১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আত্মসমর্পণের মধ্যেই ‘বন্দুকযুদ্ধ’!

আত্মসমর্পণের মধ্যেই ‘বন্দুকযুদ্ধ’! - ছবি : সংগৃহীত

কক্সবাজারে ইয়াবা পাচারকারীদের আত্মসমর্পণের তোড়জোড় চলার মধ্যেই চলছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনা। গত রোববার থেকে সোমবার ২৪ ঘণ্টায় নিহত হয়েছে দুইজন এবং এ বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১১ জন ইয়াবা কারবারির লাশ পড়েছে টেকনাফে। আত্মসমর্পণ করার আয়োজনের মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একের পর এক নিহতের ঘটনায় এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে যেখানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দিয়েছে সরকার, সেখানে ‘ক্রসফায়ার’ কেন । তবে পুলিশ বরাবরই বলছে তারা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাচ্ছে।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার রাত ২টায় টেকনাফের দমদমিয়ায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শামসুল (৩৯) প্রকাশ বার্মাইয়া শামসু নামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত এক মাদকবিক্রেতা নিহত হয়েছে। সে হ্নীলার সিকদারপাড়ার মরহুম মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দু’টি দেশীয় বন্দুক, ২০ হাজার ইয়াবা, ১২ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। এ সময় টেকনাফ থানার উপপরিদর্শক রাসেল সহকারি উপপরিদর্শক ফয়েজ ও মোহাম্মদ আমির আহত হয়েছেন। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সাংবাদিকদের জানান, মাদকবিক্রেতা শামসুকে পুলিশ গ্রেফতার করে তার স্বীকারোক্তি মতে সোমবার রাত ২টায় হ্নীলা দমদমিয়া চেকপোস্টের কাছে অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করতে যায়।

এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা শামসুর সহযোগিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে মাদকবিক্রেতারা পিছু হটলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দু’টি দেশীয় বন্দুক, ২০ হাজার ইয়াবা ও ১২ রাউন্ড গুলি এবং শামসুর লাশ উদ্ধার করে। রোববার ভোরে সাড়ে ৪টায় টেকনাফের জালিয়াপাড়া এলাকায় পুলিশ-বিজিবির সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোস্তাক আহমদ মুছু নামে অপর এক মাদকবিক্রেতা নিহত হয়েছে। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি দেশীয় বন্দুক ও ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধ’ কিংবা ‘ক্রসফায়ারের’ মধ্যেই আত্মসমর্পণের জন্য কক্সবাজারে জড়ো হতে শুরু করেছে তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিরা। ইতোমধ্যে তালিকার শীর্ষে থাকা টেকনাফের এক সাবেক এমপির নিকটাত্মীয়সহ শতাধিক ইয়াবা কারবারি জড়ো হয়ে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে প্রকাশ।

একই সাথে তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার তদবিরও চালিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। কক্সবাজারের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান, বদির ঘনিষ্ঠজন মৌলভী আজিজ, মৌলভী রফিকসহ কয়েকজন ‘ইয়াবা গডফাদার’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার জন্য জোর তদবির শুরু হয়েছে। এই কারণে মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিষয়ে আবারো যাচাই করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা পুলিশ সূত্র বলছে, ইয়াবা কারবারিরা নিজ উদ্যোগে আত্মসমর্পণের জন্য জড়ো হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে কক্সবাজার শহরে এ আত্মসমর্পণ অনষ্ঠান হবে। তবে এখনই প্রশ্ন উঠেছে টেকনাফ সীমান্তে যে বা যারা ইয়াবা পাচারের জন্মদাতা তথা গডফাদার তারা কি আত্মসমর্পণ করবে প্রাপ্ত তথ্য মতে, টেকনাফের এক ইউপি সদস্য ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি আত্মসমর্পণের জন্য টেকনাফ থেকে কক্সবাজারে রওনা দেন। অনেকেই তার পথ ধরে। আবার অনেকেই গোপনে কক্সবাজার হাজির হয়।

ইতোমধ্যে টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ফুফাতো ভাই কামরুল হাসান রাসেল, ভাই মো: শফিক, ভাগনে সাহেদুর রহমান নিপু ও তালতো ভাই (বেয়াই) সাহেদ কামাল, চাচাতো ভাই ও বোন জামাই মো: আলমসহ শতাধিক মাদক কারবারি ও গডফাদার কক্সবাজারে জড়ো হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, সারা দেশে মাদক কারবারি রয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে কক্সবাজার জেলায় মাদক কারবারি এক হাজার ১৫১ জন। গত বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত ৫৩ জন মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফা অভিযানে নিহত হয় ১১ জন। কিন্তু এর পরও ইয়াবা কারবারিদের তৎপরতা বন্ধ করা যায়নি। এখন টেকনাফসহ কক্সবাজার শহরে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে সরকার যেখানে মাদক কারবারিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সুযোগ দিয়েছে এবং অনেকেই আত্মসমর্পণ করতে শুরু করেছে, সেখানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ ঘটতে থাকলে আত্মসমর্পণ কিভাবে সফল হবে।


আরো সংবাদ



premium cement