২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মৃত্যু কূপ রাজার ঘাট

মৃত্যুকূপ রাজার ঘাট : বলি দুই তরুণ

মৃত্যুকূপ রাজার ঘাট : বলি দুই তরুণ - সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া-কাছিয়ারপাড় সন্দ্বীপ নৌ-ঘাটটি (ফেরিঘাট) রাজার ঘাট নামে পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরে এই ঘাটটিকে বীচ এলাকা ঘোষনা করেছে আবুল কাসেম রাজা। শিল্পপতি এই রাজা নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে ফেরিঘাটে আসা দর্শনার্থীদের কাছ থেকে নিচ্ছে চাঁদা। প্রতিবাদ করারও কোন সুযোগ নেই।
নারায়নগঞ্জ থেকে এই সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা নয় শিক্ষাথীগোসল করতে নেমে নিঁখোজ হয় দুই শিক্ষার্থী। ২৪ ঘন্টা চেষ্ঠা চালিয়ে শুক্রবার বিকেলে উদ্ধার করা হয় ওই ছাত্রদ্বয়ের লাশ। কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল তাদের উদ্ধার করে।

উদ্ধার হওয়া দুই শিক্ষার্থী হলো, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্বিরগঞ্জ থানার বাগমারা গ্রামের মো. খোকনের ছেলে কলেজ ছাত্র মো. ইমন (১৯)। সে সিদ্ধিরগঞ্জ রৌশনআরা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তার খালাতো ভাই মো. রাজু (১৫)। সে এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার কাশীমপুর গ্রামের মো. মহসিনের ছেলে।


জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আসা ৯ ছাত্রের একটি দল সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে বেড়াতে যায়। তারা ঘুরতে ঘুরতে স্থানীয় ঘাটের ইজারাদার রাজা কাশেমের তত্ত্বাবধানে থাকা একটি লোহার জেটিতে বেড়ানোর এক পর্যায়ে বিকাল পৌনে ৩টায় সাগরে গোসল করতে নামেন। কিন্তু সেসময় সাগরে ভাটার প্রবল টান থাকায় ৮ জনই ভেসে যেতে থাকেন। কিন্তু তিন জন কোনোক্রমে কূলে এসে অন্যান্য পর্যটকদের সহযোগিতায় ভেসে যেতে থাকা আরো ৩ জনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করলেও ২ ছাত্র ইমন ও রাজু ভেসে যান।
খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের খবর দিলে সীতাকু- ফায়ার সার্ভিস, থানার কর্মকর্তারা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)সহ অন্যান্যরা সেখানে ছুটে যান। সীতাকু- ও আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের ছয়জন ডুবুরি উদ্ধার কাজ চালায়।


বৃহস্পতিবার রাতে উদ্ধার কাজ বন্ধ করে শুক্রবার বিকেল ২টার পর কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আবার উদ্ধার কাজ শুরু করে। বিকেল ৩টার সময় প্রথমে রাজ এর মৃতদেহ ও ৫টার দিকে ইমনের এর মৃত দেহ সাগর থেকে উদ্ধার করে পাড়ে নিয়ে আসা হয় কর্মকর্তারা।


এদিকে শুক্রবার বিকেলে সাগর থেকে উদ্ধার করে ইমন ও রাজ এর মরদেহ বাঁশবাড়িয়া সাগর উপক’লে নিয়ে আসা হলে তখন তাদের পিতা মাতাসহ আত্নীয় স্বজনদের আহজারীতে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।
ইমন ও রাজ এর বন্ধু আরিফ বলেন, আমার নয় বন্ধু বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন পর্যটন স্পর্ট দেখতে আসি। ওইদিন সকালে চন্দ্রনাথ মন্দির ও ইকোপার্ক দেখে বিকেলে বাঁশবাড়িয়া সমুত্র সৈকতে আসি। আমি আমার অপর বন্ধুদের কাপড় ও মোবাইল নিয়ে সৈকতের পাড়ে ছিলাম। আট বন্ধু সৈকতে গোসল করতে নামে। এদের মধ্যে ৫জন সৈকতের ভাটার টানে ভেসে যেতে ছিলো। ৩জনকে স্থানীয়ীরা উদ্ধার করতে পারলেও অপর বন্ধু যখন ইমন ও রাজ সৈকতে ভাটার টানে তলিয়ে যায়। এসময় ঘাটে দর্শনার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছিলো রাজা কাসেমের নিয়োজিত দুই ব্যক্তি। তাদেরকে কান্নাকাটি করে অনেক অনুনয় বিনয় করে শ্রেুাতে ভেসে যাওয়া বন্ধুদের উদ্ধারের জন্য সহযোগীতা ছেয়েও কোন সহযোগীতা পায়নি।


বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, যে ঘাটে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে ঘাট পরিচালনা করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী এমএ কাসেম (রাজা)। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এখানে সারাবছর কমবেশি দর্শনার্থীর আগমন হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী রাজা কাসেম এখানে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করে দর্শনার্থীদের সাগরে নিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন এবং টাকার বিনিময়ে (টিকিট) জেটিতে বেড়ানোর সুযোগ করে দেন। তার ঐ ঘাটে বেড়াতে গিয়ে গোসলে নেমে বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ইন্টারের ছাত্র ইমন ও মাধ্যমিকের ছাত্র রাজসহ ৮ জন ভেসে যাচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজন নিজে নিজে উঠে আসে এবং অন্যদের সাহায্যে সজীব, আরিফ ও আহাদ নামক আরো তিনজনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে সীতাকু- হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে অসুস্থ বোধ করায় আরো একজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২০ এর মধ্যে। নিখোঁজ ইমন ও রাজ আপন খালাতো ভাই।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ভাটার মধ্যে সৈকতে গোসল করতে নামলে ভাটার টানে ভেসে গেছে। শুক্রবার বিকেলে কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
সীতাকুণ্ড ইউএনও তারিকুল আলম আরো বলেন, এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মহোদয় বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পর্যটকদের পানিতে নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন।

ঘাটের ইজারাদার রাজা কাসেমের বক্তব্য
ঘাটের ইজারাদার এম এ কাসেম রাজা বলেন, প্রভাবশালী একটি শিল্পপতিষ্ঠান অবৈধভাবে সৈকতে ড্রেজিং করে মাঠি উত্তোলনের কারণে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। তারা জেলা পরিষদের ঘাটটি দখল করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি লিখিত ভাবে সরকারি সকল দপ্তরে বিষয়টি জানিয়েছি।

আরো পড়ুন :

মুক্তিপণের টাকা গুনে অপহরণকারীর হাতে তুলে দিলো পুলিশ
হারুন আনসারী, ফরিদপুর

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় শিশু অপহরণের পর মুক্তিপণের টাকা গুনে অপহরণকারীর হাতে তুলে দিলো পুলিশ। পুলিশের সামনে মুক্তিপণের সেই টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে গেছে অপহরকারীরা। অপহরণকারীদের দেয়ার আগে দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকাও গুনে দিয়েছে পুলিশ এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা গুনে দেয়ার ছবি থাকার পরেও পুলিশ এখন অস্বীকার করছে বিষয়টি। আর পুলিশের অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও সদস্যরাও মুক্তিপণের টাকা দেয়ার সময় তাদের উপস্থিতির বিষয়টি অস্বীকার করছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের চর মানিকদি পাগলপাড়া গ্রামে। এ ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে সন্তানকে উদ্ধারে সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেছে অপহৃত কিশোরের মা ও পাগলপাড়া গ্রামের সাইপ্রাস প্রবাসী আবুল হোসেন মাতুব্বরের স্ত্রী জান্নাতি বেগম।

ফরিদপুর প্রেসক্লাবে আজ শুক্রবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে সন্তানকে উদ্ধারের আকুতি জানান তিনি। এসময় কান্নায় ভেঙে পরেন তিনি।

 

লিখিত বক্তব্যে জান্নাতি বেগম বলেন, তার বড় ছেলে আলাউদ্দিন ওরফে অন্তর মাতুব্বর তালমা নাজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। গত ৭ জুন বৃহস্পতিবার তারাবি নামাজ পড়ার জন্য রাত ৮টার কিছু আগে বাসা হতে বের হয়। এরপর সে আর বাসায় ফিরেনি তবে ৩ বার তার সাথে মোবাইলে কথা হয়। রাত ১০টার পর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ৮ জুন রাতে নগরকান্দা থানায় একটি জিডি করা হয়।

এদিকে, থানায় জিডি করার বাসায় ফেরার পরই অন্তরের মোবাইল থেকে জান্নাতির মোবাইলে একটি ম্যাসেজ পাঠানো হয়। তাতে অন্তরকে অপহরনের কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একাধিকবার ফোন করে ও ম্যাসেজ পাটিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ০১৮৭৬৭৬৮১২৮ নম্বরে ৫ লাখ টাকা বিকাশ করে পাঠাতে বলে। র‌্যাব-পুলিশকে জানাতে নিষেধ করেছিলো তবে ঘটনার পরপরই ৮ জুন তিনি পুলিশ ও র‌্যাব অফিসে গিয়ে অন্তরের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে আসেন।

সর্বশেষ ১৪ জুন আবারও অন্তরের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণের টাকা নিয়ে ভাঙ্গার একটি প্রইমারী স্কুলের ঠিকানায় যেতে বলে। কিছুক্ষণ পর তাদেরকে ভাঙ্গার বদলে তালমা জাইল্যা ব্রিজের নিকট এবং তারপর কোনাগাঁও চকের একটি শ্যালো মেশিন ঘরের মধ্যে টাকা রেখে আসতে বলে।

জান্নাতি বলেন, তখন রাত হয়ে গিয়েছিলো। আমাকে একা যেতে বলেছিলো। কিন্তু আমার ভয় করছে জানিয়ে কান্নাকাটি করলে তারা আমার সাথে দু’জন লোক নিয়ে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়। আমি নগরকান্দা থানার এসআই কবির দারোগা ও অন্য দু’জন পুলিশকে নিয়ে সেখানে যাই। পুলিশদের আড়ালে দাড় করিয়ে মাত্র ১৫ গজ দুরে মেশিন ঘরের মধ্যে একটি হাড়ির মধ্যে মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা রেখে আসি।

জান্নাতি বলেন, ‘‘এসময় আমি ও অন্য দুই পুলিশ কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই, ছোট্ট টর্চের আলো জ্বালিয়ে দু’জন লোক টাকা মেশিন ঘরে টাকা খুঁজছে। পুলিশ ও তাদেরকে দেখে।”
‘‘টাকা যায় যাক, এখন ওদের ধরা যাবে না। টাকা গেলে টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু ছেলে গেলে ফিরে আসবে না।’’ পুলিশরা তাকে একথা বলে বলে জান্নাতি জানায়।

 

এই সময় অদুরে রাস্তায় পুলিশের একজন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাও ছিলেন বলে জান্নাতি বেগম সাংবাদিকদের জানান। ওই কর্মকর্তা তাকে টাকা দিতে না করেননি। অপহরনকারীরা পুলিশের সামনেই মুক্তিপণের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়ে আবারও লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে বললে প্রথমে অপহরনকারীরা জানায়, আধঘন্টা পর ছেলেকে হাতপা বাধা অবস্থায় পাবে। পরে জানায়, পার্শ্ববর্তী বিলনালিয়া গ্রামের জনৈক খোকন তার ছেলের সন্ধান জানে।

জান্নাতি বেগম লিখিত বক্তব্যে জানান, অপহরনকারীদের দেয়ার আগে মুক্তিপনের টাকা গুনে দেখেন নগরকান্দা থানার সার্কেল ইন্সপেক্টর সাইফুল। যার একটি ছবি এবং ভিডিও তিনি সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। টাকা দেয়ার আগে তিনি তার পরিবারের লোকজন ও পুলিশকে নিয়ে বৈঠক করেন । এসময় টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে তিনি জানান।

এদিকে, মুক্তিপণ দিয়েও সন্তানকে ফিরে না পেয়ে বিলনালিয়ার মোবারক মাষ্টারের ছেলে খোকন মাতুব্বরকে (৩৫) প্রধান আসামী করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন জান্নাতি বেগম। 
অন্তরের খালাতো ভাই সাইফুল ইসলাম সাব্বির জানান, ওই মামলায় পুলিশের কোন তৎপরতা না দেখে তারা স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতার দ্বারস্থ হন তিনি। এরপর ওই নেতার নির্দেশে খোকন সহ আলতা মাতুব্বরের ছেলে কামাল মাতুব্বর (২৮) ও আক্তার মাতুব্বরের ছেলে সুজন (২৭) থানায় গেলে পুলিশ তাদের আটক করে।

এ ব্যাপারে জানতে নগরকান্দা থানার সার্কেল ইন্সপেক্টর সাইফুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, টাকা গুনে দেয়াতো দুরের কথা, মুক্তিপণের টাকা দিয়েছে কিনা কিংবা কোথায় দিয়েছে তাই তিনি জানেন না।

নগরকান্দা থানার ওসি সৈয়দ লুৎফর রহমান জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। মুক্তিপণের টাকা লেনদেনের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।

 

সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মহিউদ্দিন জানান, ৯ জুন অন্তর মোটর সাইকেলে ফরিদপুরে আসে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মুক্তিপণের টাকা লেনদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি টাকা দিতে না করেছিলাম।


আরো সংবাদ



premium cement