১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিতাস নদীর যেন মা-বাপ নেই

তিতাস নদী - নয়া দিগন্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের তিতাস ও বুড়ি নদী খননের নামে চলছে তামাশা। নদীর সীমানা নির্ধারণ না করেই চলছে ২৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে খনন কাজ। নদীর পাশে বাঁধ তৈরি করে মাটি ফেলার কারণে ছোট হয়ে যাচ্ছে তিতাস, পাল্টে যাচ্ছে নদীর গতিপথ, নষ্ট হচ্ছে নদীর পরিবেশ, ভাঙ্গনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নবীনগর শহর রক্ষা বাঁধে। বিশেষ করে লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশের গুরুত্বপূর্ণ নদীর এই জায়গাটিতে মাটি ফেলার (ভরাট) কারণে লঞ্চ চলাচলে চরম দূর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। কতিপয় প্রভাবশালী তাদের ইচ্ছামতো তিতাসকে গিলছে। এক বছরে খনন কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও যে গতিতে ড্রেজিং হচ্ছে তাতে ১ যুগেও নদীর খনন কাজ শেষ হবে কিনা সংশয় প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এই নদীর কোনো মা-বাপ নেই।
জানা যায়, ঐতিহ্যবাহি এই তিতাস নদীর উৎপত্তি মেঘনা নদী থেকে। শতশত মাঝি মাল্লা ও জেলেদের জীবিকা নির্বাহ ও হাজার হাজার একর কৃষি জমির সেচের একমাত্র মাধ্যম এই তিতাস ও তিতাসের কন্যাখ্যাত বুড়ি নদী। তিতাস দিয়ে প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভৈরব, নরসিংদীতে ৪০ টি লঞ্চ, শতাধিক স্পিডবোড ও ইঞ্জিত চালিত নৌকা চলাচল করে। উজানের পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পলি মাটি জমে তিতাস যখন নাব্যতা সংকটে নৌ- চলাচল বন্ধের উপক্রম ও প্রভাবশালীদের অব্যাহত দখল আর পরিবেশ বিনষ্টকারীদের ফেলা বর্জ্যের দূষণে অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ১ম পর্যায়ে ২৪ টি নৌ-পথ শীর্ষক প্রকল্পে নবীনগর থেকে কসবার কুটি বাজার পর্যন্ত তিতাস ও বুড়ি নদীর ২৪ কিলোমিটার নৌ-পথে নাব্যতা উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন অংশে ১৮০ থেকে ১২০ ফুট প্রস্থ আর ১২ ফুট গভীর করার জন্য ২৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের অধীনে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড এর মাধ্যমে নবীনগরের তিতাস ও বুড়ি নদীতে ড্রেজিং কাজ শুরু হয়। আগামী ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ সালের মধ্যে ২৪ কিলোমিটার নদী খনন কাজ শেষ হওয়ার কথা।
নবীনগর লঞ্চঘাটে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় যায়, নবীনগর লঞ্চঘাটের পূর্ব পাশের গুরুত্বপুর্ণ নদীর এই জায়গাটিতে বাঁধ দিয়ে মাটি ফেলার নামে দখলদারদের হাতে সুকৌশলে তুলে দেয়া হচ্ছে নদীর জায়গা। ফলে লঞ্চ চলাচলে নেমে আসবে চরম দূর্ভোগ। একই কারণে তিতাস ছোট হয়ে পাল্টে যাচ্ছে নদীর গতিপথ, হুমকির মুখে পড়বে নবীনগর শহর রক্ষা বাঁধ। মনগড়া ভাবে চলছে ড্রেজিং, আর মাটি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে লোক মুখে।
গত ৫ মাসে এ পর্যন্ত নদী খনন হয়েছে প্রায় ২ হাজার ফুট। এ ভাবে খনন কাজ চলতে থাকলে ১ যুগেও এই নদীর কাজ শেষ হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এলাকাবাসী বলেন, ওরা কি নদী খনন করতে আসছে নাকি নদী খননের নামে তামাশা করতে আসছে। নদীর সীমানা নির্ধারণ না করে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অপরিকল্পিতভাবে দায়সারা গোজামিলের কাজ হচ্ছে । নিয়মিত মাটি কাটা হলে এতদিনে মনতলা থেকে কনিকাড়া ব্রিজ পর্যন্ত নদী কাটা শেষ হয়ে যেত।
কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাইড ম্যানেজার উজ্জল বলেন, ডাইক তৈরি, পাইপ লাগানো ও মেকানিক্যাল কিছু সমস্যার কারণে কাজের কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমাদের সাথে সরকারের চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের আগেই নদী খননের কাজ শেষ হয়ে যাবে, প্রয়োজনে আরো ড্রেজার আনা হবে। ড্রেজারের মাস্টার শাহিনুর জানান, এ পর্যন্ত ২ হাজার ফুটের বেশি নদী কাটা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement