২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নোংরা পানিতে নিত্য বসবাস শ্যামপুর-কদমতলীবাসীর

রাজধানীর শ্যামপুর কমিশনার রোডের বাসিন্দাদের সারা বছরই নোংরা পানি ভেঙে চলাচল করতে হয় : নাসিম শিকদার -

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়াগামী মহাসড়কের পাশেই শ্যামপুর কদমতলীর মুরাদপুর। মহাসড়ক থেকে মুরাদপুর লাল মিয়া সরকার রোডে ঢোকার পথেই ময়লার স্তূপ। সাথে জমে থাকা নোংরা পানি। রাস্তার এ প্রবেশমুখে নিয়মিত যানজট লেগে থাকে। সড়কের কিছুদূর ঢালাই দেয়া হয়েছে। এরপর বালুর রাস্তা। তবে কিছুদিন আগেও এ বালুর রাস্তা ছিল না। সম্প্রতি এলাকার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে রাস্তায় বালু ফেলে কোনো রকমে চলাচলের উপযোগী করেছেন। তবে সবটুকু রাস্তা এখনো চলার উপযোগী হয়নি। কিছু পথ পেরোলেই নোংরা কালো পানি। রাস্তার এ নোংরা পানির মধ্য দিয়ে রিকশাও যেতে পারে না। রাস্তার দু’পাশের অলিগলিতেও নোংরা পানি। শিশু-কিশোরদের হেঁটে যেতে হয় স্কুলে। ফলে তাদের পায়ে বাসা বেঁধেছে নানা চর্মরোগ। শুধু মুরাদপুরই নয়, নোংরা পানির মধ্যে দিনরাত বসবাস করতে হচ্ছে রাজধানীর শ্যামপুর-কদমতলীর কয়েক লাখ বাসিন্দাকে। দীর্ঘ দিন থেকে এ সমস্যা চলে এলেও সমাধানে দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি একটি প্রকল্পের অধীনে ডিএনডি এলাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। এ ছাড়া স্থানীয় এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার উদ্যোগে ড্রেন-নালা পরিষ্কার ও পানির পাম্প স্থাপন করে জলাবদ্ধতা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সরেজমিন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জুরাইন, সবুজবাগ, মিষ্টির দোকান মোড়, মুরাদপুর, মেডিক্যাল রোড, কুদারবাজার, কাপ্তানপাড়া, সরাই, ছাপড়া মসজিদ, ঋষিপাড়া, কালারবাজার, আদর্শ কলেজ রোড, মদিনা মসজিদ রোড, অনির্বাণ ক্লাব রোড, মাঈনউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় এলাকা, মোহাম্মদবাগ, মেরাজনগর, নামা, সালাউদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার সড়ক, অলিগলি, স্কুল-মাঠ, মন্দিরসহ সর্বত্রই পানি আর পানি। এলাকার বাসিন্দারা বাসা থেকে বের হতেই কালো নোংরা দুর্গন্ধময় পানির মধ্যে পড়েন। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ওই এলাকার মধ্য দিয়ে শ্যামপুর খাল, সবুজবাগ খাল ও তিতাস খাল নামে তিনটি খাল প্রবাহমান ছিল। কিন্তু এখন ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি। ৮০-এর দশকে সেচের জন্য ডিএনডি এলাকা নির্ধারণ করা হলেও প্রভাবশালীরা খাল দখল করে গড়ে তুলেছেন বাড়ি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। যার দায়ভার বহন করতে হচ্ছে সবাইকে। পানি অপসারণের পথ না থাকায় সব সময় জলাবদ্ধতা থেকে যাচ্ছে।
মোহাম্মদবাগ চৌরাস্তা এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, এ এলাকায় ১০ বছর ধরে বাস করছি। কিন্তু সমস্যা আরো অনেক পুরনো। নোংরা পানি সব সময় রাস্তায় জমে থাকে। এতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। পথচারীদের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। আর একটু বৃষ্টি হলেই মেরাজনগর বাজারেও পানি জমে যায়। তখন এলাকাবাসীর ভোগান্তির শেষ থাকে না।
মুরাদপুর মুফতি সাহেবের বাসায় ভাড়া থাকতেন আল আমিন। কিন্তু গত এক মাস আগে তিনি ওই এলাকা ছেড়ে ধনিয়ায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন। আল আমিন বলেন, শিশুদের স্কুলে যাতায়াতে সমস্যা হয়। এ জন্য এলাকা ছেড়ে চলে গেছি। তা ছাড়া রাস্তা দিয়েও হাঁটাও যায় না। পায়ে চর্ম রোগ হয়ে গেছে। রিকশা চলাচল করতে পারেনা। জরুরি কোনো প্রয়োজনে হাসপাতালে কাউকে নিতে গেলে তখন ভোগান্তি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। কদমতলী থানার পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডি কে সমির বলেন, এলাকায় সাতটি মন্দির রয়েছে। কিন্তু এগুলোতে সব সময় পানি জমে থাকতো। এতে সমস্যা হতো। সম্প্রতি স্থানীয় এমপি পানি সেচের জন্য পাম্প বসানোর কারণে এখন পানি কমে গেছে। মানুষ মন্দিরে আসতে পারছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে শ্যামপুর-কদমতলীর বাসিন্দারা কষ্টে আছেন। বিষয়টি আমাদেরও খারাপ লাগে। এ জন্য গত জানুয়ারি থেকে সরকার ডিএনডি এলাকার উন্নয়নে ৫৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। এ ছাড়া অস্থায়ীভাবে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে আমরা ১০টি টিম গঠন করেছি। তারা বিভিন্ন এলাকার ড্রেন ও খাল পরিষ্কার করছে। সেনাবাহিনী ও ঢাকা ওয়াসার সহযোগিতায় ইতোমধ্যে ১০টি পাম্প স্থাপন করে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আশা করছি আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এ এলাকায় আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement