২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সপ্তাহের শেষদিনও পুঁজিবাজার সূচকের অবনতি

-

দরপতন অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজারে। গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসটি শেষ হয়েছে সূচকের অবনতি দিয়ে। লেনদেনের শুরু থেকেই সৃষ্টি হওয়া বিক্রয়চাপ বিপর্যস্ত করে তোলে বাজারকে। গ্রামীণফোনের ব্যাপক দরপতনের ফলে প্রথম এক ঘণ্টায় উভয় পুঁজিবাজারে সূচকের ব্যাপক অবনতি ঘটে। তবে শেষদিকে এসে প্রতিষ্ঠানটি হারানো দর ফিরে পেলে বাজারগুলো ফিরে পায় হারানো সূচকের একটি বড় অংশ। তবে দুই বাজারেই লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির দরপতন ঠেকানো যায়নি। ঢাকায় লেনদেন কমলেও বেড়েছে চট্টগ্রামে।
গতকাল কিছু কিছু প্রচারমাধ্যমে গ্রামীণফোনে সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে খবর প্রকাশ করে। লেনদেনের শুরুতেই কোম্পানিটির শেয়ারে ব্যাপক বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হয়। আগের দিন ৩২৮ টাকায় লেনদেন হওয়া কোম্পানিটির শেয়ারদর নেমে আসে ৩১০ টাকায়। ওই সময় উভয় বাজারের সূচকেই এর প্রভাব পড়ে। তবে বেলা বৃদ্ধির সাথে সাথে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটে। হারানো দরের একটি অংশ ফিরে পায় কোম্পানিটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি গতকাল ১০ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৪ হাজার ৭৮১ দশমিক ৬২ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি গতকাল দিনশেষে নেমে আসে ৪ হাজার ৭৭০ দশমিক ৯৯ পয়েন্টে। একই সময় ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ হারায় যথাক্রমে ৬ দশমিক ৪৪ ও ৫ দশমিক ৭১ পয়েন্ট। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি ঘটে যথাক্রমে ৪৭ দশমিক ৪৫ ও ২৮ দশমিক ২৬ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও শরিয়াহ সূচক হারায় যথাক্রমে ১ দশমিক ৫৭ ও ৬ দশািমক ০৫ পয়েন্ট।
সূচকের পাশাপাশি অবনতি ঘটে ডিএসই’র লেনদেনে। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল ৩১৩ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে, যা আগের দিন অপেক্ষা ১১ কোটি টাকা কম। গত বুধবার বাজারটির লেনদেন ছিল ৩২৪ কোটি টাকা। তবে লেনদেন বেড়েছে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে। সিএসই ১৮ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে। আগের দিন বাজারটির লেনদেন ছিল ১৫ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুঁজিবাজারে এখন আস্থাহীনতা বিরাজ করছে। গ্রামীণফোনের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে এ কোম্পানির শেয়ারে; কিন্তু বেশ কিছু দিন থেকে সরকারের সাথে আর্থিক নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দরে। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর একটি মন্তব্যে বিষয়টি সুরাহার ইঙ্গিত দিলে বাজারে কোম্পানিটি হারানো দরের একটি অংশ ফিরে পায়; কিন্তু গতকাল প্রশাসক নিয়োগের খবরে আবার ব্যাপক দরপতনের ঘটনা ঘটে। তারা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়িয়ে দেয়। তাদের মতে বিষয়টির সুন্দর সুরাহা হলে বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গতকাল লেনদেনের শুরু থেকেই বিক্রয়চাপ সৃষ্টি হয়। অন্য খাতে খুব বেশি দরপতন না ঘটলেও এককভাবে গ্রামীণফোনের বিক্রয়চাপই সূচককে নামিয়ে আনতে থাকে। ঢাকায় ৪ হাজার ৭৮১ দশমিক ৬২ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করা ডিএসইএক্স সূচকটি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নেমে আসে ৪ হাজার ৭৪১ পয়েন্টে। অর্থাৎ প্রথম ঘণ্টায় সূচকের ৪০ পয়েন্ট হারায় ডিএসই। তবে দুপুর ১২টার দিকে কোম্পানিটি আবার হারানো দর ফিরে পেতে থাকে। এ সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে দেখা যায়। এতে দিনশেষে হারানো সূচকের একটি বড় অংশই ফিরে পায় ডিএসই।
ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ড খাতের আচরণও ভালো ছিল গতকাল। এ খাতগুলোতে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে ৭০ শতাংশের বেশি কোম্পানির। আবার আর্থিক এ খাতগুলোর বাইরে প্রকৌশল, টেক্সটাইল, সিরামিকস, ওষুধ ও রসায়ন এবং জ্বালানি খাতে বেশির ভাগ কোম্পানি দর হারায়। ঢাকায় লেনদেন হওয়া ৩৫০টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৪৫টির মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১৬২টি। অপরিবর্তিত ছিল ৪৩টির দর। অপর দিকে চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে লেনদেন হওয়া ২৫৫টি সিকিউরিটিজের মধ্যে ৯৩টির দাম বাড়ে, ১৩৪টির কমে এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত থাকে।


আরো সংবাদ



premium cement