২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

শাহরুখ-কন্যার যে ছবি নিয়ে তোলপাড়

বিনোদন
বাবা শাহরুখ খানের সাথে সোহানা - ছবি: সংগৃহীত

বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খানের মেয়ের ছবি ভোগ ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে ছাপানোর ফলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে পত্রিকাটি।

শাহরুখ খানের ১৮বছর বয়সী মেয়ে সুহানা খানের ছবি ম্যাগাজিনটির এবারের প্রচ্ছদের আসার পর অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকেন। তাদের বক্তব্য, সুহানা খানের এই প্রচ্ছদে জায়গা পাওয়ার অধিকার নেই।

কারণ, সেজন্য বিশেষ কোনো যোগ্যতার পরিচয় তিনি দিতে পারেননি বা বিশেষ কোনো অর্জন নেই তার।

ভোগ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা পাওয়াটাকে মনে করা হয় গৌরবের এবং সাধারণত শীর্ষ মডেল, অভিনেত্রী কিংবা গায়িকারা যখন তাদের ক্যারিয়ারের চূড়ায় থাকেন তখন তাদের ছবি প্রচ্ছদে ঠাঁই পায়।

সুহানা খান নিজেই নিজেকে বর্ণনা করেছেন, ‘শিক্ষার্থী, নাট্টপ্রেমী এবং ভবিষ্যৎ তারকা’ হিসেবে।

তার বাবা শাহরুখ খান ‘বলিউডের কিং খান’ হিসেবে পরিচিত । আর এই ম্যাগাজিনের কভার পেজ-এ তার জায়গা পাওয়াকে অনেকেই দেখছেন প্রভাবশালী বাবার প্রভাবের কারণে পাওয়া সুযোগ হিসেবে আর সে কারণেই তার জায়গা হয়েছে প্রচ্ছদে!

ফ্যাশন শুটের স্টাইল নির্দেশনা করেছেন আনাইতা শ্রফ আদাজানিয়া, যিনি ভোগ ম্যাগাজিনের ফ্যাশন ডিরেক্টর এবং শাহরুখ খানের দীর্ঘদিনের বন্ধু।

এটাই সুহানার প্রথম কোনো ফটোশুট এবং সাক্ষাতকার।

ম্যাগাজিনের ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে এই অঙ্গনের নতুন মেয়ে বলে।

আর ইতোমধ্যেই তা ৩৬ হাজারের বেশি লাইক পেয়েছে।

সামাজিক মাধ্যম টুইটারে যারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠায় স্ট্রাগল করছেন এমন অভিনেত্রীরা। তারা এক্ষেত্রে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার বিষয়ও তুলে ধরেছেন।

শ্রুতি ট্যান্ডন নামে একজন ভোগ ইন্ডিয়া থেকে সুহানার ছবি শেয়ার করে হ্যাশট্যাগ লিখেছেন, ‘এমন কিছু বিষয় আছে যা হওয়া উচিত না কিন্তু হচ্ছে-#স্বজনপ্রীতি...অনেক অভিনয়শিল্পী থাকা সত্ত্বেও কিন্তু সেলেব্রিটি বাচ্চারাই ভোগের প্রচ্ছদে স্থান পায়, যার এমনকি একটিও সিনেমা মুক্তি পায়নি সে ভোগের প্রচ্ছদে জায়গা পেয়েছে কারণ তোমার বাবা একজন স্টার- গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ ধরনের নেতিবাচক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া সুহানা নিজেই দিয়েছেন তার সাক্ষাতকারে: ‘আমি নিজেকে সবসময় বলি যে নিন্দুকেরা বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাবে, কিন্তু এটা যে আমাকে আপসেট করে না সত্যিকারভাবে সেটা আমি বলতে পারি না।’

‘এটা বিরক্তিকর, কিন্তু আমি নিজেকে বোঝাই অন্য অনেকের আরো বড় বড় সমস্যা আছে।’

ভোগ বিউটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে এই প্রচ্ছদ উন্মোচন করেন সুহানার বাবা শাহরুখ খান। সেখানে তিনি বলেন, একে কোনো সুবিধা হিসেবে দেখা হবে না বলে তিনি আশা করেন।

‘...বাচ্চারা তো বাচ্চাই, শিশুরা তো শিশু, এবং এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে বন্ধুদের সহায়তা দরকার তাদেরকে আরও একটু বেশি স্বস্তি দিতে, আরো আত্মবিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা দিতে। তাই ভোগ ম্যাগাজিনকে আমি ধন্যবাদ দেবো আমার ছোট্ট মেয়েটিকে পত্রিকার প্রচ্ছদে জায়গা দেয়ার জন্য।’

‘আমি আশা করবো, সে শাহরুখ খানের মেয়ে কেবল সে কারণে একে বিশেষ সুবিধা নেয়া বলে মনে করবেন না...’

