১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবশেষে প্রাচীর নির্মাণে রড ব্যবহার

সংবাদ প্রকাশের পর স্কুলের প্রাচীর নির্মাণে রড ব্যবহার করা হচ্ছে - ছবি: নয়া দিগন্ত


দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে গত ১৭ জুলাই ‘রড ছাড়াই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়।

সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রেজওয়ানুর রহমানসহ ওই দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ। কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা ওই দপ্তরের সার্ভেয়ার মালবিকা দেবনাথের উপস্থিতিতেই রড ছাড়া ঢালাইকৃত কাজের অংশ ভেঙ্গে পুনরায় সঠিক নিয়মে কাজ শুরু করা হয়।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় যে যথাযথ নিয়মেই কাজ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মালবিকা দেবনাথ জানান, ওই কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার আমাদের অগোচরে বন্ধের দিনে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজের অনিয়ম সম্পর্কে অবহিত করলে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে রড ছাড়া ঢালাইকৃত অংশটুকু ভেঙ্গে ফেলি এবং সঠিক নিয়মে কাজ শুরু করি। এ অনিয়মের কারণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসাঃ নাজমা আক্তার জানান, ঠিকাদার কোন প্রকার নিয়মনীতি না মেনে তাদের ইচ্ছেমতো কাজ করে। কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে ঠিকাদার আমার সাথে অসদাচরণ করেন। আমি বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদকে অবহিত করি। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর সঠিক নিয়মে কাজ করায় আমি খুশি হয়েছি। আমি সংবাদকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রেজওয়ানুর রহমান জানান, ওই কাজের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমার কর্মকর্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা বন্ধের দিন কাজ করেছে। বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ঢালাইয়ের কাজ ভেঙ্গে ফেলার নিদের্শ দিয়েছি। ইতোমধ্যে ওই অংশটুকু ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই উপজেলার সুনাম রয়েছে আমরা চাই, সেই সুনাম অক্ষুন্ন রেখে সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে। যারা কাজের মান নষ্ট করে অধিক লাভের আশায় এ সুনাম ক্ষুন্ন করবে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় কাঁকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৬ মিটার সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ২ শত ২৬ টাকা ও বিদ্যালয়ের প্রধান গেইট নির্মাণে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩ শত টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।


আরো পড়ুন: রড ছাড়াই চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ

ফয়েজ আহমেদ, শাহরাস্তি (চাঁদপুর) সংবাদদাতা ১৭ জুলাই ২০১৮

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে রড ছাড়াই নির্মাণ হচ্ছে মেহের উত্তর ইউনিয়নের কাঁকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল। কোন প্রকার মান ঠিক না রেখে ঠিকাদারের ইচ্ছে মতোই ৬ লক্ষ ৭১ হাজার ৫ শত ২৬ টাকার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে দায়সারা ভাবে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কর্তাদের চোখ ফাঁকি দিতে বেলা অবেলা এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদার ও উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কর্মকর্তাদের ইঁদুর বিড়াল খেলায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় অভিভাবক ও জনসাধারণ।

জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পে কাঁকৈরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৬ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার ২ শত ২৬ টাকা ও স্কুলের সম্মুখ গেইট নির্মাণে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩ শত টাকা সহ সর্বমোট ৬ লক্ষ ৭১ হাজার ৫ শত ২৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স করিম এন্ড কোং উক্ত কাজের দায়িত্ব পায়। স্থানীয় ঠিকাদার মোঃ স্বপন সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে রড ছাড়াই ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। উপরে গ্রীল ও পলেস্তারা নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রমিকরা। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি মোঃ চেরাগ আলীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা জানান, আমরা ঠিকাদারের নির্দেশনার বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। তিনি রড ছাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে বলেছেন। ইঞ্জিনিয়ার অফিসের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার দায়িত্ব উনার। ওই সময় উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসের সার্ভেয়ার মালবিকা দেবনাথ ঢালাই ভেঙ্গে রড সমেত পুনরায় ঢালাই দেয়ার নির্দেশ দেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোসা: নাজমা আক্তার জানান, কাজের শুরু থেকেই এ ঠিকাদার অনিয়ম করে আসছে। আমরা শুরু থেকে বিভিন্ন অনিয়ম চোখে পড়ার সাথে সাথে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ বাধা দিলে পুনরায় কাজটি দায়সারা ভাবে করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে ঠিকাদার কোন নিয়মের তোয়াক্কা-ই করেননি। আমি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে তার কাছে কাজের বিষয়ে অভিযোগ জানালে কিংবা কিছু জানতে চাইলে তিনি আমার সাথে অসদাচরণ করেন।

বিদ্যালয় বন্ধের দিনে ঠিকাদার তার শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে রড ছাড়াই বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ করে ফেলেছেন। আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিসে অবহিত করেছেন। আমরা সঠিক ভাবে কাজটি সম্পন্ন করার দাবি জানাচ্ছি। তাছাড়া যে কাজটি চলছে তার কোন ইস্টিমেট কপি বিদ্যালয়ের দপ্তরে নেই। আমি বেশ ক’বার নিজ উদ্যোগে চেয়েও অদ্যাবধি পাইনি।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি মোঃ চেরাগ আলী জানান, বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ বন্ধের দিনে করায় স্থানীয় একজন লোকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি আমাকে বিষয়টি অবগত করলে সরজমিনে এসে রড ছাড়াই ঢালায়ের প্রমান পেয়েছি। একজন ঠিকাদার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজে শুরু থেকেই অনিয়ম করে আসছেন বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ওই ঠিকাদারের অনিয়মের ব্যবস্থা ও সঠিক নিয়মে কাজটি শেষ করার দাবি জানাই।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, শুধু বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণে অনিয়ম-ই শেষ নয়। ঠিকাদার বিদ্যালয়ের সম্মুখ গেইটের কাজেও অনিয়ম করেছে। ঠিকাদার কাজের দায়িত্ব নিয়ে লাভ করবেন কিন্তু এভাবে কাজের নামে চুরি করাটা কতটুকু যৌক্তিক তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই ভাল জানেন।

উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার মালবিকা দেবনাথ জানান, এ কাজটি আমার তদারকিতে চলছে। আমি শুরু থেকেই মানসম্মত ভাবে কাজটি শেষ করার চেষ্টা করছি। ছুটির দিনে আমাকে না জানিয়েই ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। ঢালাইয়ে রড না থাকলে সেটি ভেঙ্গে পুনরায় নির্মাণ করা হবে।

এ বিষয়ে কাজের দায়িত্বে থাকা সাব ঠিকাদার স্বপন মুঠোফোনে জানান, আমার মায়ের অসুস্থ্যতার কারণে ঢাকায় অবস্থান করায় আমার অনুপস্থিতিতেই শ্রমিকরা ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেছে। কাজের সাইটে না গিয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।

উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ রেজওয়ানুর রহমান জানান, আমি বিষয়টি অবগত নই। তবে যে কোন ঠিকাদারই তার নির্দেশনা অনুযায়ি কাজ করবেন। কাজে অনিয়ম হলে তা ছাড় দেয়া হবে না।

 

 

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement