২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন দিনে সূচকের ৯৩ পয়েন্ট ফিরে পেল ডিএসই

-

পতন সামলে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো সূচকের উন্নতি ঘটেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। আর এ তিন দিনে হারানো সূচকের ৯৩ পয়েন্টের বেশি ফিরে পেয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজার ফিরে পেয়েছে সার্বিক মূল্যসূচকের প্রায় ৩০০ পয়েন্ট। টানা তিন দিন সূচকের এ উন্নতির ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতন শুরু হয়। জানুয়ারির শেষদিকে ডিএসইর প্রধান সূচকটি অবস্থান করছিল ৫ হাজার ৯৩৯ পয়েন্টে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শুরু হওয়া এ পতন আর থাামেনি। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে সাময়িক সূচকের উন্নতি ঘটলেও তার কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না। পরদিন আবার পতনের ধারায় ফিরে যায় বাজার। গত ৩১ অক্টোবর ডিএসই সূচকটি নেমে আসে ৪ হাজার ৬৮২ পয়েন্টে। এভাবে ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর এ ৯ মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক হারায় ১ হাজার ২৫০ পয়েন্ট। ২০১১ সালের বিপর্যয়ের পর পুঁজিবাজারে একটানা এত সময় আর দরপতনের ঘটনা ঘটেনি; কিন্তু গত সোমবার থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে পুঁজিবাজার, যা গতকাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ডিএসই থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে পতনের ওই দিনগুলোতে পুঁজিবাজারে সূচকের তিন দিন টানা উন্নতির ঘটনা আর ঘটেনি। অতি সম্প্রতি ব্যাংকের বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে বাংলাাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার জারির পরও তৃতীয় দিনের মাথায় ফের পতনের ধারায় ফিরে যায় পুঁজিবাজার।
পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাজার আচরণে যে পরিবর্তন তা কিছু দিন ধরে রাখা গেলে ধীরে ধীরে আস্থা ফিরে আসতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীরা লোকসান কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবেন। কারণ এ মুহূর্তে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ৩০ থেকে ৫০ শতাশ দর হারিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আরো বেশি। বিশেষ করে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের একটি বড় অংশই এ মুহূর্তে অভিহিত মূল্যের নিচে বেচাকেনা হচ্ছে। এ ছাড়া মৌল ভিত্তিসম্পন্ন বহুজাতিকসহ দেশীয় কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর এখন সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনি¤েœ। এক বা দু’দিনে এ হারানো দর ফিরে পাবে না কোম্পানিগুলো। এ জন্য দরকার এত দিন ধরে ঘটে যাওয়া ধারাবাহিক পতনের বিপরীতে সূচকের ধারাবাহিক উন্নতি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ১৭ দশমিক ২১ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ৪ হাজার ৭৫৪ দশািমক ৬৯ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি বৃহস্পতিবার দিনশেষে পৌঁছে যায় ৪ হাজার ৭৭১ দশমিক ৯১ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭১ ও দশমিক ২৪ পয়েন্ট। এর আগে মঙ্গলবার ও বুধবার যথাক্রমে ডিএসইর প্রধান সূচকের ২৬ ও ৫১ পয়েন্ট উন্নতি ঘটে।
দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৩৭ দশমিক ৭৯ ও ২১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক যথাক্রমে ১ দশমিক ৬৩ ও ১ দশমিক ১০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।
সূচকের উন্নতি ঘটলেও গতকাল লেনদেন কমেছে ঢাকা শেয়ারবাজারে। ডিএসই গতকাল ৩৬৭ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ১৮ কোটি টাকা কম। বুধবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৮৫ কোটি টাকা। তবে লেনদেন বেড়েছে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে। এখানে ১৯ কোটি টাকা থেকে ৯০ কোটিতে পৌঁছে লেনদেন। তবে বাজারটিতে এককভাবে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রির ৭৬ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন নিষ্পত্তি হয়।
গতকাল দুই পুঁজিবাজারের বেশির ভাগ খাতেই মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। তবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দর হারায় বেশির ভাগ কোম্পানি। এর ফলে দিনের সূচকের বড় উন্নতি ঘটেনি। দিনের সবচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধি ঘটে বীমা খাতে। এ খাতে প্রায় ৮০ শতাংশ কোম্পানির দাম বাড়ে। এ ছাড়া প্রকৌশল, রসায়ন, টেক্সটাইল, জ্বালানি ও খাদ্য খাতে মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল বেশি। ঢাকা শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ৫৩০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৬৪টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১১৫টি। অপরিবর্তিত ছিল ৫১টির দর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজাাের লেনদেন হওয়া ২৩৯টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ১২৭টির দাম বাড়ে, ৭৩টির কমে এবং ৩৯টি সিকিউরিটিজের দাম অপরিবর্তিত থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement