২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

সাবেক এমপি শামশুল ইসলাম কারাগারে

সাবেক এমপি শামশুল ইসলাম কারাগারে - ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আ ন ম শামশুল ইসলামের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে সোমবার সকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত স্পেশাল-১-এর বিচারক ইসমাঈল হোসেনর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি।

মাওলানা শামশুল ইসলামের পক্ষে প্রধান আইনজীবি ছিলেন এডভোকেট মঞ্জুর আহমদ আনসারী। আত্মসমর্পণকালে আদালতে মাওলানা শামসুল ইসলামের পক্ষে শতাধিক আইনজীবি উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন এডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার।
আইনজীবিরা জানিয়েছেন, এজহারে শামশুল ইসলামের নাম না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় পরিকল্পিতভাবে তার নাম চার্জশিটে দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতে এটা টিকবে না বলেও জানান তারা।

সাবেক এ সংসদ সদস্য আত্মসমর্পণকালে তার সাথে আদালত প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক, নায়েবে আমীর মোহাম্মদ ইছহাক, লোহাগাড়া উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান নুরুল আবচার, সাতকানিয়া উপজেলা ভাইসচেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইব্রাহীম চৌধুরী, মহানগরী জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ, মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, শ্রমিক কলাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন সম্পাদক এস এম লুৎফর রহমান, রেলওয়ে এমপ্লয়ী লীগের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল সেলিম পাটওয়ারিসহ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া বিভিন্ন স্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এসময় আদালত প্রাঙ্গণে নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ করা যায়।

এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর, ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা শামশুল ইসলামের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে তাৎক্ষণিক বিবৃতি দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, সেক্রেটারি মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

আরো পড়ুন :

৩ লাখ নেতাকর্মীর নামে ৩৭৩৬ মামলা
হাবিবুর রহমান 

সারা দেশে চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মী ও আইনজীবীসহ তিন লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিন হাজার ৭৩৬টি মামলার তদন্ত করতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। ‘গায়েবি ও কাল্পনিক’ এসব মামলা যারা দায়ের করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। আবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও এশিয়ান হিউম্যান রাইটসকে অন্তর্ভুক্ত করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। 

প্রবীণ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল হাইকোর্টের এ রিট দায়ের করেন। আজ সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে। সংবিধান প্রণেতা ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা এই রিটের পক্ষে শুনানি করবেন বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

রিট আবেদন দায়েরের পর তিনি বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আইনজীবীরা যাতে খালেদা জিয়ার মামলায় না দাঁড়াতে পারেন, আগামী নির্বাচনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে মাঠে নামতে না পরেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য এসব মামলা করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ঢালাওভাবে এ ধরনের কাল্পনিক মামলা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরোধী দলকে চাপে রেখে বিরোধী নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা। 

তিনি বলেন, এ ধরনের মামলা সঠিক হয়েছে কি না তা তদন্ত করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠন করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাল্পনিক মামলা করে যেন হয়রানি না করা হয় সে নির্দেশনা জারি এবং যারা এ ধরনের মামলা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়েও আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কমিশন করে দেখা হোক। যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে সত্যিকার অর্থে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না কমিশন কর্তৃক তদন্ত করে দেখা হোক। এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, শুধু এই সেপ্টেম্বর মাসেই এ পর্যন্ত বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের তিন লাখ ১৩ হাজার ১৩০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিন হাজার ৭৩৬টি মামলা হয়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সারা দেশে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সারা দেশের মানুষ আতঙ্কিত। সারা দেশের মানুষকে আসামি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব মামলায় গ্রেফতার বাণিজ্য চালাচ্ছে। এ জন্য আমি, আইনজীবী নিতাই রায় চৌধুরী ও সানাউল্লাহ মিয়া রিট আবেদন করেছি। এসব মামলা মিথ্যা ও কাল্পনিক কি না তা তদন্তে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পুলিশের যারা এ ধরনের এফআইআর করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। এ মামলা থেকে মানুষ নিষ্কৃতি চায়। রুল ও স্টে হলে যারা রাজপথে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নামছেন তারা এই অন্যায় ও অত্যাচার মামলা থেকে রক্ষা পাবেন। 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার এবং রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট ৯ জনকে এই রিটে বিবাদি করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন পত্রিয়কায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অগণিত মানুষের বিরুদ্ধে ‘কাল্পনিক’ ও ‘হাস্যকর’ মামলা করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এই ধরনের ‘কাল্পনিক’ মামলাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদিদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে।

ওই রিট আন্দোলনের ভিত্তিতে রুল জারি এবং তা বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পরে এ ধরনের মামলা দায়ের থেকে বিরত থাকতে এবং এ ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটির (যার মধ্যে থাকবে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্রতিনিধি রেখে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে করা এসব মামলার তদন্ত থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা জারির আর্জি জানানো হয়েছে রিট আবেদনে।


আরো সংবাদ



premium cement