২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্মান নেই, এমন অভিভাবক হয়ে লাভ কী : শবনম

সম্মান নেই, এমন অভিভাবক হয়ে লাভ কী : শবনম - নয়া দিগন্ত

পাকিস্তান আমল থেকে অভিনয় করছেন শবনম। চরিত্রকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করে পেয়েছেন প্রশংসা। কিন্তু গত দেড় দশক ধরে তার নতুন কোন চলচ্চিত্রের খবর নেই। বরেণ্য এই অভিনেত্রী বলছেন, এরজন্য আমাদের চলচ্চিত্রের বর্তমান ব্যবস্থাপকরা দায়ী। তার অভিযোগ কোন কিছুই সঠিক নিয়মে চলছে না। কিন্তু প্রবীণ এই অভিনেত্রী নিজেই তো চলচ্চিত্রের অভিবাক। এ প্রসঙ্গে শবনম বলেন, এমন অভিভাবক হয়ে কী লাভ! কোনো সম্মান নেই। মারা গেলে এফডিসিতে নিয়ে যাবে, লাশ ফুলের তোড়া দেবে! এফডিসি কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো মূল্যায়ন করেনি। আমাদের ছাড়াই তো এফডিসি চলছে। সমিতিগুলো আরও জটিলতা তৈরি করেছে। ‘আম্মাজান’ ছবির কাজ করার সময় এফডিসিতে যাইনি। যেখানে আমার অন্য রকম এক জীবনের শুরু হয়েছিল, সেখানে এখন যাওয়ার নাম নিতে পারি না, বুঝতে পারছেন? এফডিসিকে এখন আমার কাছে কবরস্থান মনে হয়।

চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা নিয়ে তিনি এতটাই হতাশ যে, একে শিল্প বলতে তিনি রাজি নন। শবনম বলেন, এটা কিসের ইন্ডাস্ট্রি! এটাকে কীভাবে ইন্ডাস্ট্রি বলি আমরা? ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কিছু বলতে হয় বা লিখতে হলে তো আসবে এহতেশাম, মুস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, রহমান, এ জব্বার খান, শবনম, সুচন্দা, কবরী, ববিতা, রাজ্জাক, আলমগীর—প্রথম দিকে যাঁরা চলচ্চিত্রে এসেছিলেন, তাদের নাম নিতে হবে। এখন তো তাদের কেউ কোনো সম্মান করে না। কাকে আমার গল্প শোনাবেন! কী যে হচ্ছে, কিছুই বুঝছি না। তবে এই বিষয় গুলো নিয়ে তিনি কারো সাথে কথাও বলতে চান উল্লেখ করে বরণ্যে এই অভিনেত্রী বলেন, আমি চুপচাপ থাকতে পছন্দ করি। আমি জানি, এসব বলে কোনো লাভ হবে না। এই ইন্ডাস্ট্রির আসলে কিছুই হবে না। মাঝে এক শুক্রবার এফডিসির সামনে দিয়ে যাচ্ছি, গাড়ি ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। সাউন্ডের রুমের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছি। এফডিসির বেহাল এই অবস্থা মানতে পারিনি। রং নেই। চারদিকে আবর্জনা। যে এফডিসি আমাদের এত কিছু দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, কত মানুষের রুটিরুজি এখান থেকে, সেই এফডিসির এই হাল সত্যিই কষ্টের। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি, বেড়া দিয়ে রাখছে। কী অদ্ভুত!

নতুন অভিনেতা সম্পর্কে তার খুব একটা ধারণা নেই উল্লেখ করে শবনম বলেন, এখন কারা কাজ করছে, তাও তো জানি না। আগের মতো ‘চিত্রালি’ পত্রিকা নেই, সিনেমার খবরও রাখি না। সত্যি বলতে, কে আসছে, কে যাচ্ছে, কোন ছবিটা হিট হচ্ছে, কোনটা ফ্লপ—এখন আর এসব খবর জানা যায় না। তাই এসবের কিছুই জানি না।

নিজের অভিনীত শেষ ছবি আম্মাজান মুক্তির পর কোন শুটিং ফ্লরে জাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আম্মাজান’ সিনেমার শুটিংয়ের পর কোনো স্টুডিওতে যাইনি, কোনো অনুষ্ঠানেও যাইনি। অনেক ব্যাপার আছে, প্রাণখুলে সেসব বলতে পারছি না। পারব না। আর বলে লাভও হবে না। আমার মুখ পুরোপুরি বন্ধ। অনেক দিন দেশের বাইরে ছিলাম। দেশে আসার পর যা কিছু পেয়েছি, যা দেখেছি, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাই না। এর মধ্যে কোনো একদিন শুনবেন, আমি মরে গেছি। তখন এফডিসির লোকজন অস্থির হয়ে উঠবে, সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি তো আমার ছেলেকে স্পষ্ট বলে দিয়েছি, আমার লাশ যেন কোনোভাবেই এফডিসিতে না যায়। রবিন (রবিন ঘোষ, প্রখ্যাত সুরকার ও সংগীত পরিচালক, শবনমের স্বামী) সাহেবও বলে গিয়েছিলেন, তার লাশ সেখানে নেয়া হয়নি।

তবে সমসাময়িকদের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফেরদৌসী আপা (ফেরদৌসী রহমান) আর রুনা লায়লার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। হাদী ভাই (সৈয়দ আব্দুল হাদী), যাঁরা পুরোনো মানুষ, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তারা আমাকে সম্মান করেন, আমিও তাদের সম্মান করি। ববিতা, চম্পা, সুচন্দার সঙ্গে আলাপ হয়। এই তো কদিন আগে শফি বিক্রমপুরী ভাইয়ের বিবাহবার্ষিকীতে অনেকের সঙ্গে দেখা হলো। সেদিন মৌসুমী ছিল, ওমর সানী ছিল। তারা আমাকে খুব সম্মান করে, আমিও তাদের আদর করি। শাবনূরকে চিনি। শাবনূরের সঙ্গে ববিতার বাসায় একদিন দেখা হয়েছে। মৌসুমীর সঙ্গে ‘আম্মাজান’ ছবিতে অভিনয় করেছি। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয়। সাবিনা ইয়াসমীনের সঙ্গে দেখা হয় না। রুনা লায়লার সঙ্গে পাকিস্তান থেকে আমার সম্পর্ক। তার বড় বোন দিনা ছিল আমার বন্ধু। সেই সূত্রে রুনা আমার ছোট বোনের মতো।

এফডিসির সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুনেছি, এফডিসিতে এখন নাকি ১৭টি সংগঠনের কার্যালয় আছে। অথচ সিনেমার অবস্থা দেখুন। সিনেমার গল্প নিয়ে ভাবার সময় নেই। টেকনিক্যাল দিকে উন্নয়নের কোনো ভাবনা নেই। নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে কেউ ভাবছে? সবাই শুধু সংগঠন নিয়ে ব্যস্ত। যে চলচ্চিত্রকে নিয়ে সংগঠন, সেই চলচ্চিত্র যদি না থাকে, তাহলে এসব সংগঠনের কোনো প্রয়োজন আছে? এত সংগঠন থাকায় আজ চলচ্চিত্রের এই অবস্থা। এখনো আগের সময়ের সিনেমা নিয়েই আলোচনা হয়। তাহলে আমাদের কী উন্নতি হলো? আমি তো বলব, অবনতি হয়েছে। চলচ্চিত্রে আমাদের কত এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা কি হয়েছে? আমরা শুধু নিচেই নামছি।

এই সমস্যা থেকে উত্তরণ না হতে পারার বাঁধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের মতো মেধাবী পরিচালক নেই, গল্প লেখক নেই, টেকনিশিয়ান নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। এখন তো কেউ ক্যামেরা চালাতে পারলেই সিনেমা হয়ে গেছে মনে করেন। সিনেমা বানাতে হলে গল্প জানতে হবে, গল্প বুঝতে হবে, গান বুঝতে হবে, সম্পাদনা বুঝতে হবে—আরও কত–কী! এ সময়ের ছবির কথা বেশি দিন কেউ মনে রাখে না। গানগুলো মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারছে না। কারণ, বেশির ভাগই মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে অন্য কাজে বেশি মনোযোগী। অথচ যেটা আসল কাজ, সেটা তারা মন দিয়ে করছে না। আগে সবাই কাজ করত, তাই অন্যের পেছনে লেগে থাকার জন্য সময় ছিল না। কাজকে ইবাদত মনে করত, তাই তো এসব কাজ কালের সাক্ষী হয়ে আছে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় আমি সিনেমায় কাজ করেছি। ১৯৫৮ সালে প্রথম সিনেমায় কাজ শুরু করি। ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানে যাই। এরপর আবার দেশে এসে কাজ করেছি। অগণিত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এসবই আমাকে তৃপ্তি দেয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার

সকল