২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সংসদে সড়ক পরিবহন বিল পাস

সংসদে সড়ক পরিবহন বিল পাস। ছবি - সংগৃহীত

কোন ব্যক্তির বেপরোয়া ও অবহেলা জনিত গাড়ি চালানোর কারণে দূর্ঘটনা ঘটলে এবং সেই দূর্ঘটনায় কেউ আহত বা নিহত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান বহাল রেখে জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে। বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুল ইসরাম ওমর, সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, মো. ফখরুল ইমাম, নুরুল ইসলাম মিলন, বেগম নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, বেগম মাহজাবীন মোরশেদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, বেগম রওশন আরা মান্নান ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী। কিন্ত তাদের সেই প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। তারা বিলের বিভিন্ন ধারায় সংশোধনী প্রস্তাব দিলেও প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয়নি।

জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব উত্থাপনকালে বিরোধী দলীয় সদস্যরা বলেন, নিরাপদ সড়ক নেই। সড়কে প্রতিনিয়ত মৃত্যু ঘটছে। সারাদেশে সড়কে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। স্কুল শিক্ষার্থীরা তা আমাদের চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী সরকারও বিষয়টি আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়েছে। যে কারণে দ্রুততার সঙ্গে এই আইনটি পাসের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আইনটি পাসের পর হরতাল-অবরোধ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিকভাবে লাইসেন্স দিতে হবে। আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলন করেছে বলে এই বিলটি তড়িঘড়ি করে সংসদে আনা হয়েছে এটা ঠিক নয়। বিলটি দেড় বছর আগে মন্ত্রীসভায় নীতিগত অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া হয়েছে। ৫৭ পৃষ্টার এই বিল এক দিনে আসেনি। অনেক আলাপ-আলোচনার সোনালী ফসল এই বিলটি। বিলে শাস্তির বিধান বাড়ানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, কেউ ইচ্ছাকৃত দূর্ঘটনা ঘটালে সেই মামলা ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারায় বিচার হবে। আর সেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ফলে এই আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর নয়, মৃত্যুদণ্ড।

প্রসঙ্গত. দীর্ঘ এক বছর ঝুলে থাকার পর আলোচিত এই নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি গত ৬ আগষ্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সরকার ওই আইনের খসড়া মন্ত্রীসভায় উত্থাপন করে। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি বিলটি পাসের সুপারিশ করে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে প্রতিবেদনটি জমা দেয়।

পাস হওয়া বিলে দূর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধে বলা হয়েছে, ‘এই আইনে যাহা কিছুই তাকুক না কেন মোটরযান চালনাজনিত কোনো দূর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোনো ব্যক্তি আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটিলে তৎসংক্রান্ত অপরাদসমূহ পেনাল কোড ১৮৬০ (এ্যাক্ট নং এক্সএলভি অফ ১৮৬০) এর এতদসংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ি অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে’। সেখানে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহাই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি বেপরোয়া ও অবহেলাজনিত মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর ভাবে আহত হইলে বা তাহার প্রাণহানি ঘটলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ বৎসরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন’।

বিলে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থাও থাকবে আইনে। নির্ধারিত পয়েন্টের নিচে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। চালককে নতুন করে আবার লাইসেন্স নিতে হবে। বিলে ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্ততঃ ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।

সংসদে উত্থাপিত বিলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাসের শর্ত রাখা হয়েছে। আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বাধ্যবাধকতা ছিলো না। নতুন আইনের সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। সহকারীর ৫ম শ্রেণী পাসের সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিলো না। এছাড়া সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধানও থাকছে। বিলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সহকারীরও শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে বিলে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

বিলের বিধান অনুযায়ী গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এই বিধান অমান্য করলে এক মাসের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। এছাড়া ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। নতুন আইনের বিধি অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে বিলে। বিলের বিধান অনুযায়ী লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। এরপর চালকে নতুন করে লাইসেন্স নিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement