২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নয়া দিগন্তের সংবাদে প্রশাসনে তোলপাড়

বেতের আঘাতে ছাত্রের চোখ নষ্ট করা অভিযুক্ত শিক্ষক বহিষ্কার

বেতের আঘাতে ছাত্রের চোখ নষ্ট করা অভিযুক্ত শিক্ষক বহিষ্কার
শিক্ষকের বেতের আঘাতে চোখ হারাতে বসা শিক্ষার্থী রিফাত মিয়া - নয়া দিগন্ত

ক্লাসে পড়া না পারার মূল্য দিতে হল নিজের একটি চোখের মাধ্যমে, ফলে সারা জীবনের জন্য দু-চোখে আলো দেখা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক স্কুল শিক্ষার্থী। ঘটনাটি গত ১০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটে। শিক্ষকের বেতের আঘাতে ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর বাম চোখ নষ্ট হওয়ার পথে। ভূক্তভোগী ছাত্রের নাম মোঃ রিফাত মিয়া।

এদিকে এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নয়া দিগন্ত অনলাইনে একটি সংবাদ প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা প্রশাসনে। সংবাদটি নজরে আসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনির। সংবাদটি নয়া দিগন্ত অনলাইনে প্রকাশের পর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি অভিযুক্ত শিক্ষককে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে।

অন্যদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিস) করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। তাছাড়া মঙ্গলবার রাতে নবীনগর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে তদন্ত কার্যক্রম। তদন্ত কমিটিকে এক কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নিদের্শ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম।

এদিকে বুধবার সকালে ঘটনাস্থল বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও একাডেমিক সুপারভাইজার।

উল্লেখ্য, উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামের সিজিল মিয়ার ছেলে মোঃ রিফাত মিয়া বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। গত ১০ এপ্রিল উক্ত বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক মোঃ জাবেদ এর দ্বিতীয় ঘণ্টার সময় রিফাত ইংরেজি পড়া না পারার কারণে বেত্রাঘাত করেন ওই শিক্ষক। এ সময় শিক্ষকের বেত গিয়ে রিফাতের বাম চোখে আঘাত করে।

এ সময় তার সহপাঠীরা রিফাতকে উদ্ধার করে প্রথমে তার চোখে পানি দেয়। কিন্তু তারপরও অবস্থার উন্নতি না হয়ে যন্ত্রনা আরো বাড়লে তাকে স্থানীয় ডাক্তার মাহবুবের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি চোখের অবনতি দেখে তাৎক্ষণিক রিফাতকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এরপর রিফাতের বাবা তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য রিফাতকে ঢাকা ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে প্রেরণ করে। চিকিৎসকরা জানান, তার চোখ অপারেশন করলেও ভালো না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অপারেশন করার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

এ ব্যাপারে বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে প্রথমে অস্বীকৃতি জানান। পরে তিনি বলেন, আমরা জেনেছি অন্য একটি ছাত্রকে বেত দিয়ে শাসন করার সময় বেত ভেঙ্গে গিয়ে রিফাতের চোখে লাগে।

এ বিষয়ে আহত রিফাত জানান, ক্লাসে ইংরেজি পড়া না পারার কারণে জাবেদ স্যার বেত দিয়ে আমাকে বেত দিয়ে মারছিলেন। এসময় বেত ভেঙ্গে গিয়ে আমার চোখে আঘাত করে।

বিদ্যাকুট অমর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি সফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকের বেতের আঘাতে ছাত্রের চোখ নষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে গিয়েছি। আহত শিক্ষার্থীর সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি। আহত ছাত্র রিফাতের চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করতে আমি প্রস্তুত আছি।

তিনি আরো বলেন, অভিযুক্ত খন্ডকালীন শিক্ষক মোঃ জাবেদকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মোকারম হোসেন বলেন, ক্লাসে বেত নিয়ে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ঘটনায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে শোকজ করা হয়েছে। তাকে দুই কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে আমি ওই বিদ্যালয়ে যাচ্ছি এবং আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে তার বাড়িতেও যাব।

এদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে শিক্ষকরা ক্লাসে বেত নিয়ে যেতে বাধ্য হন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, গত দুই বছরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কোনো ক্লাস নেননি। তিনি স্কুলে কোচিং বাণিজ্য ও গাইড বই বিক্রি করেন। স্কুলের ফান্ড থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ করে এই প্রধান শিক্ষকের জন্য একটি বাসা তৈরি করা হলেও তিনি সেখানে থাকেন না। গত ১০ এপ্রিল তিনি স্কুলে ছিলেন না, কিন্তু হাজিরা খাতায় ঠিকই স্বাক্ষর পাবেন।

এ বিষয়ে আহত স্কুলছাত্র রিফাতের বাবা বলেন, বেতের আঘাতে আমার ছেলের বাম চোখের মনি গলে গেছে। আমার ছেলে এখন দেখতে পারে না, চোখ অপারেশন করাতে যে টাকার প্রয়োজন আমার কাছে সেই টাকা নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ রিফাতের চিকিৎসায় সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে না। বাবা হয়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে ছেলের অন্ধ হয়ে যায়োর আশঙ্কায় মন আর সইছে না।

ছেলের দ্রুত সুস্থ্যতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া চেয়ে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement