১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ছেলের বায়না মেটাতে পারলেন না আলমগীর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেন দুর্ঘটনা - সংগৃহীত

ছেলেকে চট্টগ্রামের সাগর আর দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখানো হলো না বাবা আলমগীর আলমের। কসবার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে রেল দুর্ঘটনায় নিজে বেঁচে গেলেও একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে এখন পাগল প্রায় আলমগীর।

সোমবার দিবাগত রাতে চট্টগাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্ত:নগর ট্রেন তুর্ণা নিশিতা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্ত:নগর উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছে শতাধিক। নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি হবিগঞ্জে।

আলমগীরের একমাত্র সন্তান আরাফাতকে নিয়ে চট্টগ্রাম রওয়ানা হয়েছিলেন সাগর আর বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখাবেন বলে। বার্ষিক পরীক্ষার আগে ছেলের বায়না মেটানোর জন্য তিনি উদয়ন ট্রেনে রওয়ানা হয়েছিলেন।

এদিকে হবিগঞ্জের লিটল ফ্লাওয়ার কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ আলী মো: ইউসুফ। তার স্ত্রী ও এক বছরের সন্তান থাকে চট্টগ্রামে। স্ত্রী ও সন্তানকে দেখার জন্য তিনি চট্টগ্রাম রওয়ানা হয়েছিলেন। কিন্তু তাকে ফিরে আসতে হয় লাশ হয়ে।

হবিগঞ্জে শায়েস্তাগঞ্জ রেলস্টেশন থেকেই এ সব যাত্রীরা ট্রেনে উঠেছিলেন। হবিগঞ্জের অধিকাংশ যাত্রী ছিলেন 'ঝ' বগিতে। এই বগির যাত্রীরাই বেশি হতাহত হয়েছেন।

শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাইফুল ইসলাম জানান, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে কুমিল্লা, ফেনি, লাকশাম ও চট্টগ্রাম গন্তব্যে এক শ’ যাত্রী টিকেট কাটেন। এর মাঝে আসন ছিল ৫০টি। আর দাঁড়ানো ছিল ৫০টি।

হবিগঞ্জের আরো যারা নিহত হয়েছেন তারা হলেন চুনারুঘাট উপজেলার উলুকান্দি গ্রামের ফটিক মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (২০), উপজেলার মিরাশী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৩০) ও তার সম্পর্কে খালা কুলসুমা বেগম (৪৫), বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের আইয়ূব হোসেনের ছেলে আল-আমিন (৩৫) ও টাম্মুলিটুলা মহল্লার সোহেল মিয়ার শিশু মেয়ে আদিবা খাতুন (২)।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান নিহতদের পরিবারে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ত্রাণ ও পূণর্বাসন শাখা নিহত ও আহতদের তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। সব উপজেলা ও ইউনিয়নে বার্তা পাঠানো হয়েছে সবার তথ্য সংগ্রহ করার জন্য।

আহতদের মধ্যে হবিগঞ্জের ২৪ যাত্রীর পরিচয় পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পূর্ণবাসন অফিস এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে এই তথা জানা যায়। আহতদেরকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতরা হলেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বহুলা গ্রামের আলমগীর আলম, লাখাই উপজেলার বুল্লা গ্রামের রফিক মিয়ার ছেলে আলমগীর, আদম আলীর ছেলে মুখলেছ, নবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আতিক মিয়ার মেয়ে আফসা খাতুন, আনোয়ার হোসেনের মেয়ে আছমা আক্তার, বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা আলফু মিয়ার ছেলে আসিক মিয়া, নবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের ছেলে আতাউল, চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা ফরিদ মিয়ার ছেলে রাজন, বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা সাধন দাসের ছেলে সুব্রত দাস, নবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা চুনু মিয়ার মেয়ে আনোয়ারা, কেজু মিয়ার ছেলে রায়হান, চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা শহিদ মিয়ার ছেলে জনি, বানিয়াচং উপজেলার মুসা মিয়ার মেয়ে মীম, সোহেল মিয়া ও তার স্ত্রী নাজমা, রফিক উল্লাহর ছেলে রেনু মিয়া, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা আসকির মিয়ার ছেলে ধলাই মিয়া, মনজব আলীর ছেলে রাকিব, মনোহর উদ্দিনের ছেলে হাসান আলী ও আবুল কালাম।

- বাসস


আরো সংবাদ



premium cement