১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিবিএফএ অ্যাওয়ার্ড

জনপ্রিয়তায় সেরা শা‌কিব-পরীমনি, জিৎ-ঋতুপর্ণা

জনপ্রিয়তায় সেরা শা‌কিব-পরীমনি, জিৎ-ঋতুপর্ণা - ছবি : সংগৃহীত

জমাকালো আয়োজনে শেষ হলো টিএম ফিল্মস নিবেদিত ‘ভারত-বাংলাদেশ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস (বিবিএফএ)’-এর প্রথম আসর। বর্ণাঢ্য এ আ‌য়োজ‌নে জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন শাকিব খান ও পরীমনি এবং ভারতের জিৎ ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। সোমবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের নবরাত্রী মিলনায়তনে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

এতে আজীবন সম্মাননায় সম্মানিত করা হয়েছে গুণী অভিনেত্রী আনোয়ারা বেগমকে। পাশাপাশি একই পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। টিএম ফিল্মস নিবেদিত এ পুরস্কার উৎসবের উদ্যোক্তা ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া ও বসুন্ধরা গ্রুপ। জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দি‌য়ে শুরু হয় এই আ‌য়োজন। এরপর দেখানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র। প্রদান করা হয় আজীবন সম্মাননা।

পুরস্কার প্রদানের ফাঁকে ফাঁকে নাচ, গান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ ও ভারতের জনপ্রিয় শিল্পীরা। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ভারতের জি-বাংলা ও বাংলাদেশের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ। মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে এটিএন বাংলা ও গানবাংলা টেলিভিশন। ইভেন্ট পার্টনার ওয়ান মোর জিরো। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন কলকাতার মীর আফসার আলি, শাহরিয়ার নাজিম জয়, শান্তা জাহান ও গার্গি রায় চৌধুরী।

প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ। আরও উপস্থিত ছিলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড.মাহফুজুর রহমান, ফিল্ম ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার সভাপতি ফেরদাউসুল হাসান ও বিবিএফএ এর সমন্বয়ক তপন রায়, পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা গৌতম ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, টিএম ফিল্মসের চেয়ারপার্সন ফারজানা মুন্নী ।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একই ভাষায় কথা বলি। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। কিন্তু রাজনৈতিক সীমারেখা আমাদেরকে বিভক্ত করেছে। আমাদের ভাষা সংস্কৃতি জলবায়ু ও কিন্তু একই। কিন্তু আমাদের মধ্যে এ ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান নিশ্চয় আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ করবে। এ কারনেই আজকের আয়োজন। এ ধরনের আয়োজন সংস্কৃতি চর্চা চলচ্চত্র নির্মাণের চর্চার দিক থেকে আমাদের সংস্কৃতিকে আরও বেগবান করবে। চলচ্চিত্র জীবনের কথা বলে, মানুষকে কাঁদায়, হাসায়, চলচ্চিত্র চিন্তার দুয়ার খুলে দেয়। আমার বিশ্বাস এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আমাদের সম্পর্ক আরেক নতুন এক মাত্রা উন্মোচন করবে।’

কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা গৌতম ঘোষ বলেন, ‘সিনেমার যে সময় সেটা আশ্চার্য ম্যাজিক। যেটা এক হাজার বছরের গল্প দু বছরে বলা যায়। পাঁচ মিনিটের গল্প দুই ঘণ্টায় বলা যায়। সিনেমায় আমরা সময়কে সংকুচিত করতে পারি। আবার প্রসারিত করতে পারি। এক আশ্চার্যজনক মাধ্যমে আমরা কাজ করি। সিনেমা কি সত্যি দুই বাংলার মানুষের মধ্যে প্রীতি ও মিলন বয়ে আনতে পেরেছে কী? এটা নিয়ে একটা লেখা আরও আগেই লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়ের কারণে হয়ে উঠেনি। সিনেমা আমাদের একত্রিত করে দিবে, মানুষের মধ্যে আর কোন বিভেদ থাকবে না। সিনেমা যে কাজটা করতে পারে সেটা হলো আমাদের স্মৃতিমালাকে একত্রিত করতে পারে। আর সেই প্রত্যাশাই রইলো।’

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটক মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলার দারুণ এক সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। আমাদের দুই বাংলার ইতিহাস ও সম্প্রতি এ আয়োজনের মধ্য আরও দৃঢ হবে। এই ঢাকা শহরে ১৯৬৫ সালে প্রথম চলচ্চিত উৎসবের আয়োজন হয়েছিল। যেখানে সত্যজিৎ রায় উপস্থিত ছিলেন। এই শহরেই আবার তেমন একটিঅনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। এটা বেশ আনন্দের। দুই বাংলার সংস্কৃতিতে একটা সময় অস্থিরতা ছিল। কিন্তু সেটা সময়ের সাথে সাথে দূর হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে তা আরও দৃঢ় হবে। সিনেমা তো শিল্পী, একে চর্চা করতে হয়। এছাড়া তো একে আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কেন পথ নেই। আগে কিন্তু একটা সময় ছিল, ভালো কাজ হলে দুই বাংলাতেই টের পাওয়া যেত। কিন্তু এখন অর সেটা হয় না। এক ধরনের ভালো কাজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।’

অনুষ্ঠানে জুরিবোর্ডের সদস্য বাংলাদেশের আলমগীর, কবরী, ইমদাদুল হক মিলন, খোরশেদ আলম খসরু ও হাসিবুর রেজা কল্লোল ও অন্যদিকে, ভারতের গৌতম ঘোষ, ব্রাত্য বসু, গৌতম ভট্টাচার্য, অঞ্জন বোস ও তনুশ্রী চক্রবর্তীর হাতে শুভেচ্ছা ক্রেস্ট প্রদান করেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

 

আজীবন সম্মাননায় ভূষিত আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এ ধরণের একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ। দুই বাংলা মিলিয়ে এতো এতো তারকা থাকতে আমাকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হবে এটা আমি কখনো ভাবিনি। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা।’

রঞ্জিত মল্লিক বলেন, ‘বাইশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাদেরই এ আয়োজন প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ আয়োজন যেন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে। যৌথভাবে সিনেমা নির্মাণের যে প্রয়াস চলছে, তা যেন আরও বেগবান হয়। আরেকটা কথা না বললেই নয়, আমি পৃথিবীর বহু দেশে ঘুরেছি, কিন্তু বাংলাদেশে আসলে যে আতিথেয়তা পাই তা পৃথিবীর আর কোথাও পাই না।’

অনুষ্ঠানে পুরস্কার পেলেন যারা : বর্ষসেরা জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খান (বাংলাদেশ) ও ভারতের জিৎ (ভারত)। জনপ্রিয় নায়িকা- পরীমনি (বাংলাদেশ) ও ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (ভারত)।সেরা প্রধান চরিত্র (পুরুষ)- সিয়াম (বাংলাদেশ) ও প্রসেনজিৎ (ভারত)। সেরা প্রধান চরিত্র (নারী)- জয়া আহসান (বাংলাদেশ) ও পাওলি দাম (ভারত)।  সেরা চলচ্চিত্র- ‘দেবী’ (বাংলাদেশ) ও ‘নগর কীর্তন’ (ভারত)। সেরা পরিচালক- নাসির উদ্দীন ইউসুফ (বাংলাদেশ) ও সৃজিত মুখার্জি (ভারত)। জনপ্রিয় চলচ্চিত্র- পাসওয়ার্ড (বাংলাদেশ) ও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন (ভারত)।

সেরা পার্শ্বচরিত্রাভিনেতা- ইমন (বাংলাদেশ) ও অর্জুন চক্রবর্তী (ভারত)। সেরা পার্শ্বচরিত্রাভিনেত্রী- জাকিয়া বারী মম (বাংলাদেশ) ও সুদীপ্তা চক্রবর্তী (ভারত)। সেরা পাণ্ডুলিপিকার- ফেরারী ফরহাদ (বাংলাদেশ) ও পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (ভারত)। সেরা সিনেমাটোগ্রাফার- কামরুল হাসান খসরু (বাংলাদেশ) ও গৈরিক সরকার (ভারত)। ভিডিও সম্পাদনা- তৌহিদ হোসেন চৌধুরী (বাংলাদেশ) ও সংলাপ ভৌমিক (ভারত)। সেরা সংগীত পরিচালক- হৃদয় খান (বাংলাদেশ) ও বিক্রম ঘোষ (ভারত)। সেরা প্লে-ব্যাক গায়ক- ইমরান (বাংলাদেশ) ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য (ভারত)। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা- যৌথভাবে সোমনুর মনির কোনাল ও ফাতেমাতুজ জোহরা ঐশী (বাংলাদেশ) এবং নিকিতা নন্দি (ভারত)। বিশেষ জুরি পুরস্কার- তাসকিন রহমান ও বিদ্যা সিনহা মীম (বাংলাদেশ) এবং রুদ্র নীল রায় ঘোষ, আবীর চ্যাটার্জি ও নবনী (ভারত)। আজীবন সম্মাননা- আনোয়ারা বেগম (বাংলাদেশ) ও রঞ্জিত মল্লিক (ভারত)।


আরো সংবাদ



premium cement