২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

দেশে পৌঁছেছে আমজাদ হোসেনের লাশ, রোববার জামালপুরে দাফন

দেশে পৌঁছেছে আমজাদ হোসেনের লাশ, রোববার জামালপুরে দাফন - সংগৃহীত

বরণ্যে চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক আমজাদ হোসেনের লাশ দেশে পৌঁছেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার লাশবাহী বিমান অবতরন করে। চলতি মাসের ১৪ তারিখ তিনি ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিমানবন্দর থেকে তার লাশ প্রথমে আদাবরে আমজাদ হোসেনের নিজ বাসায় নেয়া হয়। আত্মীয়-স্বজনরা শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পায় সেখানেই। রাতেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় বায়তুল আমান জামে মসজিদে। এরপর লাশ রাখা হয়েছে বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে।

শনিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে রাখা হবে আমজাদ হোসেনের লাশ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদেনের জন্য। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লাশ নিয়ে যাওয়া হবে এটিএন বাংলায়। তারপর তার প্রিয় কর্মস্থল এফডিসিতে নেয়া হবে। এফডিসিতে বাদ যোহর তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। সবশেষ তাকে চ্যানেল আইতে নেয়া হবে।

আমজাদ হোসেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী জামালপুরে নিজ জন্মস্থানে সমাহিত করা হবে তাকে। এ প্রসঙ্গে তার বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেন, ‘আমার মায়ের ইচ্ছা ছিল বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার। এ নিয়ে খবর বেরিয়েছিল পত্রিকায়। তারপর একটি ছেলে স্বঃপ্রণোদিত হয়ে একটি অডিও রেকর্ড আমাকে শোনায়। সেই অডিওতে বাবা স্পষ্ট বলেছেন মৃত্যুর পর যেন তাকে জামালপুরে সমাহিত করা হয়। কারণ তিনি মনে করতেন জামালপুরের মানুষই তাকে যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে। সেখানকার মানুষ তাকে যতটা ভালোবাসা দেবেন তার থেকে বেশি ভালোবাসা কেউ দিতে পারবে না। বাবা বলেছেন, প্রথম কবিতা লিখে তিনি জামালপুরেই সুনাম অর্জন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবার আত্মার সাথে জামালপুর কবরস্থান মিশে আছে। তিনি তার গোলাপী এখন ট্রেনে সিনেমায় কিন্তু জামালপুরের কবরস্থানকে দেখিয়েছেন। অডিও শোনার পর আমরা সিদ্ধান্ত বদলেছি। কারণ আমি শুনেছি ধর্মমতে মৃত্যুর আগে মানুষের বলে যাওয়া শেষ ইচ্ছা পূরণ করা উচিত।’

দোদুল বলেন, ‘আমরা তারা ছেলেরা আদৌ হয়ত তার মতো পর্যায়ে যেতে পারব না। জামালপুরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আমজাদ হোসেনকে বাঁচিয়ে রাখবেন সম্মানের সাথে।’

জামালপুরে সমাহিত করা হলে শনিবার দাফন করা সম্ভব হবে না। সেজন্য রোববার (২৩ ডিসেম্বর) দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে জানান দোদুল।

বরেণ্য চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন ১৮ নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোক করেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রথমদিন থেকেই তাকে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে।

২০ নভেম্বর আমজাদ হোসেনের দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।প্রধানমন্ত্রী সেসময় আমজাদ হোসেনের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৮ নভেম্বর রাতে আমজাদ হোসেনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে। সেখানেই এতদিন ধরে চিকিৎসা চলছিল আমজাদ হোসেনের। ব্রেন স্ট্রোকের কারণে তৈরী হওয়া সম্ভাবনা ছাড়াও শরীরের বাইরে এবং ভেতরে ইনফেকশন ছিল তার।

বিশিষ্ট অভিনেতা, লেখক এবং চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন ১৯৬১ সালে ‘হারানো দিন’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে আসেন। পরে তিনি চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। তার পরিচালিত প্রথম ছবি আগুন নিয়ে খেলা (১৯৬৭)। পরে তিনি নয়নমনি (১৯৭৬), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), ভাত দে (১৯৮৪) দিয়ে প্রশংসিত হন।

গোলাপী এখন ট্রেনে ও ভাত দে চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কারেও ভূষিত করে।

এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন গুণী এই মানুষটি।


আরো সংবাদ



premium cement