২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সাতকানিয়ায় ২০ বছরের রেকর্ড বন্যা, দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এবং প্লাবিত পুরো এলাকায় বন্যার পানি। - নয়া দিগন্ত

দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে সাতকানিয়া উপজেলা। গত বিশ বছরের মধ্যে এমন বন্যা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ উপজেলার চরতী, আমিলাইশ, কেউচিয়া, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, পৌরসভা, ছদাহা, বাজালিয়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী রয়েছে সাড়ে তিন লাখ মানুষ। এসব এলাকায় কোনো কোনো বাড়ির ছাউনি পর্যন্ত ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। সাতকানিয়া উপজেলার ৯০ শতাংশই প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন।

সাতকানিয়াকে বন্যাতুর্গত এলাকা ঘোষণা করে সরকারিভাবে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। ইতোমধ্যে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমে বন্যার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা যথাযথভাবে প্রচার হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুরদানা ইয়াসমিন।

স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক কেন্দ্র কেরানিহাট পুরোটাই প্লাবিত হয়েছে। দোকানপাটে এক কোমর পানি। গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি বাহিত হওয়ায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে পড়ছে তারা। অনেক ছোট ছোট গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে গেছে। এক নাগাড়ে দুইদিন ধরে পানির নীচে রয়েছে চন্দনাইশের কসাইপাড়া এলাকায় মহাসড়ক। ৩ ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে দশ থেকে বারো ঘন্টা।

বার বার এই এলাকা কেন প্লাবিত হচ্ছে তার কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎপত্তি হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশা ডলু, টঙ্কাবতী, হাঙ্গর, শঙ্খসহ সাতাটি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেয়া হয়নি কখনো। প্রতি বর্ষায় নদীগুলোর পানি দুকুলের প্লাবিত করে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে জনজীবনে। এ বছর নদীগুলোর কয়েকটিতে পানি বিপদ সীমা গত ২০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী নিয়ে জরিপ শুরু হয়েছে। জরিপের ফলাফল দেখে নদীগুলোর বণ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সাধারণত দৈনিক ৫০ মিলিমিটার ভারী বৃষ্টিপাত হলেই আতংক নামে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশা সাঙ্গু নদীর দুই তীরবর্তী মানুষের মনে। এবার টানা দশদিন ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে চট্টগ্রামে। এতে ১২০ মিটার চওড়া আর দুইশত কিলোমিটার দৈর্ঘের নদীটির দুই তীরে এই আতংক আরো ব্যাপক হয়েছে। প্রতি বছরই তিন পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড়ী ঢল অবধারিত হলেও বাসিন্দারা বলছেন, এবারের মত খারাপ পরিস্থিতি গত কয়েক দশকে হয়নি। বর্তমানে বান্দরবান জেলার নিম্নাঞ্চল এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের ৯০ শতাংশ এখন পানির নীচে।

ভারত ও মিয়ানমারের পর্বতমালা থেকে নেমে আসা, কর্নফুলী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী, ইছামতি, বাকখালি ও ফেনী নদীর দুই পাড়ের চিত্র কমবেশি একই রকম। কোন নদীর তীরেই নেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। পাহাড়ী ঢলের সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয় ভাঙ্গন। এবার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা সাতকানিয়ার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ইব্রাহিম চৌধুরী জানিয়েছেন, ভাঙ্গন রোধে কিছু পদক্ষেপ চলমান থাকলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ না থাকায় তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোববার সাঙ্গু নদীর বান্দরবান পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার সোয়া তিন মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যা গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই নদীর প্লাবনের কারণে সাতকানিয়া-বান্দরবান সড়ক প্রতি বছরই পানিতে তলিয়ে যায়। খরস্রোতা এই নদীর কমপক্ষে ২০ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিং করতে হবে, সেই সাথে নিতে হবে বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। যার জন্য একটি জরিপ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন র্বোড চট্টগ্রামের নির্বাহি প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা।

তিনি আরো বলেন, সাঙ্গুর মত বন্যা সৃষ্টিকারি অপর নদী মাতামুহুরী নিয়েও একই ধরনের জরিপ শুরু হয়েছে। তবে, এই জরিপ শেষে তার সুপারিশ বাস্তবায়নে সময় লাগবে আরো কয়েক বছর।

লোহাগাড়া ডলু খালের ভাঙ্গন

এদিকে লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর, পুটিবিলা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে ডলু নদীর ভাঙ্গনে বাড়িঘর বিলীন হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। আধুনগর ইউনিয়নের সরদানী পাড়ায় ডলু নদীর ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ১৫ টি বাড়ি। এই এলাকায় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকায় নির্ঘুম রাতযাপন করছেন শত শত পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দা গিয়াস উদ্দিন জানান, আধুনগর বাজার হতে মছদিয়া হয়ে গারাঙ্গিয়ার আলুরঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সওদাগর পাড়া, সিপাহী পাড়া ও মছদিয়া বড়ুয়া পাড়ার প্রায় ৫-৬ হাজার লোক যাতায়াত করে। এছাড়াও মছদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজী সামশুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আধুনগর উচ্চ বিদ্যালয়, গারাঙ্গিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে সড়কের একাধিক স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ডলুর ভাঙ্গন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

 


আরো সংবাদ



premium cement