২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে গ্রামীণ জনপদে অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ থাকে না

স্বাধীনতার চার যুগ পরেও কক্সবাজার জেলায় একটিমাত্র গ্রিড লাইন

-

দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিস্তীর্ণ গ্রামীণ জনপদে ঈদের ছুটিতেও ছিল না নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। অবস্থা এমন ছিল যে, বিদ্যুৎ আসে আধাঘণ্টার জন্য, আর যায় দুই-তিন ঘণ্টার জন্য। এমনকি ঈদের নামাজ শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ঈদের আগে চকরিয়ার হাজিয়ান এলাকার ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীর ভাঙনের শিকার হওয়ায় পুরো চকরিয়ার বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষকে টানা চার দিন বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্বাধীনতার চার যুগ পরেও একটি মাত্র গ্রিড লাইন দিয়েই চলে কক্সবাজার জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ জেলায় তিনটি গ্রিড লাইন থাকলেও অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ জেলা কক্সবাজারে রয়েছে একটি মাত্র গ্রিড লাইন। তা ছাড়া জেলা দুর্যোগ প্রবণ। এ ফলে বিভিন্ন সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি মাত্র গ্রিড লাইন হওয়াতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই জেলার বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষকে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকতে হয়। কক্সবাজারের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনও অনেক পুরনো। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়লেও সঞ্চালন লাইন দুর্বল হওয়ায় এখানে সেভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া যায় না। চকরিয়ায় সম্প্রতি ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের বর্ণনা দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বিকল্প গ্রিড থাকলে যেখানে ৩ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা যেত, সেখানে একটি মাত্র গ্রিড লাইন হওয়াতে চার দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে এই জনপদের মানুষকে।
সরকারি তরফে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার কথা বলা হলেও গ্রামীণ জনপদের চিত্র ঠিক উল্টো। ঈদের আগের দিন দিনভর বিদ্যুৎ ছিল না চকরিয়ায় বেশির ভাগ পল্লী এলাকায়। রাতে কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ এলেও ঈদের সকালে আবার চলে যায়। ঈদের নামাজের কিছু সময় আগে বিদ্যুৎ এলেও নামাজ শেষ হওয়ার আগেই আবার চলে যায়। ফলে ঈদের খুতবা চলাকালে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। পরে খবর নিয়ে জানা গেল একই চিত্র ছিল চকরিয়ার অন্যান্য এলাকায়ও। ঈদের পরের দিন গত রোববার পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যেন বিদ্যুৎ আসে আধাঘণ্টার জন্য আর যায় দুই-তিন ঘণ্টার জন্য।
এ দিকে বিদ্যুতের নিত্য ভেল্কিবাজিতে প্রায়ই নষ্ট হচ্ছে বাসাবাড়ির মূল্যবান ইলেকট্রনিক সামগ্রী। আবার অনেকে বিদ্যুৎ সংরক্ষণের আশায় আইপিএস স্থাপন করলেও বিদ্যুতের সরবরাহের স্থায়ীত্ব সময় কম হওয়াতে আইপিএসগুলোতে চার্জ হয় না বলে জানিয়েছেন এসব এলাকার ভুক্তভোগী একাধিক বাসিন্দা। এলাকাবাসীর অভিযোগ পিডিবির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুতের সরবরাহ অত্যধিক থাকলেও পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন এলাকাগুলোতেই যত সমস্যা।
সম্প্রতি বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে চকরিয়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: মোছাদ্দেকুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, ঈদের কয়েক দিন আগে চকরিয়ার হাজিয়ান এলাকায় ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের একটি খুঁটি নদীতে বিলীন হয়। ফলে সরবরাহ লাইন বন্ধ রেখে কাজ করতে হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় একটি মাত্র গ্রিড লাইন এবং চকরিয়া থেকে তা ৬০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় বিবষটির সমাধান করতে বেশ সময় লাগে। তিনি বলেন, স্থানীয় জনগণের সহায়তা না পেলে হয়তো তা সমাধান করতে আরো দুই দিন লেগে যেত। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ায় প্রায়ই বিভিন্ন লাইন, সেকশন বাতসের কারণে বা অন্যান্য কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বিভিন্ন লাইন বন্ধ রাখতে হয়। ফলে জনগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া যায় না। এর পেছনে পুরনো সঞ্চালন লাইনকেও তিনি দায়ি করেন। চকরিয়ার বরইতলীতে একটি নতুন সাব-স্টেশন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেটি হলে হয়তো কিছু এলাকার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement