২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২৩ বছর পর নায়ক-নায়িকার দেখা

রোববার বিএফডিসির সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন ও অঞ্জু ঘোষ - সংগৃহীত

সর্বাধিক ব্যাবসা সফল বাংলা ছবির অন্যতম হলো ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। তাই সঙ্গত কারণেই এই ছবির পাত্র-পাত্রী নিয়ে কৌতুহল একটু বেশি। ইলিয়াস কাঞ্চন আর অঞ্জু ঘোষ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। জনপ্রিয়তা ও পেয়েছেন। কিন্তু ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ছবি তাদের নিয়ে গেছে জনপ্রিয়তার অন্য উচ্চতায়। এই কারণে ১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি নিয়ে দর্শকদের নানা জিজ্ঞাসা।

দীর্ঘ ২২ বছর পর গত বৃহস্পতিবার শিল্পী সমিতির আমন্ত্রণে বাংলদেশে এসেছেন অঞ্জু ঘোষ। সেদিনই জানিয়ে ছিলেন রোববার (৯ সেপ্টেম্বর)বিএফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করবেন এবং জানাবেন দীর্ঘদিন দেশে না থাকার নেপথ্য গল্প। আর এই গল্পের কথা ধরেই সামনে আসে ইলিয়াস কাঞ্চনের নাম। অঞ্জু ঘোষের সংবাদ সম্মেলনে কী তিনি থাকবেন? উত্তরটা পাওয়া গেল রোববার সংবাদ সম্মেলন থেকেই। নায়িকার ঠিক পাশের চেয়ারেই বসেছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সেখানেই তিনি জানালেন, ‘অঞ্জু ২২ বছর পর দেশে এলেও আমার সাথে দেখা হয়েছে ২৩ বছর পর’। এই সময়টায় একবারের জন্যও যোগাযোগ হয়নি তাদের মধ্যে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অঞ্জুর সাথে আমাদের দেখা নেই ২৩ বছর ধরে। দুদিন (রোববার) আগে জায়েদ খান হঠাৎ করে ফোনে ধরিয়ে দিয়ে বলল কথা বলেন। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি। গলাটাও ঠিক চিনতে পারিনি। তারপর যখন বুঝতে পারলাম আমি অঞ্জুর সঙ্গে কথা বলছি, তখন চোখে পানি চলে এলো। অনেক বছর পর কথা হচ্ছে, এটা মনে ছিল না। অনেকক্ষণ আমরা কথা বলেছি। সে অনেক কথা। আসলে এত কথা জমা হয়ে আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না।’

না দেখো দীর্ঘ এই সময়ে ইলিয়াস কাঞ্চন অনেকবার চেষ্টা করেছেন অঞ্জুর সাথে যোগাযোগ করার কিন্তু কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রসঙ্গে কাঞ্চন বলেন,‘আমি আসলে সব সময়ই তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো ঠিকানা পাইনি। আমি নিজের কাজে এর মধ্যে বেশ কয়েকবার কলকাতায় গিয়েছি। তখনো তার কথা বারবার মনে হয়েছে। কিন্তু তার কোনো ঠিকানা বা নম্বর আমি জোগাড় করতে পারিনি। যে কারণে আসলে দেখা হয়নি।’

অঞ্জুর সঙ্গে বন্ধুত্বকে স্মরণ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আসলে আমরা তো বেশ কিছু কাজ একসঙ্গে করেছি, আর চলচ্চিত্রের কাজটা যেহেতেু ইউনিট বেঁধে করা হয়, তাই প্রত্যেকের সাথেই সুন্দর বন্ধুত্ব থাকে। শুটিংয়ে সময় অনেক গল্প তৈরি হয়, যেগুলোর মূল্য শুটিং করার সময় না থাকলেও বহু বছর পর যখন ছবিটি দেখি, তখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে আর গল্পগুলো মূল্যবান হয়ে ওঠে। তখন কথা বলতে ইচ্ছে করে, কিন্তু যোগাযোগ করার মাধ্যম না থাকলে কীভাবে কথা বলব? তবে মনে মনে অনেক কথাই হয়ে যায়।’

এদিকে দীর্ঘ দিন পর ইলিয়াস কাঞ্চনকে কাছে পেয়ে অঞ্জু ঘোষও বেশ উচ্ছসিত। তবে যেহেতু সংবাদ সম্মেলনে তাই তিনি কথা বলেছেন বেশ ফরমাল ভাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আগেও পরিশ্রম করেছি, এখনো করে যাবো। মাতৃভূমিতে এসে মনে হলো তীর্থে পা রেখেছি। কোন দিন কারো ওপর আমার ক্ষোভ ছিল না। আমি বাংলাদেশ ছেড়ে যাইনি। শিল্পীরা কেমন আছে দেখতে এসেছি।’

বিএফডিসিতে অঞ্জুর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান, খলঅভিনেতা আহমেদ শরীফ, চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, চিত্রনায়িকা অঞ্জনা, শাহনূর প্রমূখ।

বাংলা চলচ্চিত্রের বর্তমান হাল অবস্থা নিয়ে অঞ্জু বলেন,‘সিনেমা এখন সবার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। সবাই এখন সিরিয়াল দেখে। ছবির মানুষগুলো দূরে সরে গেছে। কষ্ট লাগছে। আমাদের সময় সিনেমাকেই ঘর-সংসার মনে হতো। একটা সময় ছিল শুটিং স্পটই সব ছিল।’ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি কোন বাধা মানি না। সব বাধা পেরিয়ে আমি এগিয়ে যাই। ভালো গল্প পেলে আমরা কাজ করবো। সাংবাদিকরাই আমাদের দু’টো হাতকে একত্র করে। দর্শক এবং শিল্পীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন একসাথে কাজ করেছি। সব সময় যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছি। কখনো মনে হয়নি আমরা পরিবারের বাইরের মানুষ। চলচ্চিত্রে এমন একজন সহকর্মী পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার।’

এদিকে দুজনকে নিয়ে আবারো চলচ্চিত্র নির্মানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রযোজক নাদের খান। তিনি বলেন, আগামি মাসেই এই ছবির চুক্তি হবে। এজন্য অঞ্জু ঘোষও বাংলাদেশে আসবেন। ছবির নাম হবে ‘জোসনা কেন পরবাসে’।

২২ বছর আগে, ১৯৯৬ সালে দেশ ছাড়েন অঞ্জু ঘোষ। তখন থেকেই কলকাতায় বসবাস করছেন এই নায়িকা। কলকাতায় বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। অঞ্জুর প্রকৃত নাম অঞ্জলি। ১৯৭২ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। ১৯৮২ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরী চলচ্চিত্রে আনেন তাকে। অঞ্জুকে নিয়ে তৈরি করেন ‘সওদাগর’। এরপর ১৯৮৯ সালে ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ তাঁকে এনে দেয় তুমুল জনপ্রিয়তা। ঢালিউডে প্রায় ৫০টি ছবির অভিনেত্রী তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement