২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হুমকির মুখে দেশীয় লবণ শিল্প

হুমকির মুখে দেশীয় লবণ শিল্প - নয়া দিগন্ত

ন্যায্য দাম না পাওয়া ও অতিরিক্ত সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানী করার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় লবণ শিল্প। মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দরপতন অব্যাহত থাকায় দিশেহারা চাষীরা। একই সুর স্থানীয় লবণ মিল মালিক সমিতির নেতাদের মুখেও। তাদের দাবি, বিদেশ থেকে সোডিয়াম সালফেটের আঁড়ালে লাখ লাখ মেট্রিকটন সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানী করার কারণে এ শিল্প এখন হুমকির মুখে রয়েছে।


জানা গেছে, চলতি মৌসূমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন, চাহিদা ধরা হয়েছে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিকটন। চলতি ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ পর্যন্ত দেশে লবণ উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিকটন। ভোজ্যলবণ ৮ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিকটন ও ৪ লাখ ২৫ ২৫ হাজার মেট্রিকটন শিল্প লবণসহ চলতি মৌসূমের লবণ চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিকটন বলে জানা গেছে।

বিসিক লবণ প্রকল্প ও মিল মালিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে চারটি ক্যামিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েছে। এগুলোতে সোডিয়াম সালফেটের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে মাত্র ৩ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিকটন। আর এই চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে সোডিয়াম সালফেট আমদানী করতে হয়। আর এ সুযোগকে পুঁজি করে আমদানী কারকগণ কোন প্রকার বাঁধা না পেয়ে সোডিয়াম সালফেটের আঁড়ালে অতিরিক্ত লাখ লাখ মেট্রিকটন সোডিয়াম ক্লোরাইড বা ভোজ্যলবণ আমদানী করছেন। সেখান থেকে আমদানী করা অতিরিক্ত লাখ লাখ মেট্রিকটন লবণ সরাসরি চলে যাচ্ছে লবণ কারখানাগুলোতে আর আমদানী করা লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরে হওয়ার সুবাধে তা প্যাকেট জাত করে বাজারজাত করা হচ্ছে।

বাঁশখালী সনুয়ার স্থায়ী বাসিন্দা ও লবণ চাষি মো. বেলাল হোসেন বলেন, শনিবার প্রতিমন লবণ বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৬০ টাকা। চলতি মৌসুমে ৩ কানি জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু করেছেন। আবহাওয়া ভাল থাকলে তিন কানি জমিতে ৮০০ মন লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনকানি জমিতে লবণ উৎপাদনের জন্য জমির খাজনা ,জমিতে পানি প্রবেশ করানো ও পলিথিন বাবদ ৯০ হাজার ও মৌসূমের ৬ মাসে একজনের মজুরি খরচ ৭০ হাজার টাকা দিতে হবে। সে হিসাবে মৌসুম জুড়ে তার ৮০০শত মন লবণের উৎপাদন খরচ পড়ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা সেমতে প্রতিমণ লবণের উৎপাদন মূল্য পড়ছে ২০০ টাকা উপরে।

তিনি আরো বলেন, এছাড়া আবার মাঠ থেকে লবণ পরিমাপ করার জন্য প্রতিমনে ৫ টাকা এবং ধোলাই খরচ ১৭ টাকাসহ অতিরিক্ত ২২ টাকা গুনতে হয় নিজেকেই সে হিসেবে তিনি প্রতিমন বিক্রি করে পাচ্ছেন মাত্র ১৩৮ টাকা। তাই তিনি লবণ শিল্প ও চাষিদের জীবণ জীবীকা রক্ষায় মাঠে উৎপাদিত লবণের মূল্য প্রতিমন ২৫০ টাকা নির্ধারণ পূর্বক সরাসরি সরকারি ভাবে লবণ ক্রয়ের দাবি জানিয়েছেন।

পটিয়া ইন্দ্রোপল লবণ শিল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি দুইমনের এক বস্তা লবণ ক্রয় করছেন তারা ক্রয় করছেন মাত্র ৪৫০ টাকা করে। এসময় সুলতানপুরী সল্টের মো. ফারুক, হেদায়েত সল্টের মো. মোরশেদ ও ইসলামাবাদী সল্ট রিফাইনারীর মো. হেলাল বলেন, দেশী লবণ শিল্প ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারকে অবশ্যই সেডিয়াম সালফেদ আমদানীতে কঠর নজরদারি ও যে প্রতিষ্ঠান সোডিয়াম সালফেট ব্যবহার করে শুধুমাত্র তাদেরকে এই সালফেট আমদানী করা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাছাড়া সোডিয়াম সালফেট আমদানীর উপর উচ্চহারে শুল্কারোপ করা। তারা বলেন আপদকালিন সময়ে দেশের চাহিদা মেটাটে বিদেশ থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানীর সময় ৯০/৯৫ ভাগ শুল্কারোপ করা হয়। অথচ সোডিয়াম সালফেটের বেলায় তা মাত্র ৫/৬ ভাগ হওয়া সোডিয়াম সালফেটের আঁড়ালে সরাসরি সোডিয়াম ক্লোরাইড বা ভোজ্যলবণ আমদানী করা হচ্ছে। এ কারণে আজকে দেশের লবণ শিল্প ও জনস্বাস্থ্য হমুকির মুখে পড়ছে বলে তারা মনে করেন।

অপরদিকে চলতি মৌসুমে সরকার সরাসরি মাঠ থেকে এক লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত লবণ ক্রয়ের কথা থাকলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বিষয়টি জানতে চাইলে গতকাল বিসিকে লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) হাফিজুর রহমান দৈনিক বলেন, লবণ ক্রয়ের ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট বিস্তারিত ভাবে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, চলতি বছর লবণের চাহিদা ১৮ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিকটন ও লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিকটন। ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ লাখ মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের উদ্বৃত্ত রয়েছে আরো ৩ লাখ ৫ হাজার মেট্রিকটন লবণ। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে চলতি মৌসুমেও লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, সোডিয়াম সালফেটের চাহিদার অনুকুলে ২০১৮ সালে প্রায় ৭ লাখ মেট্রিকটন, ২০১৯ সালে ১০ লাখ মেট্রিকটন ও চলতি বছরের এই সময়ের মধ্যে তিনি ধারণা করছেন প্রায় ৬/৭ লাখ মেট্রিকটন সেডিয়াম সাফেটের সাথে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানী করা হয়েছে। তাই তিনি সোডিয়াম সালফেট আমদানীর ক্ষেত্রে কঠর নজরদারী বাড়িয়ে সোডিয়াম সালফেট আমানীর ক্ষেত্রে শুল্কহার ১০০ ভাগ বাড়িয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement