২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হতে গিয়ে ভূত হলেন ইরানি সুন্দরী!

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হতে গিয়ে ভূত হলেন ইরানি সুন্দরী! - ছবি : সংগৃহীত

ইন্টারনেটে কত কী ভাইরাল হয়। আবার মুহূর্তে তাকে সরিয়ে জায়গা করে নেয় অন্য কিছু। বছরখানেক আগে এক তরুণীর ছবি ঘিরে শোরগোল পড়েছিল। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো হতে গিয়ে ‘খোদার উপরে খোদকারি’র চেষ্টায় বিপত্তি ঘটিয়েছিলেন ইরানের এক তরুণী। হয়ে উঠেছিলেন কুরূপা। যাকে দেখলে দিনের আলোতেও ছ্যাঁৎ করে ওঠে বুকের মধ্যে। গল্পের বইতে ডাইনি বা প্রেতিনীদের যেরকম সব ছবি দেখা যায়, প্রায় সেই রকমই দেখতে হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। জানা গিয়েছিল, এই ভোল বদলের জন্য সব মিলিয়ে নাকি ৫০টি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন তিনি!

বছর ঘুরতে তা ঘুরতেই ‘আবার সে আসিছে ফিরিয়া’। সেই মেয়ে, সাহার তাবার নামের ২০ বছরের তরুণীটি আবার নেটিজনদের নজরে। সেই সময় অনেকেই তার ছবি দেখে খারাপ সব মন্তব্য করেছিলেন। এবার সাহার সামনে আনলেন তার আসল চেহারা। সে ছবিতে তার রূপের জৌলুস দেখে তাক লেগে যেতে বাধ্য। তরুণী জানিয়েছেন, নিছকই ইনস্টাগ্রামের ফলোয়ার বাড়াতে নিজের ছবিতে ফটোশপ করে নিজেকে কুৎসিত দর্শন করে তুলেছিলেন তিনি। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি হওয়ার কোনো ইচ্ছে তার ছিল না।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেইল’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সবটাই মেক আপ আর ফটো এডিটিং-এ জাদু নয়। সত্যি সত্যিই কয়েকটি অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন সাহার। তবে তার ফলে তিনি ভয়ঙ্কর দর্শন কুরূপা হয়ে উঠেছিলেন, তা নয়। স্রেফ ফটো এডিটিং-এর কায়দাবাজিতে নিজের চেহারাকে বদলে সকলের সামনে পেশ করেছিলেন তিনি।

সাহার তাবারের মতে, তার এই ভোল বদল আসলে শৈল্পিক এক এক্সপেরিমেন্ট। তার আসল ছবি দেখে একেবারে চমকে গিয়েছেন নেটিজেনরা। প্রশ্ন উঠছে, এমন সুন্দর চেহারাকে বিকৃত করে জনপ্রিয় হওয়ার অর্থ কী?

সাহার অবশ্য সেসব ভাবছেন না। তার কাছে যে ‘সবার উপরে ফলোয়ার সত্য’! সাধে কী বলে, শেষ যুগে এখন পৃথিবী!

 

আরো পড়ুন :

মসুল থেকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির চিঠি
আদিব মাহফুজ

জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের প্রতিনিধি হিসেবে হলিউড তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলির ইরাকের মসুল সফরের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে আরেক বাস্তবতা, যা মিডিয়া কিংবা মানুষের সাদা চোখের অগোচরেই রয়ে গেছে। তাই যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক বছর পরও পশ্চিম মসুলের বেশির ভাগ এলাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বিরাট শহুরে এলাকাজুড়ে মসুলের মতো যুদ্ধ আর কোথাও হয়নি। আইএস সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পেতে মসুলের বাসিন্দাদের চড়া মূল্যই দিতে হয়েছে। হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ মারা গেছে, কংক্রিটের ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে মসুল। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি মসুলের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন, পূর্ব মসুলে দাঁড়িয়ে অনুভব করেছেন ধ্বংসলীলার নিঃশেষ এক মুহূর্ত আবার পশ্চিম মসুলে তার মনে হয়েছে যেন এইমাত্র সেখানে যুদ্ধ বন্ধ হয়েছে, ধ্বংসের রেশ এখনো স্পষ্ট। জোলি বলেন, গত এক দশকে তিনি যদি মধ্যপ্রাচ্য কিংবা আফগানিস্তান থেকে কিছু শিখে থাকেন তাহলে তা হচ্ছে কোনো সামরিক বাহিনী যুদ্ধে জিতলেও সেখানকার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হয়নি। সহিংসতার চক্র কেবলি ঘুরপাক খাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।

জোলির ভাষায়, মসুলে কোনো কিছু জরুরি হতে পারে না এমন এক পরিস্থিতিতে যে এটা নিশ্চিত ভাবা যায় সন্ত্রাস সেখানে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে না। আশা যে ফের মসুল শহরকে গড়ে তোলা হবে, প্রাণবৈচিত্র্যতায় ভরে উঠবে চার পাশ, শান্তিপূর্ণ সহবস্থান নিশ্চিত হবে এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। কারণ পশ্চিম মসুলে গাদাগাদি করে জড়ো করে রাখা হয়েছে পুননির্মাণের বিভিন্ন সরঞ্জাম, প্রকৌশলী, পরিকল্পনাবিদ, সরকারি সংস্থা, এনজিও, বিশ্ব ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ সবাই ইরাকের সেই গৌরব ফিরিয়ে আনতে চান, ফের গড়ে তুলতে চান ঐতিহ্যবাহী শহরটিকে।

কিন্তু যুদ্ধের এক বছর পার হলেও এখনো পশ্চিম মসুল পরিত্যক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত। চার পাশের দেয়ালগুলোয় গুলির ঝাঁজরা চিহ্ন, আগুনের ছাই চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, মর্টারের ক্ষত ঘরের দেয়ালে। কবরের মতো শান্ত চার পাশ। শত শত স্থানীয় বাসিন্দা এখনো অস্থায়ী ক্যাম্পে আছে যাদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার মতো অবশিষ্টটুকু আর নেই। এখনো মৃতদেহগুলো পুনরুদ্ধারের বাকি, ক্ষেতের বিনষ্ট ফসল দেখার কেউ নেই। এই ধরনের ধ্বংসাবশেষে একটি শহরকে পরিণত করার জন্য আমাদের সামষ্টিক নৈতিকতা কতটুকু দায়ী, আমরা কি মিলিত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই মসুলে এ ধরনের পরিণতি নেমে আসেনি এবং মানবতা রক্ষার জন্য আর কতকাল আমাদের প্রচেষ্টা কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য হওয়ার অপেক্ষায় থাকবে।

মসুলের যেদিকেই তাকিয়েছেন জোলি, কোথাও বাসযোগ্য এতটুকু স্থান তার চোখে পড়েনি। কোনো কোনো পরিবারের সদস্যরা তবুও চেষ্টা করছেন, ভেঙে পড়া ঘর বাড়ি থেকে কংক্রিটের স্তূপ সরানোর। তা-ও খালি হাতে। এবং তা করতে গিয়েও লুকিয়ে থাকা চোরাগোপ্তা হামলার মতো মাইনগুলোর বিস্ফোরণে তাদের হাত-পা উড়ে যাচ্ছে। এমন এক ঘটনায় একটি বাড়িতে হতাহত হয়েছে ২৭ জন। যে শহরকে তারা চিনতেন, রাস্তাঘাট বা চেনাপথ, আবেগের সেই ভূদৃশ্য তা কেবল তাদের মননেই বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, খুঁজে পান না তারা কারণ চার দিকে কেবল ভগ্নস্তূপের ছড়াছড়ি। তারা তাদের শেষ সম্বল, সঞ্চয়, ঘরবাড়ি যা হারিয়েছেন যা বংশপরস্পরায় গড়ে তুলেছেন এবং তা ফের বংশপরস্পরায় কেবলি আক্ষেপের মধ্য দিয়ে হা-হুতাস ছড়াতে থাকবে। এমনকি বাড়িটি যে তাদের তার দলিল বা কাগজপত্র পুড়ে গেছে, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। যারা ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন বিশ্বাস নিয়ে অনাদিকাল ধরে পাশাপাশি বাস করে আসছিলেন তারাই এখন ভগ্নদশায় চরমভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

এক ব্যক্তি জোলিকে অশ্রুসজল চোখে বলছিলেন, কিভাবে আইএস সন্ত্রাসীর তার ওপর চরম নির্যাতন করেছে। একটি শিশু ভয়াবহ বিহ্বলতায় বর্ণনা করে কিভাবে তার চোখের সামনে তারা আরেকজনকে হত্যা করে। এক মা ও আরেক বাবা জানান, মর্টারের গুলি যখন তাদের কিশোরী কন্যাকে আঘাত হানে, তার পা উড়ে যায় এবং বিস্ফোরিত হাড়গুলো বের হয়ে আসে। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ওই বাবা-মা একটু চিকিৎসা চান। এবং এ চাওয়ার মধ্যেই তাদের কোলেই কিশোরীটি মারা যায়।

মসুলে এ ধরনের অবিচার ও দুর্দশা এমন এক চরমে পৌঁছেছে, যা নিরূপণ করা অসম্ভব। যারা মারা গেছে তারা এ ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে বেঁচে গেছে কিন্তু যারা বেঁচে আছে তাদের জন্য এ ধরনের যাতনা টেনে চলা খুবই কঠিন ও নির্মম। তার চেয়েও নির্মম হচ্ছে তাদের প্রতি বিশ্ববাসীর আচরণ এবং কত দ্রুতই না বিশ্ব তাদের ভুলে যাচ্ছে। আমি নিজেকেই জিজ্ঞেস করি কখনো কখনো বা ইতিহাসের আরেক অধ্যায়ে যে মসুলে যা ঘটে গেছে তার জন্য কখনো কি আমরা সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পেরেছি। যেমন প্রতিক্রিয়া আমরা দেখিয়েছিলাম ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর কিংবা প্রবল বন্যায় ত্রাণসাহায্য নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে পুনর্বাসনের সঙ্কল্পে।

যারা রাসায়নিক বোমার আঘাতে এখনো বেঁচে আছে তাদের ছাড়াও হাসপাতালে যারা চিকিৎসার জন্য গিয়ে বোমা হামলার শিকার হয়েছে, কিংবা সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের এবং তাদের জন্য যাদের এখনো অব্যাহতভাবে মানসিক চিকিৎসা ও সেবা প্রয়োজন, বর্তমানের দ্বন্দ্বে যারা এখনো অবর্ণনীয় ক্লিষ্টে তাদের এই ভিড়ে এমন মানবদুঃখে কিভাবে আমি সুস্থ হয়ে থাকি, তাদের কথা ভাবি তারা কিভাবে স্বাভাবিকভাবে জীবনে ফিরে আসতে পারে। আমরা যা করতে পারি মসুলবাসীর জন্য তা নিয়ে কি আমাদের মনে সন্দেহ নেই, অক্ষমতা কি নেই আন্তর্জাতিকপর্যায়ে এবং সাম্প্রতিক ইতিহাসের আলোকে আমরা কিভাবে এ দুর্দশা মেনে নেই। কতটা পর্যায়ে আমরা কেবলি এসব মেনে নেব বা গা সওয়া হয়ে যাবে কেবল সবকিছু।

মসুলে দাঁড়িয়ে টের পেয়েছি গত এক দশকে কিভাবে পররাষ্ট্রনীতি ব্যর্থ হয়েছে। একই সাথে মানবজাতির অংশ হিসেবে সেখানকার বাসিন্দাদের ফের মানুষের মতো বেঁচে ওঠার তীব্র ইচ্ছায়, টিকে থাকার অদম্য প্রেরণায় স্বতন্ত্র অন্তরে সর্বজনীন মূল্যবোধের এক দৃঢ় সহনশীলতার আঁচে দগ্ধ হয়েছি। সেই বাবাকে দেখেছি ফের মুখে হাসি ফিরে আসতে যখন তার দুটি কন্যাসন্তান ফের স্কুলে যেতে শুরু করেছে, কপর্দকশূন্য একজন যার মাথার ওপর ভাঙা চালটিও নেই, অথচ প্রবল প্রাণশক্তি এখনো অবশিষ্ট তার। এরচেয়ে জয়লাভের জীবন্ত প্রতীক কী আর হতে পারে, মসুলের মেয়েরা ফের স্কুলে যেতে শুরু করেছে, শিক্ষার আলোকে ফের মুঠো বন্দী করছে।

মসুলের একটি পরিবারও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। তারা আমাদের সাহায্যের ধারই ধারে না। মসুল তার তিন হাজার বছরের ইতিহাস ভুলে যায়নি, আস্থা এখনো অটুট। গত তিন বছরের যুদ্ধের বর্বরতা তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে এ বিশ্বাস আমার আছে; কিন্তু তাদের ওই ইচ্ছা ও আগ্রহে যদি আমাদের মতো মানুষ যোগ দিতে পারত, গৌরবে অংশীদার হতে পারত তাহলে কতই না ভালো হতো। আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভের যে যৌথ দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের পরাজয়কে গণ্য করেছি তা কেবল আরো নিশ্চিত হতো।


আরো সংবাদ



premium cement