গয়াল খামার করে সফল রাঙ্গুনিয়ার এরশাদ মাহমুুদ
- শান্তি রঞ্জন চাকমা রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম)
- ১৭ আগস্ট ২০১৮, ০৬:৪৯
বিলুপ্ত গয়াল খামার করে সফলতা পেয়েছেন রাঙ্গুনিয়া পদুয়া গ্রামের শিক্ষিত তরুণ এরশাদ মাহমুদ। উপজেলার শেষ সীমান্তে পদুয়া ইউনিয়নের দুর্গম সুখবিলাস শাকিলা পাহাড় এলাকায় বিশাল গয়াল খামার গড়ে তুলেছেন। নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক ব্যবস্থাপনায় গয়াল দ্রুত বেড়ে উঠছে। গয়াল খামারে সফলতা পাওয়ায় বেকার তরুণেরা উৎসাহিত হচ্ছেন।
স্নাতক পাস করা শিক্ষিত তরুণ এরশাদ মাহমুদ মেধা ও কঠোর পরিশ্রমে গয়াল খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইচ্ছাশক্তি ও অদম্য সাহস নিয়ে ২০০৮ সালে রাঙ্গামাটি জেলার গহিন বনের এক উপজাতীয় পরিবার থেকে এরশাদ মাহমুদ তিনটি গয়াল কেনেন। এর মধ্যে একটি বাচ্চা ও একটি মাদি গয়াল ছিল। পর্যায়ক্রমে গয়ালের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এখন তার খামারে ৫৬টি গয়াল রয়েছে।
এরশাদ মাহমুদ ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন পুকুরভরা মাছ। সারি সারি বৃ। খামার ভরা পশু। এসব এখন আর এরশাদ মাহমুদের স্বপ্ন নয়। সুখবিলাস ফিশারিজ অ্যান্ড প্ল্যানটেশনের প্রতিষ্ঠান ‘গয়াল খামার প্রজনন কেন্দ্র’ গড়ে তুলে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের পাশাপাশি বর্তমানে বিলুপ্ত প্রজাতির পশ গয়ালের খামার দেখতে প্রতিদিন ইচ্ছুক জনতার ভিড় বেড়েছে। একজন সফল খামারি হিসেবে এরশাদ মাহমুদ ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ মৎস্য খামারির পুরস্কার নেন।
সাবেক জেলা পিপি ও রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামের মরহুম অ্যাডভোকেট নুরুচ্ছফা তালুকদারের ছেলে এরশাদ মাহমুদ। ১৯৮৮ সাল থেকে মাছচাষ শুরু করেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনাবাদি জমি কিনে অথবা লিজ নিয়ে সেখানে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলছেন। প্রায় দেড় শত একর জমির ওপর অর্ধশতাধিক মৎস্য খামার করছেন তিনি। তার দেখাদেখি অনেকে মৎস্য চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে।
সুখবিলাস ফিশারিজ অ্যান্ড প্ল্যানটেশনের প্রতিষ্ঠান ‘গয়াল খামার প্রজনন কেন্দ্র’-এর ম্যানেজার টিটু কুমার বড়ুয়া বলেন, খামারে পাঁচজন শ্রমিক গয়ালের দেখভাল করছেন। গয়ালের খাদ্য হিসেবে ভুসি, লবণ, বুরা, কাঁচা ঘাস ও শুকনো খড় দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি গয়ালের গড় ওজন ৫০০-৭০০ কেজি। গত বছর তিনটি মাঝারি গয়াল বিক্রি হয় ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। চলতি বছরের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় একটি গয়াল বিক্রি হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। কম চর্বিযুক্ত গোশতের কারণে দেশীয় গরুর চেয়ে দ্বিগুণ ওজনের প্রতিটি গয়াল সর্বোচ্চ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বাজারে বিক্রি হওয়া গরু-মহিষের তুলনায় গয়ালের দাম একটু বেশি। একেকটি গয়াল ওজন ভেদে বিক্রি হচ্ছে। গরু-মহিষের চেয়ে বেশি গোশত হওয়ায় গয়ালের চাহিদা বাড়ছে বলে ম্যানেজার জানান।
সফল খামারি এরশাদ মাহমুদ বলেন, পাহাড়ের কোলে সবুজ বনায়নের পাশে গয়াল খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গয়ালের খামারের পাশে গোবর থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছে। বায়োগ্যাসের উচ্ছিষ্ট গোবর মাছের খাবার হিসেবে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৎস্য প্রজেক্টে দেয়া হচ্ছে। গয়াল পালনে গোশতের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বনের পশু গয়াল বিলুপ্ত থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
আরো পড়ুন :
ইসলামপুরে গো-খাদ্য সঙ্কট সমাধানে রাস্তার পাশে ঘাস চাষ
ইসলামপুর (জামালপুর) সংবাদদাতা
ইসলামপুরের কৃষকেরা গো-খাদ্য সঙ্কটে সরকারি রাস্তা ও রেললাইনের পাশে ঘাস চাষের বিকল্প পথ বেছে নিয়েছেন। জানা যায়, ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে ইসলামপুর উপজেলাটি বন্যাকবলিত এলাকা নামে খ্যাত। যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়লেই দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার নি¤œাঞ্চলে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিসহ তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় গো-খাদ্যোর সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। তাই অপেক্ষাকৃত উঁচু রাস্তা ও রেললাইনের পাশে উন্নতজাতের নেপিয়ার ঘাস চাষ করে গো-খাদ্য সঙ্কটের বিকল্প পথ হিসেবে বেছে নিয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, ইসলামপুর-দেওয়ানগঞ্জ সড়কের দু’পাশে দীর্ঘসারিতে নেপিয়ার বৈজ্ঞানিক জাতের ঘাস চাষ করা হয়েছে। হাইব্রিড জাতের এ ঘাস চাষের ফলে এক দিকে যেমন মাটির ক্ষয়রোধ হচ্ছে, অপর দিকে গ্রিনহাউজ এফেক্টসহ গো-খাদ্যের সমাধান হচ্ছে।
রাস্তার পাশে ঘাস চাষ করা কৃষক আকবর আলী জানান, নিজের উঁচু কোনো জমি না থাকায় সরকারি রাস্তা ও রেল লাইনের পাশে হাইব্রিড ঘাস চাষ করে গবাদিপশুর বিকল্প খাদ্যের সমাধান করা হয়েছে।
ঘাষচাষি সাজল মিয়া জানান, প্রতি বছর বন্যায় মানুষের খাদ্য সঙ্কট না হলেও পশুখাদ্যের সঙ্কট চরম আকার ধারণ করে। বিগত বন্যার সময় প্রতি কেজি খড় ৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে। তাই এ বছর রাস্তা ও রেল লাইনের পাশে গো-খাদ্য সমাধানে ঘাস চাষ করা হয়েছে।