২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৃত্যুর সময়ও সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা মায়ের!

দুর্ঘটনা
দুর্ঘটনাস্থলের চিত্র এবং ইনসেটে মা ও মেয়ে - ছবি : নয়া দিগন্ত

একেই বলে মা। যার কাছে তার নিজের জীবনের চেয়ে সন্তানের বেঁচে থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানকে রক্ষায় নিজের জীবনটাকেই উৎসর্গ করলেন। বুকে আগলে রেখে সন্তানকে বাঁচিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। উখিয়ায় বাঁশ বোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন রোজিনা আক্তার (২৬)। রোহিঙ্গা শিবিরে ‘মুক্তি’ নামের একটি এনজিওতে কর্মরত ছিলেন তিনি।

রোজিনা মারা গেলেও বুকে আগলে রেখে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখেছেন তার শিশুকন্যা মিথিলাকে (৩)। বিন্দু পরিমাণ আঁচড়ও লাগতে দেননি। 

ঘটনাটি হৃদয় ছুঁয়ে গেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের। প্রত্যক্ষদর্শী শফিক আজাদ এ প্রতিবেদকের কাছে বর্ণনা করছিলেন মর্মস্পর্শী সেই ঘটনাটি। আজাদ বলেন, ‘দুর্ঘটনার শিকার লোকগুলোকে উদ্ধারের শুরুতেই এক রোহিঙ্গা নারী ও তার সন্তানকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর উদ্ধার করা হয় রোজিনার লাশ। ওই সময় তার বুকে আগলে রাখা অবস্থায় একটি শিশুর দেখা মেলে। সবাই ধারণা করছিল, ওই শিশুটিও বোধহয় মারা গেছে। কিন্তু মায়ের বুক থেকে বের করে দেখা যায়, ওই শিশুটি সম্পূর্ণ অক্ষত। আর তা দেখে সবাই হতবাক হয়ে যাই।’

তিনি আরো বলেন, ‘সন্তানের প্রতি কতটা ভালবাসা থাকলে একজন মা নিজের জীবন দিয়ে সন্তানকে আগলে রাখতে পারেন, তা সত্যিই অতুলনীয়।’

জানা যায়, উখিয়া উপজেলার বালুখালী পানবাজার এলাকার বাসিন্দা মনজুর আলমের স্ত্রী রোজিনা আক্তার। এই দম্পতির একমাত্র সন্তান মিথিলা (৩)। রোজিনা ‘মুক্তি’ নামের একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত ছিলেন। রোজিনার কর্মএলাকা ছিল কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে। স্বামী মনজুর আলম চাকরিজীবী।

মিথিলাকে দেখাশুনা করার কেউ ছিল না। তাই সন্তানকে নিয়েই প্রতিদিন কর্মস্থলে যেতেন রোজিনা। তাকে রোহিঙ্গা শিবিরে স্থাপিত ফ্রেন্ডলি সেন্টারে রেখে নিজের কাজ করতেন রোজিনা।

প্রতিদিনের মতোই গত সোমবার সন্তানকে নিয়ে টমটমযোগে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে অতিরিক্ত বাঁশবোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে টমটমটি। এ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান রোজিনা।

কিন্তু মায়ের বুকে সম্পূর্ণ নিরাপদে অক্ষত রয়ে যায় শিশু মিথিলা। দুর্ঘটনার পর থেকেই বারবার ভয়ে কেঁপে উঠছে মিথিলা।

পুলিশ জানায়, রোজিনার লাশ স্বামী মনজুর আলমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এখনো ট্রাকের মালিককে সনাক্ত করা যায়নি।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সকাল ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়ার বালুখালী কাস্টমস এলাকায় একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে টমটম ও সিএনজি। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন মারা যায়। আহত হয় কমপক্ষে বিশজন। আহতদেরকে স্থানীয় রেডক্রিসেন্ট ফিল্ড হাসপাতাল ও উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

আরো পড়ুন : 

কক্সবাজারে উল্টে পড়া বাঁশবাহী ট্রাকের চাপায় নিহত ৪
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা, ১৬ জুলাই ২০১৮

কক্সবাজারের উখিয়ায় বাঁশ বোঝাই ট্রাক উল্টে সিএনজি ও টমটমকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নারী ও শিশুসহ চারজন নিহত হয়ছেন। এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। তিনি কক্সবাজারে ‘মুক্তি’এনজিওতে কর্মরত রুজিনা আক্তার (রুজি)। অন্যদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।

আজ সোমবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কের প্রবেশ মুখে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও দমকল বাহিনী এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় ট্রাকের নিচে চাপা পড়া ২০ জনকে উদ্ধার করে। পরে তাদেরকে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা শিশু নারীসহ চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন। লাশগুলো হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নিকারুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন। তিনি চারজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement