২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি

মিরসরাই, পানিবন্দি
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে মিরসরাইয়ে। উপজেলার ফেনাপুনি এলাকার দৃশ্য - নয়া দিগন্ত

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে টানা দুইদিনের ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্দি হয়ে আছে উপজেলার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির ফসল, ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। গ্রামীন সড়ক গুলোর উপর দিয়ে বইছে পানির স্রোত। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ এলাকার মানুষ।

এদিকে টানা বর্ষনের কারণে ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা অর্ধকের চেয়েও কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। উত্তর চট্টগ্রামের বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসবে পরিচিত বারইয়ারহাট পৌর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ২২ রমজানের পর থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বেচাকেনা একেবারে কমে গেছে।

মসজিদ গলির হাসান সুজ এর স্বত্ত্বাধিকারি শাহাদাত হোসেন সাদেক বলেন, আশা ছিল রমজানের শেষ ১০দিন ভালো বেচাকেনা হবে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আগের চাইতেও কমে গেছে। দোকানে সব মালামাল রয়ে গেছে। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিনা।

উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনী, গোভনীয়া, আমবাড়িয়া গ্রামের প্রায় পাঁচশ পরিবারের বসতঘর হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের রাখা হয়েছে খাটের ওপর। বাহিরে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। বাড়ির উঠান ডুবে আছে কোমর পানিতে। পথঘাট, পুকুর তলিয়ে গেছে পানির নিচে।

স্থানীয় আজিজ, সুফিয়া বেগম, আমিন মিয়া জানান, রোববার থেকে প্রচুর বৃষ্টি ও পাহাড়ি পানি নেমে আসায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর, জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকার প্রায় পাঁচশত পরিবারের লোকজন ভোর রাতে রান্নাবান্না করতে না পেরে শুধু পানি খেয়ে রোজা রেখেছে। কিন্তু ইফতারে কি খাবে, বাচ্চাদের কি খাওয়াবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছেন।

মসজিদিয়া, নয়দুয়ার, বুজর্নগর গ্রামের মানুষ ও পানিবন্দি হয়ে আছে। ইসহাক মিয়া নামে একজন জানান, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাড়ি ঘরে থাকাও কষ্টসাধ্য পড়ে পড়বে। উপজেলার নিজতালুক এলাকায় কানু ফকির সড়কে একটি কালভার্ট দিয়ে পানি পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী শহীদুল্লাহ লেদু। এতে ওই এলাকায় প্রায় ৩০ পরিবার পানিবন্ধী হয়ে আছে।

করেরহাট বাজারের ব্যবসায়ী রেজাউল করিম নোমান বলেন, বাজারে সড়ক ও জনপদ বিভাগ অপরিকল্পিতভাবে একটি ড্রেন তৈরি করেছে। এতে পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। উল্টো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীকে।

অলিনগর এলাকার মৎস্যচাষী ইসমাইল হোসেন রানা বলেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ডলে তার প্রকল্প থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া মৎস্যজোন হিসেবে খ্যাত মুহুরী প্রজেক্ট থেকে লাখ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।

মঈন উদ্দিন নামে একজন অভিযোগ করেন, কামারিয়া খাল, মঘাদিয়া-সাহেরখালী খালের ওপর অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মান করে খাল দখলের কারণে খইয়াছড়া, মঘাদিয়া, মায়ানী ইউনিয়নের মানুষ বৃষ্টি হলে দুর্ভোগে পড়ে।

ওয়াহেদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ জানান, ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মাইজগাঁও, ছোট কমলদহ, উত্তর ওয়াহেদপুর, মধ্যম ওয়াহেদপুর, দক্ষিন ওয়াহেদপুর, সাতবাড়িয়া, জাফরাবাদ, গাছবাড়িয়া, পদুয়া এলাকায় প্রায় এক হাজার পরিবারের বসতঘর পানিতে তলিয়ে আছে। ছোট কমলদহ বাজারসহ গ্রামীন সড়ক গুলোর ওপর দিয়ে পানি বইছে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে হাবিব উল্লাহ ভূঁইয়া সড়ক, নিজামপুর রেলষ্টেশন সড়ক, মিয়াচাঁন সড়কসহ কয়েকটি সড়ক।

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ জানান, মিরসরাইয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ রোপা লাগানো হয়েছে। সোমবারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে অনেক রোপা পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়া বিভিন্ন সবজিরও ক্ষতি হয়েছে। পানি দ্রুত নেমে না গেলে কৃষক ব্যাপক লোকসানে পড়বে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল কবির জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কারণে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement