২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গাদের বিভীষিকাময় দিনগুলো

রোহিঙ্গাদের বিভীষিকাময় দিনগুলো - ছবি : নয়া দিগন্ত

গত বছরের আগস্ট মাসে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো জ্বলছিল। উখিয়া-টেকনাফের সীমান্তবর্তী মানুষেরা এপার থেকে ওপারের আগুনের লেলিহান শিখা দেখেছিল। এখানকার কোমল হৃদয়ের মানুষ সর্ব প্রথম রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্মীদের আগুন থেকে রক্ষা পেতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বর্মী যুবকরা (মগ) বিস্তীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পথ আগলে রেখেছিল। তারা পুরুষদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলেছে। তাদের জেলে পাঠিয়েছে। নারীদেরকে হয় নির্যাতন করছে, না হয় ফিরিয়ে দিচ্ছিল। শিশুদের পরিণতি আরো ভয়াবহ। তাদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। আবার অনেক শিশুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।

মিয়ানমারের রাথিডং-এর উউরুপাড়া সংলগ্ন জঙ্গলে থেকে খেয়ে না খেয়ে ১০ দিন হেঁটে সেই সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আব্দুস সালাম এমনটাই জানিয়েছেন। বর্তমানে সে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের কথা জানতে চাইলে, কুতুপালং ক্যাম্পের মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বার্মার চৌপ্রাং গ্রামের আমার বন্ধু ছৈয়দ আহমদের পুরো পরিবারকে পথে হত্যা করা হয়েছে। ছৈয়দ আহমদ, তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন, দুই ছেলে দিল মোহাম্মদ ও নুরুল ইসলামকে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি একটি এলাকায় হত্যা করা হয়েছে। রাথিডং-এর চৌপ্রাং এলাকার মৌলভী আমান উল্লাহও প্রায় অভিন্ন তথ্য দেন। চার রোহিঙ্গা যুবতীকে বিবস্ত্র অবস্থায় হাত ও পা বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পেছনে মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা অস্ত্র তাক করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পরেই গলায় ছুরি বসিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয় ওই চার যুবতীর। সেই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করা হয়।

আরেক দৃশ্যে দেখা যায়, জীবন্ত এক রোহিঙ্গার দেহে ছরি দিয়ে চামড়া কাটা হচ্ছে। সবশেষ চাইনিজ কুড়াল দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মাথা কাটা হচ্ছে। অপর এক দৃশ্যে রয়েছে- লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন বয়সী কয়েক রোহিঙ্গা। পেছনে মিয়ানমারের সেনা সদস্য।একজন করে রোহিঙ্গা সামনে রাখা একটি ইটের ওপর ডান হাত রাখছে। আর এক সেনা সদস্য তিন দফায় তার ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কাটছে। একে একে বেশ কয়েকজনের হাত এভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয়। কেউ হাত দিতে না চাইলে তাকে পেছন তেকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচানো হচ্ছে। এ রকম শত শত দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে আপনারা কি তা দেখেননি? এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে শিক্ষিত রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইয়াকুব।

কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা মিনারা আক্তার বলেন, গত বছর ২৫ আগস্টের পরের রাত মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে আমার স্বামী নবী হোসেনকে। সেই থেকে পৃথিবী তার কাছে অন্ধকারময়। তিনি কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। স্বামীর লাশ পিছনে ফেলে ৩০ বছর বয়সী মিনারা অজানার পথে পা বাড়িয়েছেন।

মিয়ানমারের নৃশংসতার হাত থেকে নিজে বাঁচতে, দু সন্তানকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ছুটে এসেছেন হাজার হাজার মজলুম রোহিঙ্গা কাফেলার সাথে। তখন তিনি ছিলেন নিজে অভুক্ত। অভুক্ত তার দুই কন্যা। কান্না করেছেন তিনি। আর্তনাদ করেছেন। হাত পাতছেন। কিন্তু না, কোনো খাদ্য পাননি। সেই সময়ে ত্রাণ নিতে যে যুদ্ধ করতে হয়েছে তাতে সে বিজয়ী হতে পারেননি। ক্ষুধার্ত দুই কন্যাকে নিয়ে রাস্তার ধারে বসে পড়ি। এমন সময় এখানকার স্থানীয় বাংলাদেশী এক যুবক তার বাসার রান্নাকরা খাবার ও পানি দিয়েছিল। পিপাসায় কাতর ক্ষুধার্ত আমার মতো অনেক রোহিঙ্গা নারী পুরুষকে সেদিন ঐ যুবকেরা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাদের জন্মভূমিতে আমরা স্থান পায়নি। সেখানে আমাদের চরম বিপদের সময়ে আপনাদের মতো মানুষেরা সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন এবং আমাদের থাকতে সুযোগ দিয়েছেন। তখন আমাদের খাবার ছিল না। থাকার জায়গা ছিল না।এখানে এসেও আমাকে খোলা আকাশের নিচে অনেক দিন থাকতে হয়েছে। এখন ক্যাম্পে আমাদের ঠিকানা হয়েছে। খাদ্য, সেবা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা পেয়েছি আমরা। কিন্তু আমাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি।


আরো সংবাদ



premium cement
ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে আগুনে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে খুলনা বিভাগ ও ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ ‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায়

সকল