১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চাঁদপুরের ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষকে বেদম গণপিটুনি

চাঁদপুরের ছেলেধরা সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষকে বেদম গণপিটুনি - ফাইল ছবি

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে শতধিক জনতা দলবদ্ধ হয়ে ছেলেধরা সন্দেহে দুইদিনে আশি বছরের এক নারী ও মধ্য বয়সের এক পুরুষকে বেদম পিটুনি দিয়েছে। তাদের দুই জনই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের উদ্ধার করেছে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ। দুই জনেরই পরিচয় পাওয়া গেছে।

ঘটনা দু’টি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫নং ও ৫ নং ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামে। নিছক একটি গুজব ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ছেলে ধরার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবুও স্কুলে ছাত্রসংখ্যা কমে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কোনো যাচাই না করেই আতংকে ভুগছেন অভিভাবকেরা। গুজবে কান না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন পুলিশের ওসি আব্দুর রকিব। এদিকে এমন পৈশাচিক ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি ইউনিয়নের মিজান ভদ্র জানিয়েছেন, নারিকেলতলা গ্রামের নোয়া বাড়ির খোরশেদ আলমের ঘরের পাশ দিয়ে দুপুরে একজন নারী হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাকে দেখে বাড়ির নূর আলমের মা চিৎকার দেন। এতে বাড়ির কয়েকজন লোক ছুটে গিয়ে ধমকিয়ে তাকে একথা সে কথা জিজ্ঞেস করেন। ছেলেধরা আটক হয়েছে বলে মূহুর্তে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। শত শত লোক সেখানে ছুটে যান। এক পর্যায়ে উৎসুক জনতা তাকে বেদম পেটানো শুরু করেন। এতে শিশু কিশোররাও অংশ নেন।

পিটুনী খেয়ে ওই নারী বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। তারপরও জনতার উগ্রতা থেকে রেহাই পাননি নারী। এক পর্যায়ে কিছু সংখ্যক লোক তাকে সংশ্লিষ্ট ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে যান। ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল পাটওয়ারী থানায় খবর দেন। এতে এ.এস.আই. মঞ্জুর আলমসহ এককদল পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান।

পুলিশ জানায়, গণপিটুনীর শিকার নারীর বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলার পশ্চিম সকদী গ্রামে। তার নাম জুলেখা বেগম (৮১) স্বামীর নাম মুসলিম খাঁ। তিনি বিভিন্ন গ্রামে ও বাড়ি বাড়ি ঘুরে জীবন ধারণ করেন। পুলিশ জানিয়েছে বয়স হওয়ার কারণে তিনি গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না।

এদিকে একই উপজেলার ১৫ নং রূপসা ইউনিয়নের রায়পুর উপজেলামুখি নারিকেলতলা এলাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কে অপর ঘটনাটি ঘটে বুধবার বিকালে। এলাকাবাসী জানান, সড়ক ধরে হাঁটছিলেন ওই ব্যক্তি। প্রথমে তার পিছু নেয় কয়েকজন কিশোর। এরপর কানাঘুষা হতে হতে তার আশেপাশে জড়ো হয় কয়েক শ’ জনতা। তাকে এ কথা সেকথা জিজ্ঞেস করে। এক পর্যায়ে ছেলেধরা সন্দেহে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একদল জনতা। তারা তাকে বেদম মারধর করে। এতে তিনি নুয়ে পড়েন।

খবর পেয়ে ফরিদগঞ্জ থানার এস.আই. সুমন্ত ওই ব্যক্তিকে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার বিষয়ে রাঙ্গামাটির বরকল থানায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। উদ্ধারকৃত ব্যক্তিকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে জানায়, রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার কলাবানিয়া গ্রামে তার বাড়ি। তার নাম জাহাঙ্গীর আলম (৩৪)। পিতার নাম আব্দুল গণি।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার সোনালী বালিকা উচ্চ বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক এস.এম. মিজানুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ছেলেধরা আতংকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।

এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইন-চার্জ আব্দুর রকিব জানান, এসব নিতান্তই গুজব। গত কয়েকদিনে এমনি করে আমাদের থানা থেকে কারও সন্তান হারিয়ে যাওয়ার একটি জিডিও হয়নি। অহেতুক নিরীহ মানুষের ওপর এই পাশবিকতা। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, কারও প্রতি কোনো সন্দেহ হলে থানা পুলিশকে খবর দিন, আইন হাতে তুলে নেবেন না। এক পশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এমন পৈশাচিক ঘটনায় মামলা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement