২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিয়ের দুইবছর পর জামাইয়ের বিরুদ্ধে শাশুড়ির অপহরণ মামলা!

দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকীতে মেয়ের জামাই ইমাম হোসেন রিপনের হাতে উপহার তুলে দেন শাশুড়ি জেসমিন সুলতানা - নয়া দিগন্ত

মেয়ের মা-বাবা হিসেবে ছেলে পছন্দ করে আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেয়ার দুইবছর পর জামাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন এক শাশুড়ি। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

ইসরাত জাহান ইরার মা জেসমিন সুলতানা বাদি হয়ে গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় মেয়ের জামাই মোঃ ইমাম হোসেন রিপন ও তাঁর বড় ভাই মোঃ কামরুল হাসান লিটনকে আসামী করা হয়।

জানা যায়, মিরসরাই পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মৃত আবুল হোসেন সওদাগরের পুত্র ইমাম হোসেন রিপনের সাথে একই উপজেলার শাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী গ্রামের ইসমাইল সওদাগর বাড়ির প্রবাসী হুমায়ুন কবিরের মেয়ে ইসরাত জাহান ইরার ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর আকদ হয়। দুইবছর পর ইসরাতকে তাঁর স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে মর্মে বিবাহের ফর্দে উল্লেখ করা হয়।

বিয়ের পর ইরা তার মা-বাবার সাথে মিরসরাই সদরে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। বিয়ের পর থেকেই স্বামী রিপন নিয়মিত শ্বশুরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। পাশাপাশি ইসরাতের মা-বাবা মেয়ে ও জামাই রিপনকে নিয়ে একসাথে বিভিন্ন জায়গায় পারিবারিক ভ্রমণেও গেছেন।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর সবার সাথে ইরার বাবা মা রিপন-ইরার বিবাহ বার্ষিকীও পালন করেছেন। এসময় শাশুড়ি জেসমিন সুলতানা জামাই ইমাম হোসেন রিপনের হাতে বিবাহ বার্ষিকীর উপহারও তুলে দেন।

বিগত কয়েক মাস ধরে ইসরাতের বাবা মায়ের সাথে জামাই রিপনের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। রিপনকে ডিভোর্স দিতে ইসরাত ইরাকে তারা একাধিকবার চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু ইসরাত স্বামীকে ডিভোর্স দিতে রাজি হয়নি।

এরপর ইসরাত ও তাঁর স্বামী রিপন মিরসরাই থেকে চট্টগ্রাম শহরে চলে যায় এবং সেখানে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। নিজের অমতে মেয়েকে নিয়ে জামাই অন্যত্র চলে যাওয়ায় গত ২৯ নভেম্বর ইসরাতের মা জেসমিন সুলতানা ইসরাতের স্বামী ইমাম হোসেন রিপন ও তাঁর বড় ভাই কামরুল হাসান লিটনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় এই দুই অভিযুক্তের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, কলেজে যাওয়ার সময় তার মেয়ে ইরাকে অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো। গত ২৫ নভেম্বর মাইক্রোবাসে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে মেয়েকে আটকে রেখে রিপন ও লিটন ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

রিপনের বড় ভাই কামরুল হাসান লিটন বলেন, ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর শরিয়তের সকল নিয়মনীতি মেনে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে আমার ছোটভাই রিপনের সাথে ইসরাতের আকদ সম্পন্ন হয়। দুইবছর পরে অনুষ্ঠান করে আমাদের বাড়িতে বউকে নিয়ে যাওয়ার কথা। উভয়পক্ষের মধ্যে ভালো সম্পর্ক চলছিলো। কিছুদিন যাওয়ার পর ইসরাতের মা আমার ভাইকে বলে,‘আমি ভেবেছিলাম তোমার কাছে অনেক টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু তেমন কিছুতো নেই।’ পরে রিপনকে নিজের পরিবারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তার শ্বশুর বাড়ির সাথে থাকার প্রস্তাব দিলে রিপন সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।

লিটন আরো বলেন, এরপর থেকে রিপনকে ডিভোর্স দিতে ইসরাতকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে তার মা-বাবা। একপর্যায়ে ডিভোর্সের দাবি উপেক্ষা করে ইসরাত রিপনকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু তিনি আদালতে মিথ্যা অপহরণের নাটক সাজিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

এই বিষয়ে রিপনের স্ত্রী ইসরাত জাহান ইরা বলেন, একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে কি জন্য অপহরণ করবে! আমাকে আমার মা একাধিকবার রিপনকে ডিভোর্স দিতে চাপ প্রয়োগ করে। আমাকে বলে তোকে আরো ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেব, তুই ওকে ডিভোর্স দে। তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী সুখে-শান্তিতে থাকতে বাবার বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে এসেছি। বর্তমানে আমি গর্ভবতী। আমার মা-বাবা পছন্দ করে বিয়ে দেয়ার দুইবছর পর কেনো এগুলো করছে বুঝতে পারছি না।

জানা গেছে, শাশুড়ি জেসমিন সুলতানা আদালতে মামলা করার আগে তার মেয়ে বর্তমানে বসবাসরত এলাকায় চট্টগ্রাম শহরের খুলশি থানায় অপহরণ মামলা করতে যায়। ১৭ নভেম্বর থানার একজন এসআইয়ের উপস্থিতিতে মেয়ের বাবা হুমায়ুন কবির, ইসরাত ও তাঁর স্বামী রিপনকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ইসরাত দুইবছর আগে রিপনের সাথে বিয়ের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করায় খুলশি থানায় মামলা নেয়া হয়নি।

এই বিষয়ে বৈঠকের সময় উপস্থিত থাকা খুলশি থানার এসআই রূপক জানান, মেয়েপক্ষ থানায় মামলা করতে এলে আমি নিজ উদ্যোগে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসি। বৈঠকে মেয়ে ইসরাত তার বাবাকে উদ্দ্যেশ্যে করে বলেন, আপনারা দুইবছর আগে রিপনের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে এখন অপহরণের নাটক করছেন কেন? তখন তার বাবা কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। এই বিষয়ে থানায় কোনো মামলা হয়নি। শুনেছি পরে আদালতে নাকি অপহরণ মামলা দায়ের করেছে।

এই বিষয়ে ইসরাতের মা ও মামলার বাদি জেসমিন সুলতানা বলেন, দুইবছর আগে রিপনের সাথে আমার মেয়ের বিয়ের কথা ঠিক হয়েছিলো, এখনো বিয়ে হয়নি। রিপন আমার মেয়েকে কলেজ থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। সবাই মিলে মেয়ের বিবাহবার্ষিকী পালন করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বিবাহবার্ষিকী পালন হয়নি। তাঁর জন্মদিন পালন করেছিলাম।

দুইবছর আগে হওয়া আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ইসরাতের মামা আলাউদ্দিন বলেন, দুইবছর পূর্বে রিপনের সাথে ইসরাতের আকদ হয়েছে। উভয় পরিবারে হয়তো কোনো বিষয়ে মনমালিন্য হয়েছে। অপহরণের মত কোনো ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই।

এই বিষয়ে মিরসরাই থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, বিজ্ঞ আদালত থেকে ভিকটিমকে (ইসরাত সুলতানা) উদ্ধার করার জন্য মিরসরাই থানা ও খুলশি থানায় নির্দেশনা দেয়া হয়। আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। দুইবছর পূর্বে তাদের বিয়ে হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি।


আরো সংবাদ



premium cement