২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে লাফঝাঁপ

ডিএসইতে বাড়ল ৮২ ও সিএসইতে ২০৭ পয়েন্ট ;লেনদেনে কোনো উন্নতি নেই ; সরকারি ৪ ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ছে
-

পুঁজিবাজারে ব্যাপক উত্থান হয়েছে। গতকাল দেশের দুই বাজারেই অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক বেড়েছে প্রায় ৮২ পয়েন্ট। একই অবস্থা চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই)। গতকাল বাজারটিতে প্রধান সূচক বেড়েছে ২০৭ পয়েন্ট। তবে টাকার অঙ্কে লেনদেনে কোনো উন্নতি নেই। গতকালও ডিএসইর লেনদেন ছিল ২০০ কোটি টাকার ঘরে। আর সিএসইতে লেনদেন মাত্র ৮ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে টানা এক সপ্তাহের ব্যাপক পতন ঠেকাতে নানামুখী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকসহ স্টেকহোল্ডারদের সাথে আগামী ২০ জানুয়ারি বৈঠক ও সরকারি ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নির্দেশনা প্রদান অন্যতম। ইতোমধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বৈঠক করে এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করেছে। এসব কারণে বাজারে বিক্রির চাপ কমেছে। এতে বাজার উল্লম্ফনে রয়েছে। তবে এই উত্থান টেকসই হবে কি না তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১১২টির। দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির। দাম বাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশের ওপর। ৫ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে ৩২টির। ৯ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে চারটির। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৮১ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৩৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪০৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ বেড়ে ৯৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচকের বড় উত্থানে এ দিন ভূমিকা রেখেছে বড় মূলধনের প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বড় অঙ্কের বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে ডিএসই। বাজারটির বাজার মূলধন আগের দিনের তুলনায় ৪ হাজার ৮১১ কোটি টাকা বেড়ে ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
পতন কাটিয়ে বাজার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফেরায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ৭-৯ শতাংশ দাম বাড়ার পরও কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে চাননি। ফলে ক্রেতা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে সঙ্কট দেখা দেয়। অথচ দুই দিন আগে এসব কোম্পানির শেয়ার ৪-৫ শতাংশ দাম কমার পরও কিছু বিনিয়োগকারী কিনতে চাননি।
এ দিকে সূচকের ব্যাপক উত্থান হলেও লেনদেনের কোনো উন্নতি নেই। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ২৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছে ২৪২ কোটি ৮২ লাখ। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির ২১ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিমের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার। ১১ কোটি ৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এডিএন টেলিকম। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, ব্র্যাক ব্যাংক, গ্রামীণফোন, রিং সাইন টেক্সটাইল, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, খুলনা পাওয়ার এবং স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২০৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২১৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১০৩টির, কমেছে ৮৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৭টির।
চার ব্যাংকের সিদ্ধান্ত : পুঁজিবাজারে চলমান অস্থির অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক। গতকাল সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ত্রৈমাসিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহীসহ (সিইও) এমডিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় অন্যান্য নিয়মিত বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়। এ সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে সভায় অনুকূলে মতামত প্রদান এবং সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
ব্লক মার্কেট : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল ব্লক মার্কেটে মোট ১০ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ৩০ লাখ ২৪ হাজার ৪৭১টি শেয়ার লেনদেন হয়। যার আর্থিক মূল্য ৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের। ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তৃতীয় স্থানে থাকা বার্জার পেইন্টস ১ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়া ব্লকে লেনদেন করা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑ এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, বিবিএস, ব্র্যাক ব্যাংক, নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স, এসএমএল লেকচার ইক্যুয়িটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ড, এসকে ট্রিমস ও স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক লিমিটেড।

 


আরো সংবাদ



premium cement