ববিতার চোখে আমজাদ হোসেন
- আলমগীর কবির
- ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:৩৩, আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:৪৩
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস বলতে গেলে যে কয়েকটি চলচ্চিত্রের নাম অবধারিতভাবে চলে আসবে তারমধ্যে আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র থাকবেই। তবে এই মানুষটির সৃজনশীল জগতে প্রবেশ লেখালেখির মাধ্যমে। অসাধারণ লেখার হাত ছিল তার। এরপর আগুণ নিয়ে খেলা ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আবির্ভাব। আবার তোরা মানুষ হ, নয়ন মনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, জন্ম থেকে জ্বলছি, হীরামনি, ভাত দে, দুই পয়সার আলতা বিভিন্ন ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের স্রষ্টা তিনি। ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘জীবন থেকে নেওয়া’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন আমজাদ হোসেন।
চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্র পরিচালনা, গীত রচনা সহ নানা বিভাগে মোট ১৪বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এছাড়া সামগ্রিক অবদানের জন্য পান একুশে পদক। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং শিশু একাডেমী পুরস্কার। বাংলাচলচ্চিত্রের এবং সাহিত্যের গুণী এই মানুষটি না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৪ ডিসেম্বর। তার এই মৃত্যুকে বাংলা চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেছেন গোলাপী এখন ট্রেনে ছবির নায়িকা ববিতা।
তিনি বলেন, কতো কতো স্মৃতি আমজাদ ভাইয়ের সাথে। উনার সাথে আমি বহু ছবিতে কাজ করছি। তার নির্দেশনায় বেশকিছু হিট ছবি আছে আমার। তার মৃত্যু সংবাদ বেদনার, খুবই দুঃখের। তার মতো এমন জিনিয়াস মানুষ আমি জীবনে খুব কম পেয়েছি। তার আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করি। এমনটা বলেই আবারও দীর্ঘশ্বাস গোলাপীর!
সম্প্রতি আমজাদ হোসেন ব্রেইন স্ট্রোক করে রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি হলে ২১ নভেম্বর সেখানে তাকে দেখতে গিয়েছিলেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ খ্যাত অভিনেত্রী ববিতা। সেটাই ছিলো এই কিংবদন্তির সাথে তার শেষ দেখা। কথা হয়নি যদিও, দূর থেকে বহুক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন। এমনটাই বললেন ববিতা।
এরআগে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ নিয়ে নিজের মুগ্ধতার কথা জানিয়েছিলেন ববিতা। ছবিটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ তো সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের গল্প। যেসময় মুক্তি পায় সেসময়ের প্রতিটি গ্রাম বাংলার মানুষের গল্প। ছবির প্রত্যেকটা ডায়ালগ কী যে অসামান্য ছিলো, ভাবতেও ভালো লাগে এখন। সেসময়তো অফিস আদালতেও ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র ডায়ালগগুলো বলে বেড়াত। বিশেষ করে ওই কথাটাতো ছড়িয়ে গিয়েছিলো মানুষের মুখে মুখে, তিন মহিলা যখন শহরে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করে, সেখানে একটি কথা আছে না! যে ট্রেনে উঠার পর তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, তোমরা যে ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাসে এসে ঢুকলা, তোমরা টিকেট কেটেছো? তখন গোলাপী একটা কথা বলে, বাংলাদেশে কোনো কেলাস (ক্লাস) নাইক্যা, আমরা হগলেই এক কেলাসের (ক্লাস) মানুষ। এই যে এই ডায়ালগগুলো, কী অসাধারণ ভাবেই না আমজাদ ভাই ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার চরিত্রদের মধ্য দিয়ে।
ববিতা বলেন, আমি জীবনে তিন শ'র মতো ছবিতে কাজ করেছি, কিন্তু আমজাদ ভাইয়ের ছবিগুলো তারমধ্যে ছিলো ব্যতিক্রম। তার ছবিগুলো আর্টফিল্ম-ক্যাটাগরির না, কমার্মিশিয়ালই সব ছবি সুপার ডুপার হিট হয়েছে, কিন্তু ছবির গল্প, ডায়ালগ সব রিয়েলিস্টিক। আসলে তিনি তো জহির রায়হানদের সাথে কাজ করেছেন, জহির রায়হানের অ্যাস্টিস্টও করেছিলেন তিনি।
‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’-গানের লিরিক লেখার প্রসঙ্গ এনে আমজাদ হোসেনকে নিয়ে ববিতা বলেন, আমরা তখন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’র শুটিং করছি। ট্রেন যাচ্ছে জামালপুরের দিকে। এরমধ্যেই ট্রেনে বসেই আমজাদ ভাই একটা গান বেঁধে ফেললেন, একেবারে ইনস্ট্যান্ট বসে। গানটি হলো ‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ’। অবাক করার মতো বিষয়। তার মতো ট্যালেন্ট মানুষ খুব কমই আছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে। পরে এই গানটি রেকর্ড করে এই ছবিতেই ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এই গানটিও সেই সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।
গত ১৭ নভেম্বর নিজের গাড়ি নিয়ে বাড়ি থেকে কাজে বের হয়েছিলেন আমজাদ হোসেন। কাজ শেষে রাতে বাসায় ফেরেন। পরদিন সকালে পরিবারের সদস্যরা টের পান, আমজাদ হোসেনের শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক না। গৃহপরিচারিকা দৌড় দিয়ে তিনতলায় যান ছোট ছেলে সোহেল আরমানকে ডাকতে। ছেলে এসে কিছুক্ষণ কথা বলেই বুঝতে পারেন, তাঁর বাবার ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের পথে ছোটেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় ১৮ নভেম্বর আমজাদ হোসেনকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। একটা পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসাসেবা দিতে ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাতে তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংককে নেওয়া হয়। ১৪ নভেম্বর দুপুর ২টা ৫৭ মিনিটে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় জনপ্রিয়তা পাওয়া ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাল্যবন্ধু’, ‘পিতাপুত্র’, ‘এই নিয়ে পৃথিবী’, ‘বাংলার মুখ’, ‘নয়নমনি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘ভাত দে’, ‘হীরামতি’, ‘প্রাণের মানুষ’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘কাল সকালে’, ‘গোলাপী এখন ঢাকায়’ ‘গোলাপী এখন বিলেতে’ ইত্যাদি।
১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া নানামাত্রিক কাজের জন্য ১৪বার জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। একইসাথে বাংলা একাডেমী পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা