১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নিজেই পঙ্গু ফেনী ট্রমা সেন্টার

- সংগৃহীত

ফেনী শহরের মহিপালে সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দিতে নির্মাণ করা হয়েছে ফেনী ট্রমা সেন্টার। কিন্তু চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই এখন পঙ্গু হয়ে আছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানি না থাকায় ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নয় মাস বেতন বন্ধসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত সেন্টারটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের অক্টোবরে হাসপাতালটি স্বাস্থ্য বিভাগকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। শুরুর দিকে ট্রমা সেন্টারটিতে মোট ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও বর্তমানে দুই চিকিৎসা কর্মকর্তা, নার্স, ফার্মাসিস্টসহ মোট ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজন নার্স ঢাকাতে প্রশিক্ষণরত রয়েছেন। হাসপাতালের বর্হিবিভাগে দৈনিক গড়ে ২০-২৫ জন সাধারণ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনী-নোয়াখালী সড়কের অফিসার্স কোয়ার্টারের বিপরীতে ফেনী ট্রমা সেন্টারটি অবস্থিত। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স দূরের কথা, পায়ে হেঁটে ভেতরে যেতেও কষ্ট হয়। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা ট্রমা সেন্টারটি চালুর নিয়ম থাকলেও দুপুর ২টায় বন্ধ হয়ে যায়। বিল বকেয়া থাকায় গত ১০ বছর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একইভাবে গ্যাস সংযোগটিও বিচ্ছিন্ন। শৌচাগারসহ নিত্য প্রয়োজনে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে।

২০ শয্যার এ ট্রমা সেন্টারে একজন করে অর্থোপেডিক (হাঁড়ভাঙা) চিকিৎসক, অবেদনবিদ (এ্যানেস থেসিয়া) ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), তিন জন জ্যেষ্ঠ সেবিকা (নার্স), একজন করে ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিওগ্রাফার), ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান (প্যাথলজি), ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট, গাড়ি চালক, অফিস সহকারী, ওয়ার্ড বয়, আয়া, এমএলএসএস, সুইপার, কুক মশালছি ও দুইজন দারোয়ানসহ ২২টি নিয়মিত পদ রয়েছে।

২০১৪ সালে কর্মচারী সংখ্যা কমিয়ে একজন করে এমএলএসএস,  সুইপার, কুক মশালছি ও দুইজন দারোয়ান  পদে ‘কাজ নাই-মজুরি নাই’ (কানামনা) হিসাবে দেখিয়ে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদেরকে কাজ করানোর কথা বলা হয়। বর্তমানে চিকিৎসা কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে একজন ঝাড়ুদার নিয়োজিত করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে দুটি অপারেশন থিয়েটার (ওটি), এক্স-রে এবং ল্যাব বন্ধ রয়েছে। রোগ পরীক্ষার সুযোগ নেই। সেন্টারের ভেতরে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (স্যাকমো) জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘তিনি ট্রমা সেন্টারে প্রেষণে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সম্প্রতি তার প্রেষণও প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

তবে প্রতিদিনই আগত রোগীদের কথা শুনে ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয় বলে জানান তিনি। 

ট্রমা সেন্টারের পাশে মহিপাল এলাকার বাসিন্দা আবুল কাসেম ও নুরুল হকের অভিযোগ, প্রতিদিন মহিপালের ওপর দিয়ে হাজার হাজার যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক, টেম্পু, অটোরিকশা চলাচল করে। এতে প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনায় লোকজন আহত হয়। কিন্তু ট্রমা সেন্টারে গিয়ে কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কখনও আহতের সেখানে নিয়ে গেলে কোনো ধরনের চিকিৎসা না দিয়েই ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) সানজিদা খানম জানান, ট্রমা সেন্টারটি বর্তমানে শুধু বর্হিবিভাগ হিসেবে চালু রয়েছে। কোনো হাঁড় ভাঙা বা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগী ট্রমা সেন্টারে গেলে তাদেরকে সাথে সাথে ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ফার্মাসিস্ট বেলী মল্লিক জানান, কোনো কারণ ছাড়াই নয় মাস বেতন বন্ধ রয়েছে। তাই সংসার চালাতেও কষ্ট হচ্ছে। বেতন না পাওয়ায় অনেকেই নিয়মিত হাসপাতালে আসছেন না বলে জানান তিনি।

ফেনীর সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ট্রমা সেন্টারটির নানা সমস্যা নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেবকেও বলা হয়েছে। ইতোপূর্বে এ বিষয়ে অনেকবার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দিয়ে চিঠি দিয়েছি। চিকিৎসা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বরাদ্ধ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) বরাবরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ফেনী ট্রমা সেন্টারটি ২০০৬ সালের ৩ অক্টোবর চালু করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কেন্দ্রস্থল ফেনীর মহিপাল এলাকায় প্রায় এক একর জমির ওপর তিন কোটি টাকা খরচ করে ২০ শয্যার তিন তলা এ হাসপাতাল ভবন নির্মান করা হয়। ২০০৩ সালে নির্মান কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সালের ৩০ জুলাই ঠিকাদার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নিকট ভবনটি হস্তান্তর করেন। সূত্র : ইউএনবি।


আরো সংবাদ



premium cement
আরো দুই সদস্য বাড়িয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন রাবির নতুন জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে অপরাধ না করেও আসামি হওয়া এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে : মির্জা ফখরুল লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নানোৎসবে নেমে শিশুর মৃত্যু ধূমপান করতে নিষেধ করায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বড় বোনের বৌভাতের গিয়ে দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্র নিহত কোটালীপাড়ায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় বৃদ্ধ নিহত চুয়াডাঙ্গা দর্শনায় রেললাইনের পাশ থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবার রহমানের কবর জিয়ারত করলেন জামায়াত আমির আরব আমিরাতে ভারী বৃষ্টিপাত, বন্যায় ওমানে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠস্বর

সকল