২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে রেডক্রস

মায়ানমার অংশে রেডক্রস কর্মী। ছবি - নয়া দিগন্ত।

বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়ার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করেছে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেকুবনিয়া সীমান্তে রেড ক্রসের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন।

প্রতিনিধি দলটি শিবিরে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও তাদের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলেন। জিরো লাইনের রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার তংপ্লাইও এলাকার আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় প্রতিনিধি দলটি। এ সময় সেখানে রোহিঙ্গাদের খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা দেয়ার কথাও জানায় প্রতিনিধি দলটি। জিরো লাইনের রোহিঙ্গারা মায়ানমারের অংশে অবস্থান করায় এখন থেকে মায়ানমারের রেডক্রস এর পক্ষ হতে খাদ্য সহায়তা দেয়ার বিষয়টি জানানো হয় রোহিঙ্গাদের।

জিরো লাইনের রোহিঙ্গা আবদুল আলিম ও মাঝি দিল মুহাম্মদ জানান প্রতিনিধি দলটিকে তারা জানায় যে তারা সহায়তা চান না। তারা তাদের অধিকার ফিরে পেতে চায়। দ্রুত রাখাইনে তাদের নিজ গ্রামে ফিরিয়ে নেয়ার জন্যে রেডক্রসের মাধ্যমে মায়ানমার সরকারেরে প্রতি দাবি জানিয়েছে জিরো লাইনের রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলার পর রেড ক্রসের প্রতিনিধি দলটি মায়ানমারে ফিরে যায়।

এদিকে রেডক্রসের প্রতিনিধি দলটির জিরো লাইন এলাকা পরিদর্শনের সময় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। উভয় সীমান্তে বিজিবি ও বিজিপির সদস্যরা টহল জোরদার করে।

প্রসঙ্গত গত বছরের আগষ্টে মায়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক সহিংসতায় সেখান থেকে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি জমায়। এ সময় প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নেয় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে। ঐ শিবিরে রোহিঙ্গাদের খাদ্য শিক্ষা ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ রেডক্রস। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় এসব রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মায়ানমার সরকার।

 

আরো দেখুন : রোহিঙ্গা শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর চেষ্টা

হুমায়ুন কবির জুশান উখিয়া (কক্সবাজার), ১৬ জুলাই ২০১৮

রোহিঙ্গা শিশু কলিম উল্লাহর বয়স ১০ পেরোয়নি। সে চোখের সামনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলি খেয়ে মরতে দেখেছে বাবাকে। নির্যাতনের শিকার হতে দেখেছে মাকে। ৯ মাস আগে রাখাইন রাজ্যে সামরিক জান্তা ও মগদের আক্রমণের শিকার হয়ে মায়ের সাথে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সে। এরপর আশ্রয় নেয় কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সব হারানোর দগদগে স্মৃতি নিয়ে বাংলাদেশে এসে আপাতত স্বস্তির দেখা মিলেছিল। তবু ভয় আর অজানা শঙ্কায় নির্যাতনের স্মৃতি নিয়ে মায়ের সাথে ছায়ার মতো সময় কাটিয়েছে আশ্রয় ক্যাম্পে। 

তবে বাংলাদেশে আসার পর থেকে লেখাপড়া, খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে শুরু করেছে কলিম উল্লাহ ও তার মতো অন্য সব রোহিঙ্গা শিশু। উখিয়ার কুতুপালং আইওএম শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা শাহিনা আক্তার ও মোহছেনা বেগম বলেন, প্রতিদিন এ সব রোহিঙ্গা শিশুকে ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি বার্মিজ ভাষাও শেখানো হচ্ছে। কারণ মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে তারা যেন নিজেদের ভাষাতেও কথা বলতে পারে। এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে ওঠেছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সমাজসেবার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মো: এমরান খাঁন বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন এতিম শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। এ সব শিশুর লেখাপড়ার জন্য আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম, ব্র্যাক, মুক্তিসহ বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে তিন শতাধিক স্কুল রয়েছে। এ সব শিশুকেন্দ্রে বার্মিজ ভাষাসহ বিভিন্ন ভাষা শেখানো হচ্ছে।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার, ইউএন অর্গানাইজেশন এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গা শিশুদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু এ সব শিশুর উত্তম সুরক্ষার জন্য তাদের নিজ দেশে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিয়ে লালনপালনের ব্যবস্থা করার কোনো বিকল্প নেই বলেও জানান তিনি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজার অফিসের প্রধান সংযুক্তা সাহানি বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের প্রতিটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য আইওএমের পক্ষ থেকে স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তিন শতাধিক স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে। এ সব স্কুল ও বিনোদনকেন্দ্র পরিচালনা করছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসহ বিভিন্ন এনজিও। মিয়ানমারের শিক্ষকদের পাশাপাশি এতে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছেন স্থানীয় শিক্ষিত তরুণরা।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) রিপোর্টে জানা যায়, গত বছর ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের রাখাইনে সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু। এ সব শিশুর লেখাপড়ার জন্য আইওএম, ব্র্যাক, মুক্তিসহ বিভিন্ন এনজিওর উদ্যোগে তিন শতাধিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গা শিশুদের বিনোদনের জন্য ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ১২০টি বিনোদনকেন্দ্র। এ সব কেন্দ্রে ক্রীড়া ও নাটকসহ নানা ধরনের বিনোদন দিয়ে আনন্দে রাখা হচ্ছে এ শিশুদের।


আরো সংবাদ



premium cement