২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

২৫ বছরের মানুষটির চলে যাওয়ার ২৩ বছর

২৫ বছরের মানুষটির চলে যাওয়ার ২৩ বছর - ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে নতুন এক ধারা সৃষ্টি করে ছিলেন সালমান শাহ। এই অভিনেতার কারণেই ঢাকাই চলচ্চিত্র নতুনভাবে জনপ্রিয় হতে শুরু করে ছিলো। কিন্তু হঠাৎ তার চলে যাওয়ার ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি বিএফডিসি। পরিণতি কি? সেটা এখন দৃশ্যমান। ভালো চলচ্চিত্র না পেয়ে দেশীয় সিনেমা থেকে আগ্রহ হারিয়েছে দর্শক। মাঝখানে মান্না কিছু ভালো ছবি উপহার দিয়ে শূণ্যস্থান পূরণের চেষ্টা করেছিলেন। তিনিও চলে গেছেন হঠাৎ। এখন শাকিব খান ভালো ছবি উপহার দিলেও সার্বিকভাবে চলচ্চিত্রের বাজার ভালো নয়।

এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ঠরা বলেছেন, সালমান শাহ পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্র বাজারে যে মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছিলো তা কাটিয়ে উঠতে প্রযোজক-পরিচালকরা নীতি-নৈতিকার দিকে খেয়াল না রেখেই ছবি বানিয়েছেন। এতে সাময়িকভাবে লাভের মুখ দেখা গেলেও দীর্ঘ মেয়াদি নীতিবাচক প্রভাব পরেছে। এখন আর পরিবার নিয়ে একসাথে সিনেমা দেখতে কেউ প্রেক্ষাগৃহে যায় না। এ প্রসঙ্গে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘বাংলাদেশী চলচ্চিত্র প্রেমীদের সামনে সালমান শাহ নতুন দিগন্তের সাক্ষী হিসেবে এসেছিলেন। এখনকার সময়ে যে আধুনিকতা সালমান তখনই তার সিনেমায় সেটা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। এই অবস্থা থেকে দর্শকরা আর পিছনে যেতে পারেনি। তাই মাঝখানে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের দর্শক অনেক কমে গেছে।’ গুলজার বলেন, ‘প্রতিবছর ৬ সেপ্টেম্বর আসলেই চোখে পানি আসে, সালমানের কথা মনে পরে, এতো অল্প দিনের জন্য সে কেনো এসেছিলো’।

সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এই অভিনেতার চলে যাওয়ার ২৩ বছর হয়ে গেছে। মৃত্যুর ২৩ বছর পরেও আজ শুক্রবার দারুণ উপস্থিতি সালমান শাহর। আজও যেন এই বাংলায় তিনি জনপ্রিয়তম নায়ক। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান বয়েসী মানুষের ওয়ালে ভেসে উঠেছে সালমান শাহর ছবি। দেখা যাচ্ছে আবেগাপূর্ণ সব কথা। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের ফেসবুক পেজে সালমান শাহর উজ্জ্বল উপস্থিতি। অভিনেতা অপূর্ব ৩টি আলাদা ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘কিংবদন্তির কখনো মৃত্যু নেই, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি এই কিংবদন্তি নায়ককে।’ অভিনয়শিল্পী জামশেদ শামীম সালমান শাহর একটি স্কেচ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘সালমান শাহ...ঢাকাই চলচ্চিত্র ইতিহাসের একটি আফসোস!’ সাবরিনা সুলতানা সোনিয়া লিখেছেন, ‘১৯৯৬ সালের এই দিনে আমার প্রথম ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছিল, আজও মনে দাগ কেটে আছে।’ এমন আরও অসংখ্য মন্তব্য–ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে অনলাইন দুনিয়ায়।

এসেছিলেন ’৭১–এ, চলে গেলেন ’৯৬–তে। মাত্র ২৫ বছর। গড় আয়ুরও তুলনায় একেবারেই নগণ্য বয়স। এত অল্প সময়ে কেন চলে গেলেন তিনি, কেন চলে যেতে হলো, সে রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি। চলছে বিচার। 

সালমান শাহ তখন থাকতেন রাজধানী ঢাকার নিউ ইস্কাটন রোডের ইস্কাটন প্লাজার একটি ফ্ল্যাটে। সেদিন সকাল সাতটায় বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ছেলে শাহরিয়ার চৌধুরী ইমনের সাথে দেখা করতে ইস্কাটনের বাসায় যান। কিন্তু ছেলের দেখা না পেয়ে তিনি ফিরে আসেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী বলেন, বাসার নিচে দারোয়ান সালমান শাহর বাবাকে তার ছেলের বাসায় যেতে দিচ্ছিলেন না। নীলা চৌধুরীর বর্ণনা ছিল এ রকম, ‘বলেছে স্যার এখন তো ওপরে যেতে পারবেন না। কিছু প্রবলেম আছে। আগে ম্যাডামকে (সালমান শাহর স্ত্রীকে) জিজ্ঞেস করতে হবে। একপর্যায়ে উনি (সালমান শাহর বাবা) জোর করে ওপরে গেছেন। কলিংবেল দেয়ার পর দরজা খুলল সামিরা (সালমান শাহর স্ত্রী)। উনি (সালমান শাহর বাবা) সামিরাকে বললেন, ‘ইমনের (সালমান শাহর ডাকনাম) সাথে কাজ আছে, ইনকাম ট্যাক্সের সই করাতে হবে। ওকে ডাকো।’ তখন সামিরা বলল, ‘ও তো ঘুমে।’ তখন উনি বললেন, ‘ঠিক আছে আমি বেডরুমে গিয়ে সই করিয়ে আনি।’ কিন্তু যেতে দেয়নি। আমার হাজব্যান্ড ঘণ্টা দেড়েক বসে ছিল ওখানে।’

বেলা এগারোটার দিকে একটি ফোন আসে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর বাসায়। ওই টেলিফোনে বলা হলো, সালমান শাহকে দেখতে হলে তখনই যেতে হবে। টেলিফোন পেয়ে নীলা চৌধুরী দ্রুত ছেলে সালমান শাহর বাসার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তবে সালমানের ইস্কাটনের বাসায় গিয়ে ছেলে সালমান শাহকে বিছানার ওপর দেখতে পান নীলা চৌধুরী। এ বিষয়ে তার বক্তব্য ছিল, ‘খাটের মধ্যে যেদিকে মাথা দেওয়ার কথা, সেদিকে পা। আর যেদিকে পা দেয়ার কথা সেদিকে মাথা। পাশেই সামিরার (সালমান শাহর স্ত্রী) এক আত্মীয়ের একটি পারলার ছিল। সে পারলারের কিছু মেয়ে ইমনের হাতে-পায়ে সরিষার তেল দিচ্ছে। আমি তো ভাবছি ফিট হয়ে গেছে। আমি দেখলাম, আমার ছেলের হাত–পায়ের নখগুলো নীল। তখন আমি আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, আমার ছেলে তো মরে যাচ্ছে।’

ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে বলা হয়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তবে বিষয়টি এখনো বিচারাধীন। সালমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে না পারায় তার ভক্তদের মধ্যে তৈরি হয় নানা প্রশ্নের।

বরাবরই পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে। নীলা চৌধুরীর অভিযোগ ছিল, তারা হত্যা মামলা করতে গেলে পুলিশ সেটিকে অপমৃত্যুর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। পুলিশ বলেছিল, অপমৃত্যুর মামলা তদন্তের সময় যদি বেরিয়ে আসে যে এটি হত্যাকাণ্ড, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হত্যা মামলায় মোড় নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী নারায়ণগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি আহসান উল্লাহ ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার বিষয়ে ইউনূস সেন্টারের বিবৃতি আনোয়ারায় বর্তমান স্বামীর হাতে সাবেক স্বামী খুন, গ্রেফতার ৩

সকল