শাহরুখ খান টুইটারে লেখেন, ‘ওকে আবারো আমার হাতের ওপর তুলে ধরলাম, ধন্যবাদ ভোগ... তোমার প্রতি সমস্ত ভালবাসা এবং দীর্ঘ আলিঙ্গন। হ্যালো সুহানা খান!’

মি. খান বলেন, তিনি দেখতে চান যে তার সন্তানরা নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ দিয়ে এগিয়ে যাবে।

‘আমার অনেক ভালো বন্ধু আছে এবং তারা আমার বাচ্চাদের নিজেদের সন্তানদের মতোই মনে করে- তারা সবাই ভীষণ খুশি এবং তাকে তারা সামনে নিয়ে আসতে চান...কিন্তু আমি সবসময় জোর দিয়েছি যে তাদের তারকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই না। আমি চাই তারা যখন যথেষ্ট ভাল অভিনয়শিল্পী হয়ে উঠবে কেবল তখনই তাদের সকলের সামনে উপস্থাপন করতে।’

সুহানা তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। নিজেকে একজন অভিনেত্রী হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা শুরুর আগে ইউনিভার্সিটি যাওয়াই মূল কাজ। সাক্ষাতকারে সে আরও জানায়, তারা মা-বাবা তাকে পত্রিকার প্রচ্ছদের মডেল হওয়ার আগে অনেক লম্বা সময় নিয়ে এবং শক্তভাবে ভাবতে বাধ্য করেন।

তবে যখন বাবা-মা এই প্রস্তাবটি নিয়ে আসেন তখন খুব এক্সাইটেড হয়ে পড়েন সুহানা, জানায় সে কথাও।

‘আমি সরাসরি হ্যাঁ বলে দিতে চাইছিলাম, কিন্তু তারা চাইছিলেন আমি আরও ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিই।’

তবে সুহানাকে যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তাকে সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন অনেকে।

টুইটারে এমনই একজন লিখেছেন, ‘স্বজনপ্রীতি-এখানে দোষের কিছু নেই। আমার বাবা যদি অভিনেতা হতেন, আমি অবশ্যই একটি সুযোগ চাইতাম এবং এটা ভুল কিছু না। স্বজনপ্রীতি হয়তো এই শিল্পে লোকজনের প্রবেশ সহজ করে কিন্তু এরপর দিনশেষে প্রতিভাই তার হয়ে কথা বলে। সুহানা খানের জন্য শুভকামনা।’

ফটোশুটে ছিলেন ফটোগ্রাফার এরিকোস অ্যান্ড্রু, তিনি মনে করেন সুহানা অনেকদূর পথ পাড়ি দেবে।

তিনি লিখেছেন, সে ক্যামেরার সামনে যেভাবে স্বাভাবিক ও স্বাচ্ছন্দ্য ছিল সেটা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। এমন প্রতিভা খুব কমই তিনি পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।

সূত্র : বিবিসি

আরো পড়ুন :
শাহরুখ খান সম্পর্কে ২০টি অজানা তথ্য জেনে নিন
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা শাহরুখ খান সম্পর্ক জানতে তার ভক্তদের আগ্রহের শেষ নেই।

শাহরুখ খানের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক তথ্য জানার জন্য গভীর আগ্রহ থাকে দর্শকদের।

ভক্তদের কৌতূহল মেটাতে শাহরুখ খান নিজেও বিভিন্ন সময় ভক্তদের কৌতূহল মেটাতে নানা তথ্য তুলে ধরেছেন।

চলুন জেনে নেই শাহরুখ খান সম্পর্কে ২০টি তথ্য।

১. তাজ মুহাম্মদ খান আর লতিফ ফাতিমার পরিবারে ১৯৬৫ সালের ২ নভেম্বর জন্ম হয় শাহরুখের। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি নানীর সঙ্গে প্রথমে ম্যাঙ্গালোর আর তারপরে ব্যাঙ্গালোরে থাকতেন। নানী তার দেখাশোনা করতেন। শাহরুখের নানা ম্যাঙ্গালোর বন্দরের মুখ্য প্রকৌশলী ছিলেন।

২. শাহরুখের বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের মানুষ, মা ভারতের হায়দ্রাবাদের আর দাদি কাশ্মীরের।

৩. বাড়িতে শাহরুখের বাবা 'হিন্দকো' ভাষায় কথা বলতেন। এই ভাষা পাকিস্তানে ব্যবহৃত পাঞ্জাবী কথ্য ভাষা।

৪. পাকিস্তানের পেশোয়ারের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগ নিয়মিত ছিল। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি গিয়েছিলেন বাবার ফেলে আসা শহরে। সে প্রথমবার শাহরুখ বাবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ভারতে শুধু তাঁর মায়ের দিকের আত্মীয় স্বজন ছিলেন, বাবার গোটা পরিবারই পেশোয়ারে থাকতেন।

৫. একটু বড় হওয়ার পরে শাহরুখের পরিবার দিল্লিতে চলে আসেন। সেন্ট কলাম্বাস স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। খেলাধুলোয় খুব আগ্রহী ছিলেন শাহরুখ।

৬. স্কুলে পড়ার সময়ে শাহরুখ হিন্দিতে খুব একটা দক্ষ ছিলেন না। তবে একবার হিন্দি পরীক্ষায় দশে দশ পেয়েছিলেন তিনি, পুরষ্কার হিসাবে তার মা সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

৭. দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বি এ পাশ করেন আর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে মাস কমিউনিকেশন নিয়ে এম এ পড়তে ভর্তি হন। তবে সেটা আর শেষ করা হয় নি তাঁর।

৮. শাহরুখ খানের স্ত্রী গৌরীর বাবা একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। স্কুলে পড়ার সময় গৌরীর সাথে প্রথম চেনা পরিচিতি হয় শাহরুখের। একটা পার্টিতে দুজনের মধ্যে বেশ অনেকক্ষণ গল্প চলে। তখন থেকেই শুরু হয় শাহরুখ-গৌরীর প্রেম পর্ব।

৯. সেই তারিখটাও মনে আছে শাহরুখের - দিনটা ছিল ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের নয় তারিখে। সেই দিনই শাহরুখ ড্রাইভিং লাইসেন্সও পেয়েছিলেন।

১০. গৌরী আর শাহরুখের বিয়ে হয় ১৯৯১ সালের ২৫ অক্টোবর।

১১. শাহরুখের যখন ১৫ বছর বয়স, তখনই তার বাবা মারা যান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। পেশায় উকিলও ছিলেন আবার স্বাধীনতা সংগ্রামেও অংশ নিয়েছিলেন শাহরুখের বাবা তাজ মুহম্মদ খান। অল্প বয়সে একবার জেলও খেটেছেন, পরে মৌলানা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ভোটেও দাঁড়িয়েছিলেন তাজ মুহম্মদ খান।

১২. শাহরুখ খানের প্রথম রোজগার ছিল ৫০ টাকা। গায়ক পঙ্কজ উদাসের একটা কন্সার্টে কাজ করে সেই টাকা পেয়েছিলেন। প্রথম রোজগারের টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটে শাহরুখ আগ্রা গিয়েছিলেন ।

১৩. তবে শাহরুখের প্রথম টেলি-সিরিয়াল শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। কর্নেল কাপুরের পরিচালনায় 'ফৌজি' নামের সেই ধারাবাহিক খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সেখানেই প্রথমবার ভারতের দর্শক দেখলেন পরের কয়েক বছরে স্টার থেকে সুপার স্টার হয়ে ওঠা শাহরুখ খানকে।

১৪. ছোট থেকেই শাহরুখ খানের ইচ্ছা ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার। কলকাতার 'আর্মি স্কুল'-এ ভর্তিও হয়েছিলেন শাহরুখ, কিন্তু ছেলেকে ছাড়তে রাজি হন নি তাঁর মা ।

১৫. ১৯৮৯-৯০ সালে রেণুকা সাহানের সঙ্গে 'সার্কাস' সিরিয়ালে কাজ করতে শুরু করেন শাহরুখ। সেই সময়ে তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মাকে ধারাবাহিকটার একটা পর্ব দেখানোর জন্য বিশেষ অনুমিত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর মা তখন এতটাই অসুস্থ, যে ছেলেকে চিনতেও পারেন নি। ১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে মৃত্যু হয় শাহরুখ খানের মায়ের।

১৬. মায়ের মৃত্যুর শোক থেকে দূরে সরে যেতে এক বছরের জন্য শাহরুখ দিল্লি থেকে মুম্বাই গিয়েছিলেন। কিন্তু তার ফেরা আর হয়নি আর।

১৭. সে বছরই প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ খান। সেটি ছিল হেমা মালিনী অভিনীত 'দিল আসনা হ্যায়'। নায়ক হিসাবে শাহরুখকে প্রথম দেখা গেল পরে বছর ২৫ জুন ১৯৯২তে 'দিওয়ানা'য়।

১৮. কঠোর পরিশ্রম করতে পারেন শাহরুখ। মাত্র চার পাঁচ ঘণ্টা ঘুমান তিনি। তাঁর প্রিয় উক্তি হলো, 'ঘুমানো মানে জীবন নষ্ট করা'।

১৯. স্ত্রী সন্তান ছাড়া শাহরুখের সঙ্গে তার বাড়িতে থাকেন বড় বোন লালারুখ।

২০. শাহরুখ খানের টুইটার একাউন্টে প্রায় তিন কোটি ফলোয়ার রয়েছে।

আপনি হয়তো জানেন, আজ শাহরুখ খানের জন্মদিন।

উপমহাদেশের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা আজ ৫২ বছরে পা দিয়েছেন। - বিবিসি, ২ নভেম্বর ২০১৭


আরো সংবাদ



premium cement