চট্টগ্রাম-১৫ আসনে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ চারদিনে ৬৪জন আটক

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে ততই বাড়ছে ধরপাকড়। গত ৪ দিনে সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ এই আসনের দুটি থানার অন্তত ৬৪জন ধানের শীষের কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত সোমবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম নগরীর বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিনকে। এদিকে সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারের তিব্র নিন্দা জানিয়েছেন লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান।

এছাড়া লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে লোহাগাড়া সদর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাস্টার আব্দুস সালাম, একই ইউনিয়নের মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম, পুটিবিলা ইউনিয়নের জিল্লুর রহমান ও চরম্বা ইউনিয়নের মমতাজ উদ্দিনকে।

এদিন চট্টগ্রাম নগরীর কোর্ট বিল্ডিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে পদুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানপ্রার্থী মোস্তাক আহমদ সবুজ ও মোঃ আখতারকে। এরআগে চুনতী ইউনিয়নের বনপুকুর এলাকা থেকে ১জন, আধুনগর বাজার থেকে ২জন, পদুয়া থেকে ২জন ও সাতগড় থেকে ১জনকে গায়েবি মামলায় আটক করে আদালতে চালান দেয়া হয়।

অন্যদিকে গত শুক্রবার সাতকানিয়া পৌরসভা, মাদার্শাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নির্বাচনী সভা করার সময় সর্বমোট ৫৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। বর্তমানে আটক আতঙ্কে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকা পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার ছেড়া, প্রচার গাড়িতে হামলা ও মাইক ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে নেতাকর্মীদের আটক ও হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক। এক বিবৃতিতে তিনি এই প্রতিবাদ জানান।

বিবৃতি তিনি বলেন, অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে চট্টগ্রাম-১৫ আসন তথা সাতকানিয়া লোহাগাড়ার সংসদ নির্বাচন হুমকির সম্মুখীন। প্রতিনিয়ত নৌকার প্রার্থীর নির্দেশে এলাকায় ধানের শীষের কর্মীদের অপহরণ, আক্রমণ, বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানি করা এবং প্রচারণায় বাধা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর সাতকানিয়ার মার্দাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দীনের নেতৃত্বে জামায়াত সেক্রেটারী ফরমান সিকদারকে মসজিদ থেকে অপহরণ করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে সাজানো নাটকের মাধ্যমে অস্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেজাম উদ্দীনের নেতৃত্বে দক্ষিণ রূপকানিয়া এলাকায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ গণসংযোগ ও মাইকিংয়ে বাধা দেয়া হয়।

একই উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য মনজুরের নেতৃত্বে ধানের শীষের কর্মী তারেক হোসাইনের বাড়িতে সশস্ত্র আক্রমণ চালানোর পর বাড়িতে অবস্থানরত মহিলাদের নির্যাতন ও প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করে।

অন্যদিকে লোহাগাড়ার আমিরাবাদ এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় নৌকা মার্কার নেতাকর্মীরা সাকিবকে অপহরণ করে বেধড়ক মারধর করে। পরে আহতাবস্থায় সাকিবকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। চরম্বা ইউনিয়নের ধানের শীষের কর্মী স্থানীয় প্রতিনিধি জসিম মেম্বারের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশির নামে হয়রানি ও নৌকা প্রার্থীর পক্ষে হুমকি দিয়ে আসে।

কলাউজানের চেয়ারম্যান ওয়াহিদের নেতৃত্বে ধানের শীষের প্রচার মাইকে বাধা ও গাড়ি থেকে মাইক খুলে নিয়ে কর্মীদের মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক আরো বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সর্বোচ্চ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা নৌকা মার্কার নেতাকর্মীদের অব্যাহত অপকর্মের আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিয়ে সকল প্রকার গ্রেফতার, অপহরণ, মারধর ও হুমকি প্রদান বন্ধ করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।