাঙা ও খানাখন্দ রাস্তাটিতে চলাচল দুরূহ অবস্থা।
বেশির ভাগ দর্শনার্থীরা জানান, আগ্রার তাজমহলের আদলে নির্মিত সোনারগাঁওয়ে এমন একটি দর্শনীয় বিনোদন কেন্দ্র আছে ভাবতে অবাক লাগে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থাটা আরো ভালো হলে ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হতো।
জাদুঘর, তাজমহল ও পিরামিডে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের চাপে এসব এলাকার আশপাশের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এ দিকে কিছু দর্শনার্থী যানবাহনে বেশি ভাড়া ও খাবারের চড়া মূল্য আদায়ের অভিযোগ করেছেন।
বাংলার তাজমহলের প্রতিষ্ঠাতা ও চিত্র পরিচালক আহসান উল্যাহ মনি জানান, প্রতি বছরই প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাংলার তাজমহলে ও পিরামিডে পর্যটকদের উপচে পরা ভিড় নামে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে তাজমহলের পাশে ৪০ বিঘা জমির ওপর তৈরি করা হয়েছে বাংলা পিরামিড ও রাজমণি শিক্ষা পার্ক। এ পার্কে এসে দর্শনার্থীরা আরো ঈদের আনন্দ আরো বেশি উপভোগ করতে পেরেছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপ জানান, এ বছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ফাউন্ডেশন এলাকায় পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ করার মত। লোক কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে ঈদের আনন্দ কমতি ছিল না। ঈদ উপলক্ষে আগত দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে ২ দিন ঈদ আনন্দ মেলায় বাউল গানের আসরসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠান আগত দর্শকেরা উপভোগ করছেন।
এ দিকে সোনারগাঁও জাদুঘর ও বাংলার তাজমহল-পিরামিড ছাড়াও সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক পানাম নগরী, বারদীতে জ্যোতি বসুর জাদুঘর, মেঘনা নদীর আনন্দবাজার, বৈদ্যের বাজার ঘাট ও কাইকারটেক ব্রিজ এলাকায় বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী ঈদের আনন্দ উপভোগ করে।


আরো সংবাদ



premium cement
শাস্তি কমিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনে উদ্বেগ টিআইবির যখন দলকে আর সহযোগিতা করতে পারবো না তখন অবসরে যাব : মেসি ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪

সকল