২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ভালো কাজ অল্প হলেও মনে প্রশান্তি লাগে : মাহি

ভালো কাজ অল্প হলেও মনে প্রশান্তি লাগে : মাহি - ছবি : সংগৃহীত

২০১২ সালে ‘ভালোবাসার রঙ’সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র অভিষেক হওয়ার পর মাহিয়া মাহিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাঝখানে বিয়ের সিদ্ধান্তে অভিনয়ে ভাটা পড়লেও জনপ্রিয়তা এতটুকুন কমেনি। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নয়া দিগন্তের সাথে।

ইদানিং চলচ্চিত্রে আপনি আগের মতো নিয়মিত নন, দর্শকপ্রিয়তা আগের মতোই আছে। এর কারণ কি বলে মনে হয় আপনার?
মাহি : সিনেমার কারণেই আমার ক্যামেরার সামনে দাড়ানোর সুযোগ হয়েছিলো। তখনই আমাকে অনেকে বলেছিলো ছবি মুক্তির পর পরিচিতি অনেক বাড়বে, কিন্তু কখনো তাদের ওই কথা বিশ্বাস করিনি। আমার সিনেমা দেখতে মানুষ প্রেক্ষাগৃহে যাবে, সেটাও কখনো চিন্তা করিনি। তবে ছবি মুক্তির পর আগের চিন্তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহে ভীর করে ছিলো আমার সিনেমা দেখতে। এই ভালোবাসার প্রধান করাণ হলো, আমি অনেক ভাগ্যবান। তাদের ভালোবাসা আর ভাগ্যের কারণেই আমি একাধিক হিট ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি।

আপনি অনেক নারীকেন্দ্রীক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এটা কি পরিকল্পিত ছিলো?
মাহি : না, কাকতালিয়ভাবে হয়েগেছে। তবে এটাও ঠিক, নারীকেন্দ্রীক চলচ্চিত্রগুলোই আমার বেশি দেখা হয়, কারণ ‘পোড়ামন’ ও ‘অগ্নি’ নারী কেন্দ্রীক হওয়ার কারণেই হিট হয়েছে।

আপনি কি সব সময় সিনেমাতেই অভিনয় করতে চান?

মাহি : অভিনেত্রী হবো এটাই কখনো চিন্তা করেনি। আমি টিভিতে প্রচুর নাটক ও সিনেমা দেখতাম। সেখানে নারীকেন্দ্রীক চরিত্রগুলোতে বাড়ির ক্ষমতাধর নারীর ছবি ঘরের দেয়ালে ঝুলানো থাকতো। আমি চাইতাম বাড়িতে আমার একটি ওইরকম ছবি টানানো থাকুক। এই চিন্তা থেকেই আশীষ সেনগুপ্তের কাছে গিয়ে ছিলাম ফটোশুট করতে। ছবি তোলার পর তিনি আমাকে বললেন, অনেক সুন্দর হয়েছে। আমার মনে হয়, এগুলো কোনো পরিচালকের কাছে পাঠানো উচিত। এরপর প্রযোজনা সংস্থা জাজ মাল্টিমিডিয়া থেকে প্রথম ফোন আসে। তখন মাকে বলেছিলাম, একটি নাটকের প্রস্তাব পেয়েছি। পরবর্তীতে পরিচালক আমাকে বললেন এটা আসলে সিনেমার প্রস্তাব।

সাধারণত  ভাবা হয়, কোনো নতুন অভিনেত্রীর যদি পূর্ব থেকে শিল্প সংশ্লিষ্ট না হন, তবে টিকে থাকতে নিজের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি প্রয়োজন হয়। আপনি কি তাই মনে করেন?

মাহি : অবশ্যই, ইচ্ছাশক্তি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে, আমার ক্ষেত্রে ‘ভাগ্য’ একটি কারণ ছিলো। আমার প্রথম কাজ ছিলো জাজ মাল্টিমিডিয়ার সাথে। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন বছর আমি জাজ ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করিনি।

আপনি কি চুক্তির কারণে প্রথম তিনবছর তাদের সাথে কাজ করতে বাধ্য ছিলেন?
মাহি : একদমই না; এরকম কোনো চুক্তি ছিল না। তারাই আমাকে প্রথম কাজের সুযোগ দিয়ে ছিল এবং সময়ের সাথে সাথে তারা আমার পরিবারের মতো হয়ে যায়। জাজের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী হওয়ার কারণেই অন্য কোথাও কাজ করা হয়নি। যখন মনে হয়েছে, নিজস্ব জায়গা তৈরী করতে পেরেছি, তখন অন্যদের সাথেও কাজ করা শুরু করি।

