২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৪০ বছর ধরে অন্যের ‘কবর’ খুঁড়ে চলছেন 

মোহাম্মদ আলী - নয়া দিগন্ত

এক বছর বা দুই বছর নয় দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরেই মৃত মানুষের জন্য তাদের শেষ ঠিকানা কবর খুঁড়ে চলছেন তিনি। প্রায় পাঁচ শতাধিক কবর খুড়েছেন এবং সেগুলোতে শুয়েছেনও।

মোহাম্মদ আলী, বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। কিন্তু তার মনোবল ও পরিশ্রম দেখে মনে হয় এখনো ২৫ বছরের টগবগে যুবক। পেশায় একজন কৃষক। কৃষি কাজের পাশাপাশি একটি মহৎ কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। কোথাও মানুষ মারা যাওয়ার খবর তার কানে আসলে শত ব্যস্ততা রেখে ছুটে যান কবর খুঁড়তে। এভাবে ৪০ বছর ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে কবর খুঁড়ে চলছেন তিনি।

মোহাম্মদ আলীর বাড়ি মিরসরাই উপজেলার ১ নং করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা জিলতলী এলাকায়। তার পিতার নাম আবদুল গনি। কুমিল্লা থেকে ৫০ বছর আগে কয়লাতে এসে বাড়ি করেছেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী জানান, যখন তার বয়স ৩০ বছর তখন থেকে তিনি কবর খুঁড়েন। মানুষ মারা গেলে কবর খোঁড়ার ডাক পড়ে। সরঞ্জাম নিয়ে চলে যান কবর খুঁড়তে। আবার মানুষ মারা যাওয়ার খবর তার কানে আসলে শত কাজ রেখে ছুটে যান তিনি। তার এলাকা ও আশপাশের প্রায় ১৬টি কবরস্থানে ৪০ বছর ধরে প্রায় ৫ শতাধিক কবর খুঁড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, প্রথমে লাশ দেখে কবরের পরিমাপ করি। তারপর কবর তৈরির কাজ শুরু করি। পুর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হওয়ার পর শুয়ে দেখি ঠিক হয়েছে কি-না। কবর খুঁড়ার জন্য নিজের টাকায় দুটি খন্তা, দুটি কোদাল, দুটি তেরপাল, বালতি, বেলচা, দা, করাত কিনেছেন মো: আলী। তিনি সৈয়দপুর, ঝিলতলী, মরা কয়লা, শুভলছড়ি, গুজা ও পাশ্ববর্তি ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কবর খুঁড়ে থাকেন। এজন্য তিনি কোন পারিশ্রমিক নেন না।

অন্যের জমি বন্ধক রেখে চাষাবাদ করে চলে যাচ্ছে মো: আলীর সংসার। তিনি বলেন, এখনো আমি কঠোর পরিশ্রম করি। হয়তো এই কাজ করার কারণে আল্লাহর রহমতে আমার শরীরে কোন রোগ বালাই নেই। যতদিন বেঁচে থাকবো এই কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।

এই বিষয়ে করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, কবর খোঁড়া একটি মহৎ কাজ। এই কাজ সবাই করতে পারে না। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো এই কাজ করে থাকেন। মানুষ মারা গেলে নিজের শত কাজ রেখে ছুটে যান কবর খুঁড়তে। তাদের মধ্যে অন্যতম মোঃ আলী। তিনি ৪০ বছর ধরে অনেক কবর খুঁড়েছেন। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি।

তিনি আরো বলেন, গত বছর আমার ইউনিয়নে কবর খুঁড়ার কাজ করা প্রায় ১০জন কে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেছি এবং ব্যক্তিগত তহবিল থেকে প্রতিটি মসজিদে কবর খুঁড়ার সরঞ্জাম দিয়েছি। আমি মনে করে করি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য অনেককে সম্মানিত করা হয়। কিন্তু মানুষ মারা গেলে যারা ছুটে যায় তাদের কেউ খবর রাখে না। সকলের উচিৎ মো: আলীর মত মানুষদের সম্মান করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement