২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্বামীর বিমাতা ভাইদের ষড়যন্ত্রের শিকার ৬০ বছর বয়সী বিধবা রাবেয়া খাতুন

বিক্রি করে দেয়া ভিটিতে দাড়িয়ে অসহায় বিধবা রাবেয়া ও তার মেয়ে - নয়া দিগন্ত

আশুগঞ্জে স্বামীর বিমাতা ভাইদের ষড়যন্ত্রে বসতভিটি বিক্রি করে এক বিধবা নারী অন্যের বাড়ি আশ্রয় নিয়ে অসহায় দিন যাপন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার বড়তল্লা গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুছের বিধবা স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৬০) বুধবার সকালে স্থানীয় প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে এমন অভিযোগ করে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। পরে সাংবাদিকদের একটি টিম সরেজমিনে গেলে বিস্তারিত তথ্য বেড়িয়ে আসে।

জানা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলার বড়তল্লা গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুছের বিধবা স্ত্রী রাবেয়া খাতুনের (৬০) কোন পুত্র সন্তান নেই। দুই মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন হতদরিদ্র পরিবারের ছেলের কাছে। দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পূর্বে তার স্বামী আব্দুল কুদ্দুছ মারা যান। তখন থেকে তিনি নিজের স্বামীর পৈত্রিক ও ক্রয়সূত্রে মালিকানাধীন পৌনে নয় শতাংশ ভিটাতেই বসবাস করেছিলেন। স্বামী মারা যাওয়ার কয়েক বছর যেতে না যেতেই স্বামীর বিমাতা ভাই বাবুল মিয়া, ফেরদৌস ও শামীম এবং ভাতিজা মিজান (বিমাতা ভাইয়ের ছেলে) বাড়ীটি অবৈধভাবে দখল করে নিতে নানা ফন্দি ফিকির শুরু করে। সে লক্ষ্যে তারা মাঝে মধ্যেই রাবেয়া খাতুনের উপর পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে তার বসতঘরটিও আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। পরে আগুনের ঘটনায় থানায় মামলা হলে কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে রাবেয়ার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়া।

এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ বৈঠক করা হলেও স্বামীর বিমাতা ভাইদের দাপটের কাছে কোন প্রকার সমাধান দিতে পারেনি স্থানীয় সালিশ কারকরা। এতে করে দখলদারদের অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি মামলা-মোকদ্দমা ও দেন-দরবারে ঋণগ্রস্ত হয়ে পরেন বিধবা রাবেয়া। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ৬ মার্চ তিনি বাড়িটি একই উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী খোদেজা বেগমের কাছে বিক্রি করে দিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেন। বাড়ি বিক্রিত অর্থ দিয়ে কিছুটা ঋণমুক্ত হতে পারলেও বর্তমানে চলার কোন অবলম্বন নেই ৬০ বছর বয়সী এ বিধবা নারীর । খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করছেন তিনি। অধিকন্তু দরিদ্র শ্বশুর বাড়িতে দুই মেয়ের জীবনও চলছে অতি কষ্টে।

এরই মধ্যে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে আরেকটি দরবার এসে পরেছে এই অসহায় বিধবার ঘাড়ে। তার নিকট থেকে কিনে নেয়া বাড়ির বর্তমান মালিককেও অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে রাবেয়ার স্বামীর বিমাতা ভাই ও ভাতিজা। ফলে সঙ্গত কারণেই এই বাধা মোকাবিলা করতেও বিক্রেতা হিসেবে রাবেয়াকে টানা হচ্ছে।

রাবেয়া খাতুন জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর মিরাস (উত্তরাধিকার আইন) অনুযায়ী বিমাতা ভাইয়েরা ওয়ারিশ না হওয়ায় ফরায়েজ অনুযায়ী তিনি এবং তার দুই মেয়ে পোনে নয় শতাংশ বাড়ির উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক হন। কিন্তু নানা ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের ফলে তা বিক্রি করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ‘পুত্র সন্তান না থাকা এবং কন্যা সন্তানের মা হওয়াই আমার জীবনে একমাত্র অভিশাপ।’

এ ব্যাপারে বাড়িটির নতুন ক্রেতা খোদেজা বেগমের স্বামী আবুল কাশেম বলেন, মিরাসি আইনে ফরায়েজ অনুযায়ী রাবেয়া খাতুন ও তার দুই মেয়ে এ বাড়ির ওয়ারিশ সূত্রে স্বত্ববান হিসেবে ৮.৭৭ শতাংশ ভূমিতে তাদের নামজারি হবার পরই আমরা প্রতিবেশীসহ সকলকে জানিয়ে যথাযথ মূল্যে তা ক্রয় করেছি। কিন্তু রাবেয়ার স্বামীর বিমাতা ভাইয়েরা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাদেরকে বাড়ির কাজ করতে বাধার সৃষ্টি করছে।

তবে রাবেয়ার স্বামীর বিমাতা ভাইয়ের ছেলে মিজান দাবি করেন, তার চাচার চিকিৎসার জন্য বাড়িটি তার পিতা বাবুল মিয়ার নিকট বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। ননজুডিসিয়াল স্টাম্পে তার পিতা বাবুল মিয়া ও চাচা আব্দুল কুদ্দুছের বায়নাপত্র দলিলও রয়েছে। কিন্তু আব্দুল কুদ্দুছ মারা যাওয়ায় দলিল সম্পাদন সম্ভব হয়নি। কয়েক বছর পূর্বে তার পিতা বাবুল মিয়াও মারা গেলে বিষয়টি আরো জটিল হয়েছে।

কিন্তু রাবেয়া বলেন, ‘অনেকবার এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যানের কাছে গেছি। কেউ সমাধান করে দিতে না পারায় ঘর বাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব হইছি। এরপরেও দরবার যেন আমার পিছ ছাড়েনা। আমারে আপনেরা মাইরা ফেলান”। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাবেয়া। 


আরো সংবাদ



premium cement