১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো একটি পরিবার, ঈদ আনন্দে বিষাদের ছায়া

- ছবি : নয়া দিগন্ত

ঈদ শেষে বাড়ী থেকে কর্মস্থলে ফেরা হলোনা জসিম উদ্দিনের। কুমিল্লা নগরীর ক্ষুদ্র খাবার হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ঈদুল আযহার পরদিন স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে গ্রামের বাড়ী গিয়েছিলেন আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য।

দুর্ঘটনায় ম্লান করে দিলো তাদের ঈদ আনন্দ। পুরো পরিবারই নিঃস্ব হয়ে গেল। একমাত্র বেঁচে থাকা শিশু সন্তান রিফাতও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

ছয় ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ জসিম উদ্দিন ছোটকাল থেকেই কুমিল্লা শহরে বিভিন্ন কাজ-কর্ম করতো। এক পর্যায়ে কুমিল্লা নগরীর গাংচর রিশি পট্টির ফটিক মিয়ার বিল্ডিং এর নিচ তলায় খাবার হোটেল দিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতেন।

একই বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন জসিম উদ্দিন। এ হোটেল ব্যবসা দিয়েই কোনমতে ৬ সদস্যের সংসার চালাতেন। দুই সন্তান শিপন ও হৃদয় বাবার সাথে হোটেলেই কাজ করতেন। ছোট দুই ছেলে হৃদয় ও রিফাত স্থানীয় একটি হাফেজিয়া মাদরাসায় হিফজ পড়তেন। আর ছোট্ট শিশু নিপু থাকতেন মায়ের সাথে। এভাবেই তাদের সংসার চলছিলো।

ঈদুল ফিতরে বাড়ীতে না যেতে পারলেও ঈদুল আযহার পরের দিন পুরো পরিবার নিয়ে আত্মীয় স্বজনদের ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামের বাড়ী যান। বেড়ানো শেষে গ্রামের বাড়ী থেকে মা এবং স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে শহরের দিকে ছুটছিলেন কর্মজীবনে। কিন্তু পথেই মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় পুরো পরিবার নিস্বঃ হয়ে যায়।

জসিম উদ্দিনের ভাই মহসিন আহাজারি করে জানান, ভাই-ভাবী-ভাতিজা-ভাতিজিদের পাশাপাশি মাকেও হারিয়ে আমরা জীবিত ৫ ভাইসহ পরিবারের সকলে আজ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। এদিকে চিকিৎসাধীন ভাতিজাকে আল্লাহ যেন নেক হায়াত দান করেন। আমরা যেন তাকে সঠিকভাবে চিকিৎসা করাতে পারি।
ভাতিজা বেঁচে থাকলেও আমাদের শেষ শান্তনা, শোক কিছুটা কমবে। ভাই কুমিল্লা ব্যবসা করলেও গ্রামের বাড়ীতে তেমন কিছু করতে পারেনি। আমরা অন্যান্য ভাইয়েরাও কৃষি কাজ করে চলি।

এদিকে নিহত জসিমের দুর্ঘটনাস্থল বাগমারার জামতলি, লালমাই থানা ও লালমাই হাইওয়ে থানা এলাকায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অপরদিকে রাতে জসিমের গামের বাড়ী নাঙ্গলকোটের ঘোড়াময়দানে লাশগুলো নেয়া হলে পুরো এলাকায় কান্নার রোল পড়ে যায়। হাজার হাজার লোক ওই গ্রামে ভিড় জমায়।

রোববার দুপুরে কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই উপজেলার বাগমারার জামতলীতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জসিম উদ্দিনের পরিবারের ছয়জনসহ ৮ জন নিহত হয়। নিহতরা সবাই সিএনজি অটোরিক্সার চালক ও যাত্রী। দুর্ঘটনার পর পর পুলিশ ও দমকল বাহিনী দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ তদারকি করে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই দিন ঢাকা থেকে লাকসামগামী তিশা পরিবহনের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে একইমুখী একটি মাইক্রোবাসকে অতিক্রম করতে গিয়ে বিপররীতমুখী নাঙ্গলকোট থেকে কুমিল্লাগামী সিএনজি চালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫জন নিহত হয়। আহত ২ জনকে পুলিশ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।

এদিকে দুর্ঘটনায় আহত জসিম উদ্দিনের পরিবারে একমাত্র বেঁচে থাকা শিশু পুত্র রিফাত (৮) কে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জন্য গুরুতর আহতবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়েছে। পুলিশ দুর্ঘটনা কবলিত বাস, মাইক্রোবাস, ও সিএনজি অটোরিক্সাকে আটক করছে।

তবে বাসের চালক ও মাইক্রোবাস চালক দুর্ঘটনার পর পর পালিয়ে যায়।

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন নাঙ্গলকোটের ঘোড়াময়দান গ্রামের জসিম উদ্দিন (৫৫), জসিমের স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪৫), জসিমের মা সখিনা বেগম (৭৫), জসিম উদ্দিনের বড় ছেলে শিপন (২৩), আরেক ছেলে হৃদয় (১৫), মেয়ে নিপু আক্তার (১৩), দোকানের কর্মচারী সাইমুন (১৫) এবং সিএনজি ড্রাইভার উপজেলার করপাতি গ্রামের জিতু মিয়ার ছেলে জামাল হোসেন (৩৫)।

এদিকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ নজরুল ইসলঅম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

লালমাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল আলম ঘটনাটি নিশ্চিত করে জানান, চালকের অসতর্কতা ও বেপরোয়া গতির কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল বাহিনী লাশ ও গাড়ীগুলো উদ্ধার করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement