১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
যাতনায় গড়া মা-মেয়ের গল্প 

এবার ক্যান্সারের সাথে লড়ছেন লিপির মা

এবার ক্যান্সারের সাথে লড়ছেন লিপির মা - নয়া দিগন্ত

মা আর মেয়ে ছাড়া পৃথিবীতে তাদের আর কেউই নেই। মাকে সুখে রাখতে ৩৪ বছর বয়সী লিপি আক্তার নিজের জীবনের সমস্ত সুখের স্বপ্নকে বিসর্জন দেন। কিন্তু মা-মেয়ের সুখ যেন কপালে নেই। তিন বছর আগে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন মেয়ে। সহৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতায় দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন। যখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবেন, তখনই ধরা পড়লো মা রোজিয়া বেগমের ক্যান্সার। এখন মাকে নিয়ে শুরু লিপির আরেক সংগ্রাম। চট্টগ্রামের এই মা-মেয়ের সংগ্রামের গল্প যেন কল্প-কাহিনিকেও হার মানায়।

মিরসরাই উপজেলার তারাকাটিয়া গ্রামে তাদের জন্ম। মাত্র এক বছর বয়সে বাবা-মা হারিয়ে এতিম হয়ে পড়েছিলেন রোজিয়া। বিয়ের পর অল্প সময়ে তার স্বামীও মারা যান। এক ছেলে এক মেয়ে ছিলো তার সংসারে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে রোজিয়ার ছেলেটিও মারা যায়। সেই থেকে তাদের পরিবার বলতে শুধুই মা আর মেয়ে। মেয়ে লিপি আক্তারের বয়স যখন ১২ বছর, তখনই তিনি চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। সেখান থেকে উপার্জিত অর্থে চলে তাদের সংসার।

নগরীর বন্দরটিলা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বেশ সুখেই কাটছিলো তাদের জীবন। ২০১৬ সালে লিপির ক্যান্সার ধরা পড়লে সবকিছু তছনছ হয়ে পড়ে। মায়ের সঙ্গে জীবন কাটিয়ে দিতে নিজে বিয়ে পর্যন্ত করেননি। সেই লিপি ঘোর চিন্তায় পড়েন, তিনি না থাকলে মায়ের কি হবে! এ বিষয়ে তখন দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এরপর সহৃদয়বান ব্যক্তিদের ব্যাপক সাড়া জাগে। প্রায় ১৩ লাখ টাকা খরচ করে ভারতের ভেলোরে চিকিৎসা শেষে লিপি ক্যান্সারমুক্ত হন।

এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। দুই বছর পর এবার ক্যান্সার ধরা পড়ে মায়ের। যে মাকে ঘিরে লিপির পৃথিবী, সেই মা এখন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘোর অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তিনি বর্তমানে হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৩৯ নম্বর বেডে ভর্তি আছেন।

হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, লিভার ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন রোজিয়া বেগম। ইতোমধ্যে একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরও একটি বড় অস্ত্রোপচার জরুরি। এরপর নিয়মিত কেমোথেরাপি দিতে হবে।

লিপি আক্তার বলেন, ইতোমধ্যে নিজের জমানো এবং পরিচিতজনদের থেকে ধারে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। মায়ের চিকিৎসার জন্য তিনি আবারও সহৃদয়বান ব্যক্তিদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

লিপির চিকিৎসায় তহবিল সংগ্রহে এগিয়ে আসা সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন নয়াদিগন্তকে বলেন, ‘সেই জন্মকাল থেকে এই পর্যন্ত আঘাতের ক্ষত নিয়ে বেড়ে ওঠা রোজিয়া কিংবা ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে জিতে ফেরা লিপির জীবনের শেষ প্রান্তে কি আছে জানি না। হাজারও যাতনায় গড়া এই দুটি জীবনে আমরা সবাই মিলে আলো ফোটাতে চেয়েছিলাম। তাঁদের যে আর কেউই নেই।’

তিনি আরও বলেন, আবারও তাদের জন্যে সবার প্রতি নিবেদন করছি। আমরা তো যাকাতের তহবিল থেকেও তাদের জন্যে কিছু করতে পারি। আমাদের ছোট ছোট সহযোগিতায় তাদের দুটি জীবন আবারও আশা খুঁজে পেতে পারে।’

রোজিয়া বেগমের জন্য সহযোগিতা পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়:- ব্যক্তিগত হিসাব ‘লিপি’, হিসাব নম্বর ১৮৮ ১০৩ ৯৫০৯১, ডাচ বাংলা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বন্দরটিলা শাখা, চট্টগ্রাম। সহযোগিতা পাঠাতে পারেন ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে ০১৮৬৪২৩৫২৯৭।


আরো সংবাদ



premium cement