জাজ থেকে বেরিয়ে আসার সময় বেশ কলহ সৃষ্টি হয়েছিলো, এটা আসলে কেন?
মাহি : কলহটা হয়ে ছিলো ভুল বোঝাবুঝির কারণে। এরপর থেকে আমি তাদের সাথে কাজ করি না। তবে জাজ ছাড়ার পরেও ‘অগ্নি-২’ ছবির শুটিং করেছি।

এক পর্যায়ে আপনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে দেয়ার কথা চিন্তা করে ছিলেন। এটা কি ঠিক ছিলো?
মাহি : জাজ ছেড়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, আর সিনেমা করব না। তখন আমি স্নাতক শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ছিলাম। তবে পনের দিনের মধ্যেই বুঝতে পেরে ছিলাম, দীর্ঘদিন সেখানে আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়।

সব কিছুই আপনি সরলভাবে বলে দিলেন। ভালোবাসার কথা জিজ্ঞেস করলেও কি এমন সরল জবাব দিবেন?
মাহি : বিয়ের কয়েক দিন আগেও জানতাম না আমি বিয়ে করবো। হঠাৎ করেই সবকিছু ঘটে গেল। একদিন অস্পষ্টভাবেই অপু আমাকে জানিয়েছিল, সে বিয়ের পরিকল্পনা করেছে। পরে সে জানায়, যদি আমি চলচ্চিত্রে না থাকতাম তবে সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতো। তখন ওকে বললাম, চলচ্চিত্র ছাড়তে পারি যদি আমাদের বিয়েটা দ্রুত হয়। তখন হাতে কিছু কাজ ছিলো, ওগুলো শেষ করার জন্য দুই মাস সময় প্রয়োজন ছিলো। অপু বললো, দুই মাস অপেক্ষা করার দরকার নেই। এরপর দুই পরিবারের আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, ছোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আকদ হবে আমাদের।

এখন কি মনে হয়, দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রের সাথে থাকবেন?
মাহি: সত্যি বলতে , এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিশ্চিত করে দিতে পারবো না। জীবন নিয়ে আমি খুব বেশি পরিকল্পনা করি না। এমনও হতে পারে একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বললাম, এখন থেকে আর চলচ্চিত্রের সাথে থাকব না। তবে আমার মনে হয় এমনটা ঘটবে না। কারণ আমি অভিনয়কে উপভোগ করি। মাঝে মাঝে এটা আমার যন্ত্রণার কারণ হয়, তাও আমি এটা ছাড়তে পারি না।

চলচ্চিত্রের সঙ্কটের মধ্যে আপনি এসে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। কিন্তু চলচ্চিত্র এখনও সঙ্কটের মধ্যেই রয়েছে। এর কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
মাহি : আমাদের এখানে ভালো প্রযোজনা সংস্থার অভাব রয়েছে। আমি যখন বাপ্পির সাথে প্রথম ছবিতে অভিনয় করেছি, জাজ তখন ঝুঁকি নিয়ে ছিল। এরকম ঝুঁকি নেয়ার মতো আরো প্রযোজনা সংস্থার দরকার। অনেক প্রযোজনা সংস্থা এখন তাদের বাজেট কমিয়ে দিয়ছেন, টাকা ফেরত আসবে কিনা এই চিন্তা করে। এতে চলচ্চিত্রের মান ঠিক থাকে না। ভালো সিনেমার পাশাপাশি প্রেক্ষাগৃহ গুলোর সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছে।

আপনার পরবর্তী পরিকল্পনা কী ?
মাহি : সম্প্রতি নতুন দুটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। একটির শুটিংও শুরু হয়েছে। তবে আমি মানহীন কাজ করে সংখ্যা বাড়াতে চাই না, ভালো কাজ অল্প হলেও মনে প্রশান্তি লাগে।

চলচ্চিত্র তারকাদের নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প শোনা যায়। আপনি এগুলোকে কিভাবে দেখেন?
মাহি : আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, মুখরোচক গল্পের অর্ধেক সত্য, আর অর্ধেক মিথ্যা। তবে সত্যি বলতে কি, ওইসব গল্পকে আমি পাত্তা দেই না। যদি দেখি আমাকে নিয়ে লোকজন নানা রকম কথা বলছে, তবে আমি চোপ থেকে সময়টা উপভোগ করি। কারণ লোকজন যদি দেখে গুজবের কারণে আমি ভেঙ্গে পরছি তবে তাদের ভ্রান্ত ধারণাই প্রতিষ্ঠা পাবে। তারা যদি দেখেন, আমি ওসব পাত্তা দিচ্ছি না তবে গুজব ওখানেই শেষ হবে।

সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
মাহি : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল