২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবন বাঁচাতে দেশান্তরী হয়েছি, আবার জীবন দিতে যাব না

জীবন বাঁচাতে দেশান্তরী হয়েছি, আবার জীবন দিতে যাব না - নয়া দিগন্ত।

ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক চাপ সত্তেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তরিকতার ন্যূনতম কোনো প্রকাশ ঘটায়নি মিয়ানমার। উল্টো আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে সময়ক্ষেপণের কৌশলেই হেঁটেছেন। নিজেদের পক্ষে সমর্থন অব্যাহত রাখতে চীন, রাশিয়াসহ পক্ষের দেশগুলোতে কূটনীতি তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করেছেন। অবশেষে গত ১৫ নভেম্বর দিনক্ষণ, প্রস্তুতি সব ঠিক থাকলেও শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানেরা তাদের মাতৃভূমিতে চরম নিরাপত্তার অভাবের কারণে আর ফিরতে চান না।

স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশ মিয়ানমারে যেতে রাজি না হওয়ায় ঝুলে গেল প্রত্যাবাসন।বরং মিয়ানমারে নিরাপত্তাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে তারা। মিয়ানমারে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর এক বছর তিন মাস পার হতে চললেও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের আগমন থামছে না।

উখিয়া প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়ায় উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জাতিগত নিপীড়নের শিকার এই জনগোষ্ঠী যাতে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারে সে জন্য মিয়ানমারকে অব্যাহত চাপে রাখার আহবান জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে। আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত একাধিক রোহিঙ্গাদের সাথে প্রত্যাবাসন বিষয়ে কথা হয়। তারা বলেন, জীবন বাঁচাতে আমরা দেশান্তরী হয়েছি। আবার জীবন দিতে যাব না। আমরা মিয়ানমারের নাগরিক। আমাদের ওপর গণহত্যা ও নিপীড়নে জড়িতদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচার দাবি করছি।

রোহিঙ্গা মাঝি আলী আকবর বলেন, জোরপূর্বক মিয়ানমারের রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব, জাতীয়তা এবং আমাদের নিজস্ব পরিচয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের এলাকার স্থানীয় যুবক ডাক্তার মুজিব বলেন, যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা বিভিন্নভাবে নিপীড়নের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে তাদের উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান ও ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিত।

সামাজিক সংগঠন কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে কিন্তু কৃতদাস হিসেবে নয়, সমান নাগরিক অধিকার নিয়ে।

চরম নিপীড়নের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রোহিঙ্গা নারী শফিকা বেগম বলেন, মিয়ানমারের বুরাইঙ্গা পাড়া তার গ্রামে বৃদ্ধা ও তরুণীদের আলাদা একটি বাড়িতে নিয়ে বার্মিজ আর্মিরা গণধর্ষণ করেছে। তিনি নিজেও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পাঁচ দিন হেঁটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বর্তমানে তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন।

১৯৭৮ সাল থেকে মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতিগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নির্মুল শুরু হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকটি চৌকিতে হামলার পর সেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়।


আরো সংবাদ



premium cement